ঢাকা, ৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা এবং কুর্দি নেতা মাজলুম আবদির মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার বৈঠকের পর সিরিয়া কুর্দি বাহিনীর সাথে একটি ব্যাপক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। এই বৈঠকটি উত্তরাঞ্চলীয় আলেপ্পো শহরে মারাত্মক সংঘর্ষের পর অনুষ্ঠিত হয়।
দীর্ঘকালীন শাসক বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত বছর ক্ষমতা গ্রহণকারী সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ কুর্দিদের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন প্রদানকারী বিকেন্দ্রীভূত সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
দামেস্ক থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
এই বিষয়টি উত্তর ও উত্তর-পূর্বের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণকারী কুর্দি প্রশাসনের সাথে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। অন্যদিকে দুই পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে কুর্দিদের বেসামরিক ও সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজ্যে একীভূত করার বিষয়ে ১০ মার্চের চুক্তি বাস্তবায়ন আটকে রয়েছে।
এক্স-এর এক বিবৃতিতে সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মুরহাফ আবু কাসরা বলেছেন, তিনি দামেস্কে মার্কিন-সমর্থিত, কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) এর প্রধান আব্দির সাথে দেখা করেছেন।
কাসরা বলেছেন, ‘আমরা সকল ফ্রন্টে একটি বিস্তৃত যুদ্ধবিরতি এবং উত্তর ও উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় সামরিক বাহিনী মোতায়েনের বিষয়গুলোতে একমত হয়েছি’। চুক্তির বাস্তবায়ন অবিলম্বে শুরু হবে।
একটি সরকারি সূত্র এএফপি’কে জানিয়েছে, যে শারা আবদির সাথে সাক্ষাতের পরে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা জুলাইয়ের পর এই প্রথম এই ধরনের মুখোমুখি হয়েছিল এবং তারা ‘১০ মার্চের চুক্তি সম্পর্কিত নিরাপত্তা বিষয়গুলো’ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি আরো জানিয়েছে, সিরিয়ায় মার্কিন দূত টম ব্যারাক এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপারও উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারাক সোমবার এক্স-এ বলেছেন, তিনি এবং কুপার আবদির সাথে ‘মূল আলোচনার’ জন্য উত্তর-পূর্ব সিরিয়া সফর করেছেন।
কুর্দি নেতা বলেছেন, তারা ‘সিরিয়ার রাজনৈতিক একীকরণকে সমর্থন, দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা এবং সিরিয়ার জনগণের সকল অংশের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে’ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি এই অঞ্চলে ইসলামিক স্টেট গ্রুপ জিহাদিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অব্যাহত প্রচেষ্টা নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবারের শুরুতে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস মনিটর এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, আলেপ্পোতে সংঘর্ষ বন্ধ হয়ে গেছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, সোমবার গভীর রাতে আলেপ্পোর কুর্দি-সংখ্যাগরিষ্ঠ শেখ মাকসুদ এবং আশরাফিয়াহ পাড়ায় কুর্দি বাহিনীর বোমা হামলায় সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত একজন সদস্য এবং একজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
অবসরপ্রাপ্ত সিনান রজব বাশা (৬৭) টেলিফোনে এএফপি’কে বলেছেন, ‘আমরা ভীত এবং আজ সকালে শেখ মাকসুদের আমাদের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি’।
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি শেখ মাকসুদ এবং আশরাফিয়াহ থেকে বিপুল সংখ্যক পরিবার পালিয়ে গেছ্’ে। জেলাগুলোর প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং যারা চলে গিয়েছিল তাদের আর ফিরে আসতে দেওয়া হয়নি।
আসাদের অধীনে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের বিশৃঙ্খলায় তাদের আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা কুর্দিরা বারবার বিকেন্দ্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু দামেস্কের নতুন কর্তৃপক্ষ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
তারা সিরিয়ার অস্থায়ী সংবিধানকে দেশের বৈচিত্র্য প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ বলেও সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে কুর্দি-অধ্যুষিত রাকা এবং হাসাকেহ প্রদেশগুলোকে সিরিয়ার নতুন সংসদ সদস্যদের জন্য সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠিত ভোট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
ডিসেম্বরে আসাদের পতনের পর থেকে সিরিয়ার নতুন ইসলামপন্থী কর্তৃপক্ষ আলেপ্পো শহর পরিচালনা করছে।
কিন্তু শেখ মাকসুদ এবং আশরাফিয়াহ পাড়াগুলো এসডিএফ এবং কুর্দিদের নিরাপত্তা বাহিনী আসাইশের সাথে যুক্ত কুর্দি ইউনিটগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যদিও এসডিএফ এপ্রিল মাসে সরকারের সাথে সম্পাদিত একটি বিচ্ছিন্নতা চুক্তির অধীনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করে নেয়।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ‘সানা’ জানিয়েছে, কয়েক ডজন পরিবার জেলা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর এসডিএফ ‘শেখ মাকসুদের আশেপাশের নিরাপত্তা চৌকিগুলোকে লক্ষ্য করে’ আক্রমণ করেছে।
পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, সিরিয়ার সরকারি বাহিনী আশেপাশের এলাকায় বিস্ফোরক ড্রোন এবং ভারী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
এসডিএফ সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীকে আক্রমণ করার কথা অস্বীকার করেছে। দামেস্কপন্থী দলগুলোকে আলেপ্পোর কুর্দি পাড়াগুলো অবরোধ করার এবং ‘ট্যাঙ্ক নিয়ে’ এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ করেছে।
এতে বলা হয়েছে, আসাইশদের জেলাগুলো রক্ষা করতে সাহায্য করার জন্য বাসিন্দারা অস্ত্র তুলে নিয়েছে।