ঢাকা, ৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : গাজা যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে বুধবার তৃতীয় দিনের আলোচনায় মিশরে হামাস ও ইসরাইলি আলোচকদের সঙ্গে যোগ দেবেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও তুরস্কের প্রতিনিধিরা।
গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত ২০-দফা পরিকল্পনার ভিত্তিতে লোহিত সাগরের রিসোর্ট শহর শার্ম আল-শেখে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খবর বার্তাসংস্থা এএফপি’র।
মঙ্গলবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কিছু করতে পারার সত্যিকারের সম্ভাবনা রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, মার্কিন আলোচকরাও আলোচনায় জড়িত ছিলেন। আমি মনে করি, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা রয়েছে, এটি গাজা পরিস্থিতির বাইরেও কিছু। আমরা অবিলম্বে জিম্মিদের মুক্তি চাই।
ট্রাম্প বলেন, হামাস ও ইসরাইল যদি যুদ্ধবিরতিতে একমত হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ‘সবাই যাতে চুক্তি মেনে চলে তা নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।’
যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটানো ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলারর দ্বিতীয় বার্ষিকী উদযাপনকালে ইসরাইল এই আলোচনা শুরু করে।
ইহুদি উৎসব সুক্কোতের সমাপ্তিতে, ইসরাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক হামলা করে হামাস, যার ফলে গাজায় এক বিশাল প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু হয়।
ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এএফপির এক হিসাব অনুসারে, হামাসের হামলার ফলে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
হামাস গাজায় ২৫১ জনকে জিম্মি করে, যাদের মধ্যে ৪৭ জন এখনও বন্দী রয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের মধ্যে ২৫ জন মারা গেছে।
যুদ্ধ শেষ করার জন্য বিশ্বব্যাপী চাপ বেড়েছে, গাজার বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘ অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। এদিকে ইসরাইলি জিম্মি পরিবারগুলো এখনও তাদের প্রিয়জনদের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষায় আকুল।
গত মাসে জাতিসংঘের একটি তদন্তে গাজায় ইসরাইলকে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে, অন্যদিকে অধিকার গোষ্ঠীগুলো ৭ অক্টোবরের হামলার জন্য হামাসকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছে। তবে উভয় পক্ষই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
হামাসের শীর্ষ আলোচক খলিল আল-হাইয়া বলেছেন, ইসলামপন্থী দলটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পৃষ্ঠপোষক দেশগুলোর কাছ থেকে যুদ্ধ চিরতরে শেষ হওয়ার গ্যারান্টি চায়।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতি, সমস্ত জিম্মিদের মুক্তি, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও গাজা থেকে ধীরে ধীরে ইসরাইলি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই পরিকল্পনা ইসরাইল ও হামাস উভয়ের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে এবং সোমবার থেকে মিশরে পরোক্ষ আলোচনা শুরু করেছে।
হামাসের আলোচক দলের ঘনিষ্ঠ একটি ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবারের অধিবেশনে হামাস ‘সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ইসরাইলি পক্ষের উপস্থাপিত প্রাথমিক মানচিত্র এবং জিম্মি-বন্দী বিনিময়ের প্রক্রিয়া এবং সময়সূচি’ নিয়ে আলোচনা করেছে।
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি জানান, বুধবার ট্রাম্পের বিশেষ মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ আলোচনায় যোগ দেবেন।
তিনি বলেন, ‘এই পর্যায়ে সাফল্যের প্রাথমিক গ্যারান্টি হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই।’
কাতার জানিয়েছে, তাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল সানি উপস্থিত থাকবেন, অন্যদিকে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির গোয়েন্দা প্রধান ইব্রাহিম কালিন সেদেশের মিশরগামী একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানে কমপক্ষে ৬৭ হাজার ১৬০ জন নিহত হয়েছে, জাতিসংঘ বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে। নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু।