ইসরাইল ৭ অক্টোবর হামলার দ্বিতীয় বার্ষিকী পালন করছে

বাসস
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫১

ঢাকা, ৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : ইসরাইল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামলার দ্বিতীয় বার্ষিকী মঙ্গলবার পালন করছে। 

এমন একটি সময় তারা এইবার্ষিকী পালন করছে যখন মার্কিন প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার আওতায় গাজায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হামাস ও ইসরাইলি আলোচকরা পরোক্ষ আলোচনা করছে। খবর বার্তাসংস্থা এএফপি’র।

দুই বছর আগে, ইহুদি উৎসব সুক্কোতের সমাপ্তিতে, ইর্স্ইালের ওপর আকস্মিক হামলা শুরু করে, যেটি ছিল দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক দিন। ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা গাজা-ইসরাইল সীমান্ত অতিক্রম করে, দক্ষিণ ইসরাইলি বসতি এবং একটি মরুভূমি সঙ্গীত উৎসবে গুলি, রকেট ও গ্রেনেড ছুঁড়ে হামলা চালায়।

এএফপির সরকারি ইসরাইলি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এই হামলায় ইসরাইলি পক্ষের ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

হামাস গাজায় ২৫১ জন জিম্মিকে অপহরণ করে, যাদের মধ্যে ৪৭ জন এখনও বন্দী, ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে তাদের মধ্যে ২৫ জন  মারা গেছে।

বার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার ইসরাইল এক স্মরণ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করে।

নোভা সঙ্গীত উৎসবে নিহতদের পরিবার ও বন্ধুরা হামলার স্থানে জড়ো হওয়ার কথা ছিল। যেখানে হামাসের বন্দুকধারীরা ৩৭০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে এবং কয়েক ডজন জিম্মিকে ধরে নিয়ে যায়।

তেল আবিবের হোস্টেজেস স্কোয়ারে আরেকটি অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে বন্দী মুক্তির আহ্বানে সাপ্তাহিক সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে।

১৬ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে একটি স্মরণসভার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সোমবার অনেক ইসরাইলি নোভা উৎসবস্থলে যান।

একজন শিক্ষক এলাদ গাঞ্চ মৃতদের শোক প্রকাশ করতে গিয়ে এএফপিকে বলেন, ‘এটি এখানে ঘটে যাওয়া একটি অত্যন্ত ভয়াবহ ও বিশাল ঘটনা।’

‘কিন্তু সবকিছু সত্ত্বেও আমরা বেঁচে থাকতে চাই এবং আমাদের জীবন চালিয়ে যেতে চাই, তাদের স্মরণ করে- যারা এখানে ছিলেন এবং দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের সঙ্গে আজ আর নেই ।’
 
এদিকে, গাজায় আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথে ইসরাইলের  প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে।

হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৭ হাজার ১৬০ জন নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, এই পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্য।

তাদের তথ্য বেসামরিক এবং যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করে না। তবে, এতে  দেখা যায় যে, নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু।

পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল এবং জল সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
লাখ লাখ গৃহহীন গাজাবাসী এখন জনাকীর্ণ শিবির ও খোলা জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে যেখানে খাবার, জল বা স্যানিটেশনের খুব কম সুযোগ রয়েছে।

জাবালিয়ায় নিজ বাড়ি থেকে বাস্তুচ্যুত ৩৬ বছর বয়সী হানান মোহাম্মদ বলেন, ‘এই যুদ্ধে আমরা আমাদের ঘরবাড়ি, পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী সবকিছু হারিয়েছি।’

‘আমি যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য এবং এই অবিরাম রক্তপাত ও মৃত্যু বন্ধ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারছি না। ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।’

ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, দুই বছরের সংঘাতের পর, ইসরাইলি জনগণের ৭২ শতাংশ বলেছেন, তারা যুদ্ধ পরিচালনার সরকারের পদ্ধতিতে অসন্তুষ্ট।

যুদ্ধের সময় ইসরাইল তার সামরিক পরিধি বাড়িয়েছে, ইরান সহ পাঁচটি আঞ্চলিক রাজধানীতে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে এবং হামাসের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা এবং হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করেছে।
ইসর্্াইল ও হামাস এখন যুদ্ধ শেষ করার জন্য ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। গত মাসে জাতিসংঘের একটি তদন্তে গাজায় গণহত্যার জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাসকে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। উভয় পক্ষই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

গত সপ্তাহে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০-দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন যেখানে হামাস সমস্ত জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার পরে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, গোষ্ঠীর নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজা থেকে ধীরে ধীরে ইসরাইলি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সোমবার মিশরের রিসোর্ট শহর শার্ম এল-শেখে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়েছে, মধ্যস্থতাকারীরা কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা করছেন।

মিশরের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আল-কাহেরা নিউজ জানিয়েছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনার অধীনে জিম্মি-বন্দী বিনিময়ের জন্য ‘স্থল পরিস্থিতি প্রস্তুত করার’ ওপর আলোচনা কেন্দ্রীভূত ছিল।

হামাস আলোচকদের ঘনিষ্ঠ একটি ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের বার্ষিকীর প্রাক্কালে শুরু হওয়া এই আলোচনা বেশ কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে।

ট্রাম্প আলোচকদের গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য ‘দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, সোমবারও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত ছিল।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিউজম্যাক্স টিভিকে বলেছেন, ‘আমি মনে করি, আমরা একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি। আমার মনে হয় এখন অনেক সদিচ্ছা দেখানো হচ্ছে। আসলে এটি বেশ আশ্চর্যজনক।’

যদিও উভয় পক্ষ ট্রাম্পের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে, এর বিস্তারিত বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো একটি কঠিন কাজ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুদ্ধে এর আগে দুটি যুদ্ধবিরতি দেখা গেছে, যার ফলে কয়েক ডজন জিম্মি মুক্তি পেয়েছে।

তবে, ইসরাইলি সামরিক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির সতর্ক করেছেন যে যদি এই আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে সামরিক বাহিনী গাজায় ‘যুদ্ধে ফিরে যাবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বিএডিসি কৃষিবিদ সমিতির সভাপতি হুমায়ুন, সাধারণ সম্পাদক আকিক
কুয়াকাটায় রেস্তোরাঁ কর্মীদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা
৪৯তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষার আসন বিন্যাস ও নির্দেশনা প্রকাশ
লক্ষ্মীপুরে এক বছরে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ১০ হাজার মানুষ
সুনামগঞ্জের অবৈধ স্থাপনা ও ইব্রাহীমপুরের নদী ভাঙন পরিদর্শন 
সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও এসডিএফ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে
চুয়াডাঙ্গায়  টাইফয়েডের টিকাদান ক্যাম্পেইন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন 
গাজা আলোচনা 'ইতিবাচক', আজ আবার শুরু : হামাসের ঘনিষ্ঠ সূত্র
সচিবালয়ে ‘একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক’ নিষিদ্ধকরণে সক্রিয় মনিটরিং টিম
২০২৯ সালে বাংলাদেশ প্রবীণপ্রবণ সমাজে পদার্পণ করবে
১০