ঢাকা, ৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : সুইডিশ জলবায়ু অধিকার কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ সোমবার গ্রীসে পৌঁছেছেন। তার সঙ্গে ছিলেন ইসরাইল থেকে বহিষ্কৃত গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী নৌবহর সুমুদ ফ্লোটিলার শতাধিক কর্মী।
এথেন্স থেকে এএফপি জানায়, ২২ বছর বয়সী থুনবার্গ সেই শত শত কর্মীর একজন, যারা যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ত্রাণ পাঠাতে ইসরাইলি অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন। ইউরোপে ফিরে আসার পর অনেকেই ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের হাতে দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন।
থুনবার্গসহ ১৬০ জন কর্মী এথেন্স আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে শত শত অধিকার কর্মী তাদের স্বাগত জানান ।
থুনবার্গ বলেন, ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ছিল সমুদ্রপথে ইসরাইলের অবৈধ ও অমানবিক অবরোধ ভাঙার সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন একটি অভিযানের প্রয়োজনীয়তাটাই একটি লজ্জার ব্যাপার। বিশ্বকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে, ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।’
থুনবার্গ অভিযোগ করেন, ‘আমরা আমাদের সরকারগুলোর কাছ থেকে ন্যূনতম পদক্ষেপও দেখতে পাচ্ছি না।’
বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল হলে অধিকারকর্মীরা বিশাল একটি ফিলিস্তিনি পতাকা মেলে ধরেন এবং স্লোগান দেন- ‘ফিলিস্তিনের মুক্তি চাই’ এবং ‘ফ্লোটিলা দীর্ঘজীবী হোক!’
ইউরোপীয় সংসদ সদস্য ‘নির্যাতিত’ ফ্লোটিলা থেকে ফিরে আসা কর্মীদের মধ্যে ছিলেন রিমা হাসান। তিনি ফরাসি-ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ইউরোপীয় সংসদ সদস্য।
তিনি এএফপিকে বলেন, ‘দু’জন পুলিশ অফিসার আমাকে ভ্যানে তোলার সময় মারধর করে।’
তিনি জানান, তাকে ও অন্যান্য বন্দিদের উচ্চ নিরাপত্তার একটি ইসরাইলি কারাগারে রাখা হয়। যেখানে একটি কক্ষে ১৫ জনকে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছিল।
ফ্লোটিলার পরিচালনা কমিটির সদস্য ইয়াসমিন আকার বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ‘পশুর মতো’ ব্যবহার করেছে। ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে দেখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, ঘুমাতে দেওয়া হয়নি। প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় খাবার বা পানি কিছুই ছিল না।’
তবে ইসরাইল এসব নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গ্রীসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, একটি ‘বিশেষ প্রত্যাবাসন ফ্লাইটে’ ২৭ জন গ্রিক এবং ১৫টি ইউরোপীয় দেশের ১৩৪ জন নাগরিক এথেন্সে পৌঁছেছেন।
ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার জানায়, তারা মোট ১৭১ জন কর্মীকে গ্রীস ও স্লোভাকিয়ায় ফেরত পাঠিয়েছে।
স্লোভাকিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের এক নাগরিকসহ নেদারল্যান্ডস, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের আরও নয়জন কর্মী দেশটিতে ফিরেছেন।
ফ্লোটিলা গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। গত সপ্তাহে মিশরের উপকূলে ইসরাইলি নৌবাহিনী সেটিকে আটকায়।
ইসরাইল ফ্লোটিলাকে হামাসের একটি শাখা বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, নৌযানগুলো নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করেছিল এবং তাতে খুব সামান্য মানবিক সহায়তা ছিল।
ইসরাইলি পুলিশ জানিয়েছে, ফ্লোটিলার নৌযানগুলোতে থাকা ৪৭০ জনের বেশি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এএফপিকে জানিয়েছে, এখনও ১৩৮ জন কর্মী তাদের হেফাজতে রয়েছেন।
তাদের মধ্যে ১৩ জন ব্রাজিলিয়ান রয়েছেন। তিনজন অনশন ধর্মঘটে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান প্রতিনিধিদলের মুখপাত্র লারা সোউজা।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা এক্স-এ পোস্ট করে অবিলম্বে এই ‘অযৌক্তিক পরিস্থিতির অবসান’ এবং ব্রাজিলীয়দের মুক্তি দাবি করেন।
তিনি বলেন, ফ্লোটিলাকে আটক করে ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং কর্মীদের আটক রেখে তা অব্যাহত রেখেছে।