ঢাকা, ২৮ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের নরেন্দ্র মোদীসহ বিশ্ব নেতাদের অংশগ্রণে রোববার থেকে একটি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এ সম্মেলনের পর বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত বড় সামরিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে তিনি অ-পশ্চিমা ধাঁচের আঞ্চলিক সহযোগিতা তুলে ধরার চেষ্টা করবেন।
বেইজিং থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেইজিংয়ে সামরিক কুচকাওয়াজের কয়েকদিন আগে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) এ শীর্ষ সম্মেলন রোববার এবং সোমবার অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন যোগ দেবেন।
এসসিও’র সদস্য দেশগুলো হল চীন, ভারত, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং বেলারুশ। এছাড়া ১৬টি দেশ পর্যবেক্ষক বা ‘সংলাপ অংশীদার’ হিসেবে যুক্ত।
চীন ও রাশিয়া এই সংস্থাকে ব্যবহার করছে। মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার জন্য কখনও কখনও পশ্চিমা প্রভাবাধীন ন্যাটোকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীনের তাইওয়ান দাবি ও রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব বাড়লেও এসসিও এসসিও’র মাধ্য তারা প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। ইরান ও তুর্কি প্রেসিডেন্টসহ ২০টিরও বেশি দেশের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন এ সম্মেলনে। যা ২০০১ সালে এসসিও প্রতিষ্ঠার পর থেকে বৃহত্তম সম্মেলন।
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের লিজি লি বলেন, এত নেতাদের একত্রিত করার সুযোগ চীনের জন্য ‘আহ্বান ক্ষমতা’ প্রদর্শনের সুযোগ।
তবে তিনি আরও বলেন, সম্মেলন মূলত চাক্ষুষ প্রভাব ও এজেন্ডা সেটিংয়ের জন্য, সত্যিকারের ফলাফল প্রত্যাশা করা হচ্ছে না। এসসিও-তে সম্মতি ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়।
লি আরও বলেন, যখন ভারত ও পাকিস্তান বা চীন ও ভারত মতপার্থক্যপূর্ণ দেশে একই কক্ষে থাকেন, তখন উচ্চাকাঙ্ক্ষা স্বাভাবিকভাবে সীমিত হয়। চীন দেখাতে চায় যে তারা বৈচিত্র্যময় নেতাদের একত্রিত করতে পারে এবং বৈশ্বিক শাসন পশ্চিমা-প্রভাবাধীন নয় এ ধারণাটি জোরদার করতে পারে।
সিনিয়র সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিউ বিন শুক্রবার বলেন, এখানে যুক্তরাষ্ট্রকে আংশিক ইঙ্গিত করা হয়েছে যে সম্মেলন হেজেমোনিজম ও শক্তির রাজনীতির মুখে স্থিতিশীলতা আনবে।
ইউক্রেন আলোচনার প্রেক্ষাপট: পুতিনের অংশগ্রহণের পটভূমিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে বৈঠক সবচেয়ে কার্যকর পথ।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের মধ্যস্থতা করতে চেয়েছেন, মস্কো কোনো তাৎক্ষণিক বৈঠক অস্বীকার করেছে।
সম্ভবত অ-পশ্চিমা অংশীদারদের কাছ থেকে রাশিয়ার সমর্থন প্রদর্শন করবেন এবং যুদ্ধের কারণ ও যুদ্ধের ন্যায্য সমাপ্তি কেমন হবে তা তুলে ধরার জন্য এসসিও’র এ সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করবেন পুতিন।
লিজি লি বলেন, পুতিন থাকায় যুদ্ধ বিষয়টি সভায় উপস্থিত থাকবে, তবে এটি কেন্দ্রবিন্দু হবে না।
সাত বছরের মধ্যে মোদির প্রথম চীন সফর :
২০১৮ সালের পর এটি মোদির প্রথম চীন সফর। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দুটি দেশ দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে প্রভাব বিস্তারের জন্য তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী এবং ২০২০ সালে একটি মারাত্মক সীমান্ত সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়েছিল।
গত অক্টোবরে রাশিয়ায় পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো শি'র সাথে মোদির দেখা হওয়ার পর থেকে বরফ গলা শুরু হয়।
ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পড়ে তারা সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের দিকে এগিয়ে গেছে।
জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং পূর্ব এশিয়া বিশেষজ্ঞ লিম তাই ওয়েই সতর্ক করে বলেছেন, আমেরিকার সাথে ভারতের বাণিজ্য সমস্যাগুলোকে পুঁজি করে চীন ভারতকে আকৃষ্ট করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। তবে দেশগুলোর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য সহজে সমাধান করা যাবে না।
তবে লিম এএফপিকে বলেছেন, সাময়িক অবকাশ বা তাপমাত্রা-শীতলকরণ সম্ভব হতে পারে। ২০১৫ সালের চীনের কুচকাওয়াজে মোদি উপস্থিত ছিলেন না এবং তিনি এই বছরের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।
লিম বলেন, তার উপস্থিতি পশ্চিমা ও চীনের মধ্যে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় ভূ-রাজনৈতিক হাওয়া কোথায় প্রবাহিত হয় তার একটি ব্যারোমিটার হবে।
চীন ও ভারত আগস্টে ঘোষণা করেছে যে তারা সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় শুরু করবে, তাদের বিতর্কিত সীমান্ত নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নেবে এবং বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে।
সাত বছরে প্রথম মোদির চীনে সফর: মোদির এ সফর ২০১৮ সালের পর চীনে তার প্রথম। বিশ্বের দুই বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতায় লিপ্ত হয়ে ২০২০ সালে সীমান্তে সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়েছিল।
এর আগে পাঁচ বছর পর গত অক্টোবর শি জিনপিং ও মোদি রাশিয়ায় এক সম্মেলনে সাক্ষাৎ করেন যা পাঁচ বছরের প্রথম বৈঠক করেছিল।
জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিম তাই ওয়েই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সমস্যার সুযোগ কাজে লাগিয়ে চীন ভারতকে আকৃষ্ট করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, দুই দেশের মূল পার্থক্য সহজে সমাধানযোগ্য নয়। মোদির অংশগ্রহণের বিষয়টি এ বছরের সামরিক প্রদর্শনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বারোমিটার হিসেবে দেখা হবে।
চীন ও ভারত আগস্টে ঘোষণা করেছে যে তারা সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় শুরু করবে, তাদের বিতর্কিত সীমান্ত নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নেবে এবং বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে।