ঢাকা, ২ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : তিব্বতের নির্বাসিত আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা বুধবার নিশ্চিত করেছেন যে, তাঁর মৃত্যুর পরও দালাই লামা পরম্পরা অব্যাহত থাকবে। এই ঘোষণায় বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং বিশ্বের অন্যান্য অনুসারীদের মধ্যে আশার বাতাস বইছে। দালাই লামার ৬০০ বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
ভারতের ম্যাকলিওড গঞ্জ থেকে এএফপি জানায়, এটি তিব্বতিদের জন্য একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, যাদের অনেকেই নেতাবিহীন ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কিত ছিলেন, পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে দালাই লামাকে অশান্তি-বিমুক্তি, করুণা ও চীনের শাসনাধীন তিব্বতের সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে যারা মানেন তাদের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।
তিব্বতিদের মতে, তেনজিন গিয়াতসো হলেন চতুর্দশ দালাই লামার জাতক।
অনুসারীরা তিব্বতের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে অক্লান্ত প্রচেষ্টার জন্য দালাই লামার প্রশংসা করেন, তিব্বত চীনের একটি বিশাল উচ্চভূমি সমতলভূমি, যা দক্ষিণ আফ্রিকার আয়তনের সমান।
১৯৫৯ সালে চীনা সেনারা তিব্বতের রাজধানী লাসাতে অভ্যুত্থান দমন করার পর থেকে দালাই লামা ও হাজার হাজার তিব্বতি ভারতে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত দালাই লামা আগে বলেছিলেন, দালাই লামা প্রতিষ্ঠানের অব্যাহত থাকা নির্ভর করবে জনসাধারণের চাহিদার ওপর।
বুধবার তিনি জানান, গত ১৪ বছরে তিনি বহুবার হিমালয়ের বিভিন্ন বৌদ্ধ সম্প্রদায়, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া ও চীনের অংশ থেকে বার্তা পেয়েছেন, যারা ‘উদারভাবে দালাই লামা প্রতিষ্ঠানের অব্যাহত থাকার আবেদন করেছেন’।
ভারতের হিমালয় অঞ্চলের একটি শহরে ধর্মীয় নেতাদের এক সম্মেলনের শুরুতে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘বিশেষত, আমি তিব্বতের ভেতরের তিব্বতিদের কাছ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে একই আবেদন পেয়েছি।’
তিনি দাপ্তরিকভাবে অনূদিত বক্তব্যে আেরও বলেন, ‘এই সকল আবেদন অনুযায়ী আমি নিশ্চিত করছি যে দালাই লামা প্রতিষ্ঠান অব্যাহত থাকবে।’
তার বৃদ্ধ বয়স তিব্বতের নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ এবং উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল।
তার ৯০তম জন্মদিনের (৭ জুলাই) প্রক্কালে তিনি এই ঘোষণা দিলেন।
চীন তাকে বিদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে নিন্দা করে। আর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দালাই লামা নিজেকে একজন ‘সরল বৌদ্ধ ভিক্ষু’ হিসেবে পরিচয় দেন।
অনেক নির্বাসিত তিব্বতি ভয় পায় যে চীন নিজের নিয়ন্ত্রণ শক্ত করার জন্য নিজস্ব উত্তরসূরি মনোনীত করবে, যাকে ১৯৫০ সালে তারা সেনাসহায়ক করে নিয়েছিল।
কিন্তু দালাই লামা বুধবার বললেন, পনেরোতম দালাই লামা সনাক্ত করার দায়িত্ব ‘সম্পূর্ণভাবে’ ভারতে অবস্থানরত গাদেন ফোদ্রাং ট্রাস্টের (দালাই লামার অফিস) উপর থাকবে।
‘আমি পুনরায় নিশ্চিত করছি, গাদেন ফোদ্রাং ট্রাস্টের একক ক্ষমতা থাকবে ভবিষ্যৎ পুনর্জন্মকে স্বীকৃতি দেওয়ার; অন্য কেউ এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না,’ তিনি আরও যোগ করেন।
৩০ বছর বয়সী নির্বাসিত তিব্বতী কর্মী চেমি লামো বলেন, দালাই লামা প্রতিষ্ঠানের অব্যাহত থাকা তিব্বতিদের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
লামো বলেন, ‘নিঃসন্দেহে মানবতার সেবায় দালাই লামা প্রতিষ্ঠান অব্যাহত থাকবে।’ এই ঘোষণা বেইজিংকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে ভবিষ্যৎ নেতা নির্ধারণে কোনও হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়।
দালাই লামা ২০১১ সালে রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিত্যাগ করেন এবং বিশ্বের ১ লাখ ৩০ হাজার তিব্বতির মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নির্বাসিত সরকারের হাতে সোপর্দ করেন।
সেই সময় তিনি সতর্ক করেছিলেন যে তার আধ্যাত্মিক স্থানের ভবিষ্যৎ ‘রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষীদের দ্বারা পুনর্জন্ম ব্যবস্থা অপব্যবহারের স্পষ্ট ঝুঁকিতে’ রয়েছে।