শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে সম্মত হয়েছে ইসরাইল ও হামাস

বাসস
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:৫৮

ঢাকা, ৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : হাজার হাজার মানুষকে হত্যা, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ধ্বংস এবং একটি বড় মানবিক সংকট সৃষ্টিকারী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে বৃহস্পতিবার গাজা যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে সম্মত হয়েছে ইসরাইল ও হামাস।

কায়রো থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে জিম্মি ও বন্দী মুক্তির পাশাপাশি ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরাইলের ওপর হামাসের নজিরবিহীন হামলার ফলে শুরু হওয়া দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের পর গাজায় সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিশরে তার ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর পর বলেছেন, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস সমস্ত জিম্মি মুক্তি দেবে এবং ইসরাইল চুক্তি মাফিক সেদেশে সৈন্যদের প্রত্যাহার করবে।

কাতার বলেছে, ‘গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে, ইসরাইলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি ও সাহায্য প্রবেশের দিকে মনোযোগ দেয়া হবে।’

গোষ্ঠীর একটি সূত্র বৃহস্পতিবার এএফপিকে জানায়, হামাস চুক্তির প্রথম পর্যায়ের অংশ হিসেবে প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দীর পরিবর্তে ২০ জন জীবিত জিম্মিকে বিনিময় করবে।

আলোচনার সঙ্গে পরিচিত সূত্রটি জানিয়েছে, চুক্তি বাস্তবায়নের ৭২ ঘন্টার মধ্যে এই বিনিময় অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।

সূত্রটি আরো জানায়, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইল কর্তৃক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ২৫০ জন ও গ্রেফতারকৃত ১ হাজার ৭০০ জন ফিলিস্তিনির বিনিময়ে জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে।

ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বলেন, ‘আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে ইসরাইল ও হামাস উভয়ই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে স্বাক্ষর করেছে।’

‘এর অর্থ হল খুব শিগগির সমস্ত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইসরাইল তাদের সৈন্যদের একটি চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাহার করবে যা একটি শক্তিশালী, টেকসই ও চিরস্থায়ী শান্তির দিকে প্রথম পদক্ষেপ।’

ট্রাম্প মধ্যস্থতাকারী কাতার, মিশর ও তুরস্ককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ধন্যবাদ শান্তিপ্রিয়রা!’

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, তিনি ‘ঈশ্বরের সাহায্য নিয়ে জিম্মিদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন।’

ট্রাম্প এর আগে বলেন, চুক্তি ‘খুব কাছাকাছি’ তাই তিনি এই সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য সফর করতে পারেন।’

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সপ্তাহের শেষের দিকে, সম্ভবত রোববার সেখানে যেতে পারি।’ তার মিশরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় যাওয়ার কথাও বিবেচনা করবেন তিনি।

ট্রাম্পের পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতি, গাজায় আটক সকল জিম্মিকে মুক্তি, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও ধীরে ধীরে ইসরাইলি অঞ্চল থেকে প্রত্যাহারের কথা বলা হয়।

ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও মধ্যপ্রাচ্যের দূত স্টিভ উইটকফ আলোচনায় আগেই পৌঁছেছিলেন।

গাজা দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় রাত নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে একজন এএফপি সাংবাদিক ঘোষণার আগে প্রত্যাশার পরিবেশ বর্ণনা করেন। তিনি জানান, সেখানে ‘আল্লাহু আকবর’ এবং বাতাসে কিছু উদযাপনের গুলিবর্ষণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত ৫০ বছর বয়সী মোহাম্মদ জামলট বলেন, ‘আমরা আলোচনা ও যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে প্রতিটি খবর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’

হামাস যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্তি পেতে চাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দীদের একটি তালিকা জমা দিয়েছে।

বিনিময়ে, হামাস বাকি ৪৭ জন জীবিত ও মৃত জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, ইসরাইলের ওপর হামলার সময় তাদের আটক করা হয়। ওই হামলা যুদ্ধের সূত্রপাত করে।

বুধবারের আলোচনায় কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধানেরও উপস্থিত থাকার কথা ছিল।

হামাস জানায়, তাদের সঙ্গে ইসলামিক জিহাদের প্রতিনিধিরা যারা গাজায় কিছু জিম্মি করেছে তারা ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ ফিলিস্তিনির প্রতিনিধিরাও যোগ দেবেন।

ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইসরাইলের ওপর হামাসের হামলার দ্বিতীয় বার্ষিকীর ছায়ায় আলোচনা চলে, ওই হামলার ফলে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস গাজায় ২৫১ জনকে জিম্মি করে। তাদের মধ্যে ৪৭ জন এখনও রয়ে গেছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে তাদের ২৫ জন মারা গেছে।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানে কমপক্ষে ৬৭ হাজার ১৮৩ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। 

হামাসের কর্তৃত্বাধীন একটি উদ্ধারকারী বাহিনী, অঞ্চলটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে যে চুক্তির কয়েক ঘন্টা আগেও গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ হয়নি। গাজা সীমান্তের কাছে ইসরামফলে একজন এএফপি সাংবাদিক সকালে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন।

যুদ্ধের অবসানের জন্য বিশ্বব্যাপী চাপ বেড়েছে, গাজার বেশিরভাগ অংশই অচল অচল হয়ে পড়েছে, জাতিসংঘ অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। এদিকে ইসরাইলি জিম্মি পরিবারগুলো এখনও তাদের প্রিয়জনদের ফিরে আসার জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছে।

আলোচনার মূলে ছিল হামাস যেসব ফিলিস্তিনি বন্দীর জন্য চাপ দিয়েছিল তাদের নাম।

মিশরের রাষ্ট্র-সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের মতে, দলটির মুক্তি চাওয়ার তালিকায় হামাসের প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহ আন্দোলনের হাই-প্রোফাইল বন্দী মারওয়ান বারঘৌতিও রয়েছে।

ইসলামপন্থী দল হামাসের শীর্ষ আলোচক খলিল আল-হাইয়া আরো বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পৃষ্ঠপোষক দেশগুলোর কাছ থেকে যুদ্ধ চিরতরে শেষ হওয়ার নিশাচয়তা চেয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
হামাস-ইসরাইল সংলাপকে স্বাগত বাংলাদেশের
২৭তম বিসিএসের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়সূচি ১২ থেকে ১৫ অক্টোবর
বরিশালে তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র পুনর্গঠনের ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ
শহীদ জেহাদ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় স্বৈরাচারের বুলেট বুকে নিয়েছিলেন : বিএনপি মহাসচিব
সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ইউএফসি যোদ্ধাকে গুলি করে হত্যা
বাংলাদেশ বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় একটি দেশ: আমীর খসরু 
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির ‘প্রথম পর্যায়ে’ ইসরাইল এবং হামাস একমত
নড়াইলে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন: সাংবাদিকদের নিয়ে কর্মশালা
টাঙ্গাইলে নকল কসমেটিকস রাখায় একটি শপিংমলকে জরিমানা 
হবিগঞ্জে টাইফয়েড ক্যাম্পেইন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন
১০