ঢাকা, ৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): নিউজিল্যান্ডের চারপাশের সমুদ্র বৈশ্বিক গড়ের চেয়েও অনেক দ্রুত উত্তপ্ত হচ্ছে। বুধবার বিজ্ঞানীরা নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
তারা সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই দ্বীপরাষ্ট্রটি বড় ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
সরকারি এই গবেষণায় দেখা যায়, নিউজিল্যান্ডের সমুদ্র একদিকে যেমন উত্তপ্ত হচ্ছে, তেমনি আগের চেয়ে আরও অম্লীয় হচ্ছে। অম্লীয় বলতে বোঝানো হচ্ছে পানিতে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়েছে এবং পিএইচ স্তর নেমে গেছে। অর্থাৎ অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে।
অন্যদিকে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে ইতোমধ্যেই উপকূলীয় হাজার হাজার বসতি হুমকির মুখে পড়েছে।
‘আওয়ার মেরিটাই এনভারনমেন্ট ’ শীর্ষ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সমুদ্রের তাপমাত্রা এখন বিশ্ব গড়ের তুলনায় ৩৪ শতাংশ দ্রুত হারে বাড়ছে।
এতে আরও বলা হয়, ‘জলবায়ু পরিবর্তন নিউজিল্যান্ডের সমুদ্রগুলোতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বাড়ছে, সামুদ্রিক তাপদাহের ঘটনা ঘন ঘন, তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। অনেক এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দ্রুত বাড়ছে।
গবেষকেরা দেখেছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন নিউজিল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার মধ্যে বয়ে চলা বিশাল মহাসাগরীয় প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের এই প্রবাহের কাছাকাছি অবস্থান এবং বায়ুমণ্ডলের অন্যান্য পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র এত দ্রুত উঞ্চ হচ্ছে।
জলবায়ু সংরক্ষণ বিভাগের সমুদ্র বিষয়ক উপদেষ্টা শেইন জ্যাঞ্জ বলেন, ‘প্রতিবেদন বলছে জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সমুদ্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আরও জটিল করে তুলবে।
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে নিউজিল্যান্ডের সমুদ্রের তাপমাত্রা বিশ্ব গড়ের চেয়ে দ্রুত বাড়ছে। ফলে আমরা ঘন ঘন ও তীব্র সামুদ্রিক তাপদাহের মুখোমুখি হচ্ছি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দ্রুত বাড়ছে। আমাদের সমুদ্র আরও অম্লীয় ও অক্সিজেনহীন হয়ে যাচ্ছে।’
গবেষণা থেকে জানা যায়, ১৯৮২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের চারটি স্থানে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা গড়ে প্রতি দশকে ০.১৬ থেকে ০.২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।
আরও জানা গেছে, অনেক স্থানীয় প্রজাতি সমুদ্রের উষ্ণ ও অম্লীয় পানিতে মানিয়ে নিতে পারছে না। অন্যদিকে নতুন ধরণের শিকারি প্রজাতির চাপের মুখে পড়ছে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে নিউজিল্যান্ডের হলুদ চোখের পেঙ্গুইনের মৃত্যুর সঙ্গে ঘটনা আগেও ঘটেছে।
জ্যাঞ্জ বলেন, এই ফলাফলগুলোকে সামনে রেখে আমাদের সামুদ্রিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এখনই পদক্ষেপ না নিলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি আরও বাড়বে।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় ইতোমধ্যেই নিউজিল্যান্ডের অনেক উপকূলীয় নিম্নভূমির গ্রামের ওপর এর প্রভাব পড়েছে।
১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১৮০ বিলিয়ন নিউজিল্যান্ড ডলার) মূল্যের ২ লাখেরও বেশি বসতবাড়ি উপকূলীয় প্লাবন ও অভ্যন্তরীণ বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে।