ঢাকা, ২৮ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): মিনিয়াপোলিসের একটি গির্জায় বুধবার প্রার্থনায় যোগদানকারী স্কুল শিশুদের ওপর এক জন ভারি অস্ত্র ও বন্দুকধারী সন্ত্রাসী গুলি চালালে, এতে দুই ছাত্র নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছে।
সহিংস ঘটনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কাঁপিয়ে দেওয়া সর্বশেষ ট্র্যাজেডি।
মনিয়াপোলিস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
নগর পুলিশ প্রধান ব্রায়ান ও'হারা জানিয়েছেন, স্কুলে ফেরার প্রথম সপ্তাহ উপলক্ষে এক প্রার্থনা সভায় অংশ নেওয়া কয়েক ডজন তরুণ শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে হামলাকারী অ্যানানসিয়েশন চার্চের জানালা দিয়ে গুলি ছুঁড়ে।
গির্জাটির অবস্থান মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলীয় মিনেসোটার রাজ্যের বৃহত্তম নগরী মিনিয়াপলিসের একটি অনুমোদিত ক্যাথলিক স্কুলের পাশে।
‘আট ও ১০ বছর বয়সী দুই শিশু এতে নিহত হয়। তারা পিউ (প্রার্থনার মূল অংশের সারিবদ্ধ বেঞ্চ)-এ বসেছিল। ঘটনাস্থলেই ওই দুই শিশু নিহত হয়। ‘ও'হারা বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে আরও ১৪ শিশু এবং তিনজন বয়স্ক যাজক আহত হন।
বন্দুকধারী একটি রাইফেল, শটগান এবং পিস্তল দিয়ে গুলি চালায়। পুলিশ জানিয়েছে, সে অস্ত্রগুলো বৈধভাবে কিনেছিল।
১০ বছর বয়সী একটি ছেলে জানিয়েছে যে, তার এক বন্ধু তাকে তার শরীর দিয়ে আলগে রাখায় রাখায় সে গুলি থেকে বেঁচে গেছে।
সে সম্প্রচারক সিবিএসকে জানায়, ‘আমি পিউয়ের নিচে দৌড়ে গিয়েছিলাম এবং তারপর আমার মাথা ঢেকে ফেলি। ‘আমার বন্ধু ভিক্টর আমাকে বাঁচায়। সে আমার উপর শুয়ে পড়ে, তবে সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে ভয়াবহ হামলার দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় এটি সর্বশেষ ঘটনা। তবে, দেশটিতে আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতা হ্রাস করার প্রচেষ্টা রাজনৈতিক কারণে অচলাবস্থার শিকার ।
এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল বলেন, ‘সংস্থাটি ‘ক্যাথলিকদের লক্ষ্য করে এই গুলিবর্ষণকে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ ও বিদ্বেষমূলক অপরাধের ঘটনা’ হিসেবে তদন্ত করছে।
প্যাটেল বন্দুকধারীকে ‘রবিন ওয়েস্টম্যান’ নামে শনাক্ত করেছেন, যার আসল নাম ‘রবার্ট ওয়েস্টম্যান’।
আদালতের নথিপত্র অনুসারে, ওয়েস্টম্যান, এখন ২৩ বছর বয়সী, ২০২০ সালে আইনত নাম পরিবর্তন করেন এবং নারী হিসেবে শনাক্ত হন।
এক্স-এ একটি পোস্টে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম বলেন, ‘বন্দুকধারী নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার দাবি করছেন’। তিনি আক্রমণটিকে ‘অকল্পনীয়’ বলে অভিহিত করেন।
মিনিয়াপলিসের মেয়র জ্যাকব ফ্রে ট্রান্সজেন্ডারদের ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য এই আক্রমণকে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের মালিকানার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেন।
ফ্রে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা এই ঘটনাকে আমাদের ট্রান্স জেন্ডার সম্প্রদায় বা অন্য কোনও সম্প্রদায়কে খলনায়ক করার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে, তারা তাদের সাধারণ মানবতার বোধ হারিয়ে ফেলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে মানুষের চেয়ে বেশি বন্দুক রয়েছে এবং আমাদের সকলেরই সত্য ও বাস্তবতা মেনে নেওয়া উচিত যে আমরা কেবল বলতে পারি না যে এটি আবার ঘটবে না এবং তারপরেও এটি বারবার ঘটতে দেওয়া উচিত নয়।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা এক ভয়াবহ দৃশ্যের কথা জানিয়েছেন। তারা কালো পোশাক পরা এবং স্কি মাস্ক পরা বন্দুকধারীর গুলি চালানোর এবং শিশুদের গির্জার পিউতে লুকিয়ে থাকার বর্ণনা দেন।
পুলিশ কর্ডনের বাইরের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে যে, আতঙ্কিত বাবা-মা স্কুল ইউনিফর্ম সবুজ পোলো শার্ট পরা ছোট বাচ্চাদের নিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ অনেকেই এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
ক্যাথলিক চার্চের প্রধান প্রথম আমেরিকান পোপ লিও চতুর্দশ বলেছেন, তিনি এই ট্র্যাজেডিতে ‘গভীরভাবে শোকাহত’।