ঢাকা, ১০ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ইউরোপীয় শাখার শুক্রবার প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ইউরোপের প্রতি তিনজন ডাক্তার ও নার্সের মধ্যে একজন বিষণ্নতা বা উদ্বেগে ভুগছেন।
কোপেনহেগেন থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপের সাধারণ জনগণের তুলনায় এই হার পাঁচ গুণ বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপের পরিচালক হ্যান্স ক্লুগ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সংকট একটি স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংকট, যা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অখণ্ডতার জন্য হুমকিস্বরূপ’।
তিনি বলেছেন, ‘প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনেরও বেশি তাদের জীবন শেষ করার বা নিজেদের ক্ষতি করার কথা ভেবেছেন। যারা আমাদের যত্ন নেন তাদের ওপর এটি একটি অগ্রহণযোগ্য বোঝা’।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব ডাক্তার এবং নার্স সহিংসতার শিকার হন, নিয়মিত দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেন এবং শিফটে বিশেষ করে রাতে কাজ করেন, তাদের হতাশাগ্রস্ত উদ্বিগ্ন এবং আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা বেশি থাকে।
সাধারণ জনগণের তুলনায় তাদের আত্মহত্যার চিন্তাভাবনার প্রবণতা দ্বিগুণ।
নার্স এবং মহিলা ডাক্তারদের হতাশা এবং উদ্বেগে ভোগার সম্ভাবনা বেশি। যেখানে পুরুষ ডাক্তারদের অ্যালকোহল আসক্তি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। লাটভিয়া এবং পোল্যান্ডের স্বাস্থ্যকর্মীরা সর্বোচ্চ মাত্রার বিষণ্নতার কথা জানিয়েছেন, যার প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা।
২৭টি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের পাশাপাশি আইসল্যান্ড এবং নরওয়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের ৯০ হাজার উত্তরদাতার ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণাটি আরো প্রকাশ করেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে গত বছরে কর্মক্ষেত্রে এক-তৃতীয়াংশ ডাক্তার এবং নার্সরা বুলিং বা সহিংস হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। দশ শতাংশ শারীরিক সহিংসতা অথবা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি চারজন ডাক্তারের মধ্যে একজন সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টারও বেশি সময় কাজ করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ শতাংশেরও বেশি ডাক্তার এবং এক-চতুর্থাংশ নার্স অস্থায়ী কর্মসংস্থান চুক্তিতে আছেন, ‘যা চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধির সাথে দৃঢ়ভাবে জড়িত’।
স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানির প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’, ওভারটাইম এবং দীর্ঘ কর্মঘণ্টার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে সংস্কার এবং স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অ্যাক্সেস নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর অভাবের কারণে এই ব্যবস্থাগুলো আরো জরুরি ছিল।
ক্লুগ বলেছেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপ যখন প্রায় দশ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতির মুখোমুখি হবে, তখন আমরা তাদের ক্লান্তি, হতাশা বা সহিংসতার জন্য এই ঘাটতি পূরণ করতে পারবো না।’