ঢাকা, ১ সেপ্টম্বর, ২০২৫ (বাসস): আঞ্চলিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে বেইজিংকে স্থাপনের লক্ষ্যে ইউরেশিয়ান নেতাদের আজ এক সমাবেশে পালাক্রমে পশ্চিমাদের দিকে তীব্র আক্রমণ করেছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন।
চীনের তিয়ানজিন থেকে এএফপি আজ এই খবর জানিয়েছে।
চীন, ভারত, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং বেলারুশের সমন্বয়ে গঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) একটি পশ্চিমা কৌশলের বাইরে সহযোগিতা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং সচরাচর জোটের বিকল্প হতে চায়।
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ এসসিও নেতাদের শি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আরো ‘বিশৃঙ্খল এবং জড়িত’ হয়ে উঠছে।
চীনা নেতা কিছু দেশের ‘গুন্ডামিমূলক আচরণের’ নিন্দাও করেছেন , যা গোপনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে।
তিনি উত্তরাঞ্চলীয় বন্দর শহর তিয়ানজিনে তার ভাষণে আরো বলেছেন, ‘সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সামনে নিরাপত্তা ও উন্নয়নের কাজগুলো আরো চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।’
শি বলেছেন, ‘বিশ্ব যখন অস্থিরতা এবং পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের অবশ্যই সাংহাই চেতনা অনুসরণ করতে হবে এবং সংগঠনের কার্যাবলী আরো ভালভাবে সম্পাদন করতে হবে।’
পুতিন তার ভাষণে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণকে সমর্থন করেন এবং সাড়ে তিন বছরের এই সংঘাতের জন্য পশ্চিমাদের দোষারোপ করেন। এই সংঘাতে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে এবং পূর্ব ইউক্রেনের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস করেছে।
পুতিন বলেন, ‘এই সংকট ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আক্রমণের ফলে তৈরি হয়নি বরং এটি ইউক্রেনের একটি অভ্যুত্থানের ফলে হয়েছিল, যাতে পশ্চিমাদের সমর্থন এবং উস্কানি ছিল।’
‘এই সংকটের দ্বিতীয় কারণ হল, পশ্চিমাদের ইউক্রেনকে ন্যাটোতে টেনে আনার ক্রমাগত প্রচেষ্টা।’
এদিকে, সোমবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সাথে এই বছর প্রথম বৈঠকে পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধের আশেপাশে তুরস্কের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন।
তুরস্ক এই বছর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তিন দফা শান্তি আলোচনার আয়োজন করেছে, কিন্তু সংঘাতের অবসান কীভাবে করা যায় তা নিয়ে অচলাবস্থা ভাঙতে ব্যর্থ হয়েছে।
সর্বদা অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ
এরআগে ১০টি এসসিও দেশের নেতারা লাল গালিচায় দাঁড়িয়ে একটি গ্রুপ ছবির জন্য পোজ দেন।
লাইভ ফুটেজে শি, পুতিন এবং মোদিকে কথা বলতে দেখা গেছে। তিন নেতার পাশে তাদের দোভাষীরাও ছিলেন। মোদি এবং পুতিন হাতে হাত রেখে ছবি তোলে বিকেলে তারা আলোচনা করেন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, তাদের আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে পুতিনের সাঁজোয়া প্রেসিডেন্টের গাড়িতে এই জুটি প্রায় এক ঘন্টা ‘মুখোমুখি’ কথা বলেছেন।
মোদী গাড়িতে ভ্রমণের সময় এক্স-এ একটি ছবিসহ লিখেছেন, ‘তার সাথে কথোপকথন ছিল সর্বদা অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ।’
তাদের বৈঠকের আগে উদ্বোধনী মন্তবে, মোদী মস্কোর সাথে ‘বিশেষ এবং সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারিত্বের’ প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, ‘ভারত এবং রাশিয়া কঠিনতম পরিস্থিতিতেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে।’
ইউক্রেনের সংঘাত সম্পর্কে মোদি বলেন, ভারত চায় উভয় পক্ষই ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটির অবসান ঘটাক এবং স্থিতিশীল শান্তি প্রতিষ্ঠা করুক।’
সভা-সমাবেশের ঢল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে রাজধানী বেইজিংয়ে এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের একদিন আগে রোববার এসসিও শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। সেখানে আরো ১৬টি দেশ পর্যবেক্ষক বা ‘সংলাপ অংশীদার’ হিসেবে অংশগ্রহণ করে।
চীনের সিনহুয়া বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, সদস্য রাষ্ট্রগুলো সোমবার একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে। ঘোষণাপত্রে নিরাপত্তা ও অর্থনীতির মতো খাতে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
সিনহুয়া আরো জানিয়েছে, তারা লাওসকে ‘সংলাপ অংশীদার’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ‘সর্বসম্মতিক্রমে সম্মত’ হয়েছে।
পুতিনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র লুকাশেঙ্কো এবং ২০১৮ সালের পর প্রথম চীন সফরে আসা মোদিসহ নেতাদের সাথে শি পরপর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন।
মোদি শি’কে বলেছেন, ভারত ‘পারস্পরিক বিশ্বাস, মর্যাদা এবং সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে’ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিশ্বের দুটি সর্বাধিক জনবহুল দেশ তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী, দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতা করছে এবং ২০২০ সালে একটি মারাত্মক সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
গত অক্টোবরে রাশিয়ায় এক শীর্ষ সম্মেলনে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো শি’র সাথে মোদির দেখা হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতির অবনতি শুরু হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য শুল্ক আরোপের মাধ্যমে উভয় এশীয় অর্থনৈতিক জায়ান্টের ওপর চাপ সৃষ্টি করার সাথে সাথে তাদের সম্পর্ক আরো গভীর হয়।
২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ব্লকের সবচেয়ে বড় বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানসহ ২০ জনেরও বেশি নেতা যোগ দিচ্ছেন।
সোমবার পুতিন তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পেজেশকিয়ানের সাথে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বুধবার সমবেত গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অনেকেই সামরিক কুচকাওয়াজ দেখার জন্য বেইজিংয়ে থাকবেন। সেখানে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনও উপস্থিত থাকবেন।
ইয়োনহাপ সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, কিম সোমবার বিকেলে ট্রেনে পিয়ংইয়ং ত্যাগ করেছেন এবং মঙ্গলবার পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।