ঢাকা, ৬ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে রোববার অনুষ্ঠেয় ব্রিকস সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘অভ্যন্তরীণ ও নির্বিচার শুল্কনীতির’ বিরুদ্ধে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করতে যাচ্ছে। এ পদক্ষেপগুলোকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, এগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
রিও ডি জেনেইরো থেকে এএফপি জানায়, এএফপির হাতে পৌঁছানো এক খসড়া ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘আমরা একতরফা শুল্ক ও অ-শুল্ক ব্যবস্থার বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি, যেগুলো বাণিজ্য বিকৃত করে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’
‘এসব ব্যবস্থায় বিশ্ব বাণিজ্য আরও হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’
যদিও ঘোষণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি, তবুও এটি স্পষ্টতই ওয়াশিংটনের প্রতি একটি রাজনৈতিক বার্তা।
ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) এবং সম্প্রতি যুক্ত হওয়া সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, ইথিওপিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ মোট ১১টি সদস্য রাষ্ট্র এখন বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির ৪০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে।
তবে এই বছরের সম্মেলনে চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান অনুপস্থিত থাকায় সম্মেলনের রাজনৈতিক গুরুত্ব কিছুটা কমেছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ১২ বছরের মধ্যে এই প্রথম ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ভিডিওর মাধ্যমে অংশ নিচ্ছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উচ্চ মর্যাদায় উপস্থিতি এবং রাষ্ট্রীয় ভোজের আয়োজন শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতির অন্যতম কারণ হতে পারে।
মজবুত আন্তর্জাতিক ভূমিকার লক্ষ্যে ব্রাজিল এই বছর একাধিক বৈশ্বিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে: জি২০ সম্মেলন, ব্রিকস সম্মেলন, কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলন।
এই সব আয়োজন প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার জন্য আগামী বছরের নির্বাচনের আগে কূটনৈতিক সক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
শনিবার তিনি প্রাক-সম্মেলন ব্যবসায়িক ফোরামে বলেন, ‘সংরক্ষণনীতির পুনরুত্থানের মুখে উন্নয়নশীল দেশগুলোর দায়িত্ব হলো বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থাকে রক্ষা করা এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কাঠামোর সংস্কার নিশ্চিত করা।’
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সদ্য সমাপ্ত ১২ দিনের ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের প্রেক্ষিতে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি তাকে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
জানা গেছে, ইরান খসড়া ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের প্রতি কঠোর নিন্দা যুক্ত করতে চেয়েছিল। তবে অন্যান্য সদস্যদের আপত্তিতে তা হয়নি।
সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে বাণিজ্য ছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্বাস্থ্যনীতি এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক কাঠামোর সংস্কার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি আবারও বৈশ্বিক অঙ্গনে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। ব্রিকস নিজেকে পশ্চিমা আধিপত্যের বিকল্প হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে।
সম্মেলনটি জি৭ ও অন্যান্য পশ্চিমা কাঠামোর বিপরীতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কণ্ঠস্বর জোরালো করার মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে।