শিল্পী থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া এদি রামা চতুর্থ দফায় আলবেনিয়ার ক্ষমতায়

বাসস
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫, ২০:০৭
আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এদি রামা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা, ১৪ মে, ২০২৫ (বাসস): শিল্পী থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এদি রামা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে চতুর্থ দফায় ক্ষমতায় ফিরেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে বালকান এই দেশটির সংযুক্তি নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।

তিরানা থেকে এএফপি জানায়, রোববারের নির্বাচনে তার বামপন্থী সোশ্যালিস্ট পার্টি ৫২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে বলে মঙ্গলবার রাতে প্রকাশিত সরকারি ফলাফল জানায়।

বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী এক সময়ের বাস্কেটবল খেলোয়াড় এবং প্যারিসে প্রশিক্ষিত শিল্পীরা ঘোষণা করেছেন, ‘২০২৩ সালের মধ্যে আলবেনিয়ার ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করাই আমার লক্ষ্য।’

৬০ বছর বয়সী এই নেতা একাধিকবার বলেছেন, ‘ইউরোপীয় পাসপোর্ট থাকলে ইউরোপ যত ছোট মনে হয়, আলবেনিয়া তত বড় হয়ে ওঠে।’

২০২২ সালে আলবেনিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ আলোচনায় প্রবেশ করে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন সম্পর্কে রামা বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য এবং বিশ্বের জন্য ভিন্নভাবে কিছু করার একটি বিরাট সুযোগ হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘ইউরোপের এখন বয়স বাড়ছে। ফলে এটিকে নতুন দৃষ্টিতে দেখার সময় এসেছে।’'

১৯৬৪ সালে রাজধানী তিরানায় জন্ম নেওয়া রামার বাবা ছিলেন ভাস্কর এবং মা চিকিৎসক। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তিনি বারবার ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রকল্প’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা অস্থির বালকান অঞ্চলে শান্তি ধরে রাখতে সহায়তা করতে পারে।

২০১৪ সালে রামা প্রথম আলবেনীয় নেতা হিসেবে প্রায় সাত দশক পর সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেড সফর করেন। বিশেষত কসোভো যুদ্ধকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্কে যে দীর্ঘদিনের শীতলতা, তা ভাঙার পদক্ষেপ ছিল এটি।

সম্প্রতি, ২০২৩ সালে তিনি ইতালির কট্টর ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। এর আওতায় অভিবাসীদের জন্য আলবেনিয়ায় ইতালির পরিচালনায় দুটি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

বিতর্কিত এই চুক্তির লক্ষ্য হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের কোনো দেশে অভিবাসন প্রক্রিয়া স্থানান্তর এবং আশ্রয়প্রার্থী প্রত্যাখ্যাতদের দ্রুত ফেরত পাঠানো।

যদিও রামা ও মেলোনি ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের, তবুও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও ইতালিতে বসবাসরত বড় আলবেনীয় প্রবাসী সম্প্রদায়ের কারণে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সংস্কার

১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে, কমিউনিস্ট আমলের অবসান ঘটার আগে রামা রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তার লক্ষ্য ছিল দেশকে আধুনিকীকরণ ও ইউরোপের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া।

২০০৫ সালে তিনি সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এর মধ্যেই তিনি ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজধানী তিরানার মেয়র ছিলেন এবং তার আগে সংস্কৃতি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে ডানপন্থী ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক নেতা সালি বেরিশার সঙ্গে, যিনি একসময় প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

২০০৯ সালের নির্বাচনে হেরে গিয়ে রামা অভিযোগ করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এর পর মাসের পর মাস রাস্তায় বিক্ষোভ চলে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিহত হন।

রামা একজন ‘ক্যাজুয়াল’ পোশাক পরিহিত নেতা হিসেবে পরিচিত, যিনি প্রায়ই তিন দিনের দাড়ি রাখেন। তিনি আলবেনিয়াকে ‘আইনের শাসনভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রে’ রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন।

২০১৬ সালের মাঝামাঝি তিনি একটি বড় ধরনের বিচারিক সংস্কার শুরু করেন, যা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং আইনের শাসন জোরদারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সক্রিয় সমর্থন পেয়েছে।

তার রাজনৈতিক বিরোধীরা বহুবার তাকে সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ করেছেন, তবে রামা অঙ্গীকার করেছেন—যদি এমন কিছু প্রমাণিত হয়, তিনি রাজনৈতিক জীবন থেকে সরে যাবেন।

শিল্পচর্চা ও নগর উন্নয়ন

রামা এখনও একজন আগ্রহী শিল্পী। তার অনেক শিল্পকর্ম তার কার্যালয়ের দেয়ালে শোভা পায়। তিনি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতেও অংশ নেন।

তিরানার মেয়র থাকাকালীন তিনি কমিউনিস্ট আমলের ধূসর ভবনগুলো উজ্জ্বল রঙে রাঙিয়ে রাজধানীকে প্রাণবন্ত করে তোলার উদ্যোগ নেন। যদিও মূলত কয়েকটি প্রধান সড়কেই এই সংস্কার সীমাবদ্ধ ছিল, তবে পশ্চিমা গণমাধ্যমে তিনি প্রশংসিত হন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও তিনি বিখ্যাত স্থপতিদের মাধ্যমে বড় নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখিয়েছেন।

বহুভাষাবিদ এই নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সক্রিয়, যেখানে তিনি ব্যক্তিগত মুহূর্ত থেকে শুরু করে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের ছবিও শেয়ার করেন।

তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমার রাজনীতির বাইরে অন্য অনেক প্রকল্প ছিল। তবে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়া অন্যতম বড় সম্মান।’

‘আমি একজন শিল্পী, আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীও বটে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ই-কমার্সকে দারিদ্র্য বিমোচনের মৌলিক উপকরণ করতে চাই: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
জিম্মিমুক্তি আলোচনার মাঝেই গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৮০
ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে লিগ্যাল এইডের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত
ট্রাম্পের শুল্কনীতি মূল্যস্ফীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে: ফেড কর্মকর্তার সতর্কতা
ঢাবি ছাত্র সাম্য-আবু বকর খুনের ঘটনায় বিচারিক তদন্ত ক্ষতিপূরণ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ
জুলাই গণঅভ্যুত্থান: জাতিসংঘের রিপোর্টকে ঐতিহাসিক দলিল ঘোষণায় হাইকোর্টের রুল
ই-জিপি’র ১০০ শতাংশ কাভারেজ নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
গাজা সিটির একটি এলাকা খালি করার নির্দেশ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর
মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের চিন্তা ইইউ, জাপান, ভারতের
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের ২য় সভা অনুষ্ঠিত
১০