ঢাকা, ৫ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): নেপাল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে ৬০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
কাঠমান্ডু থেকে এএফপি জানায়, দুর্গম পার্বত্য এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উদ্ধারকর্মীরা আটকে পড়া সম্প্রদায়গুলোর কাছে পৌঁছতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
শুক্রবার থেকে নেপালে টানা প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। এতে নদ-নদী উত্তাল হয়ে ওঠে এবং হিমালয় ঘেরা দেশটির বহু এলাকা প্লাবিত হয়।
নেপালের জাতীয় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র শান্তি মহাত বলেন, নেপালে বর্ষণজনিত বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ৪৩ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পূর্বাঞ্চলীয় ইলাম জেলায় অন্তত ৩৭ জন ভূমিধসে প্রাণ হারান।
স্থানীয় জেলা কর্মকর্তা সুনীতা নেপাল বলেন, রাতভর ভারী বৃষ্টিতে ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। সড়কগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু এলাকায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। উদ্ধারকর্মীরা সেখানে পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন।
কাঠমান্ডুর নদীগুলোও ফুলে-ফেঁপে উঠে নদীতীরবর্তী বসতিগুলো প্লাবিত হয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তা দিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে হেলিকপ্টার ও মোটরবোট মোতায়েন করা হয়েছে।
৩৮ বছর বয়সী সবজি বিক্রেতা রাজন খাদগা বলেন, কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে আগেভাগে কর্তৃপক্ষের বন্যা সতর্কবার্তা দেওয়ায় আমরা কিছু জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে সরাতে পেরেছি।
ভূমিধসে কয়েকটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে গেছে এবং ফ্লাইটও ব্যাহত হয়েছে। ফলে হিন্দু উৎসব দশাইন উদযাপন শেষে ফেরা শত শত যাত্রী আটকা পড়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি বলেছেন, সরকারি সংস্থাগুলো ‘উদ্ধার ও ত্রাণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত’।
দেশবাসীর উদ্দেশে এক ভাষণে তিনি বলেন, আপনাদের নিরাপত্তাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য দ্বিধা করবেন না।
তিনি আরও জানান, সরকার রোববার ও সোমবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে এবং অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ না করার আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি এলাকায় রাতভর ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে বহু ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।
ভারতের রাজ্যসভার সাংসদ হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, গত রাতে দার্জিলিং পাহাড়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর ২০ জনেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ফুটেজে দেখা যায়, প্রবল স্রোতের পানিতে সেতু ও সড়ক ভেঙে পড়ায় উদ্ধারকর্মীরা দড়ি ব্যবহার করে বিচ্ছিন্ন এলাকায় পৌঁছাচ্ছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, তিনি ‘জানমালের ক্ষতিতে মর্মাহত’। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলেন, দার্জিলিং ও আশপাশের এলাকার পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমি বৃষ্টিপাতে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাণঘাতী বন্যা ও ভূমিধসের সংখ্যা বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এর সময়সূচি, ঘনত্ব ও তীব্রতা আরও বেড়েছে।
কাঠমান্ডুভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট জুন মাসে সতর্ক করে বলেছিল, চলতি মৌসুমি বৃষ্টিতে সম্প্রদায়গুলো আরও বড় ধরনের দুর্যোগ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
সংস্থাটি জানায়, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও অতিবৃষ্টির ফলে বন্যা, ভূমিধস ও ধ্বংসাবশেষ স্রোতের মতো পানিজনিত দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে।