ঢাকা, ১১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে শুক্রবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। তবে তিনি এই পুরস্কার ভেনেজুয়েলার জনগণ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি উৎসর্গ করেছেন।
অসলো থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
জুরি বোর্ড জানিয়েছে, গত বছরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটাতে প্রচারণায় নেতৃত্বদানকারী গণতন্ত্র কর্মী মাচাদো ভেনেজুয়েলায় একজন ‘একত্রীকরণকারী’ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন।
জীবনের হুমকি সত্ত্বেও তিনি পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
তিনি তার পুরষ্কার ‘ভেনেজুয়েলার দুর্দশাগ্রস্ত জনগণ’ এবং ‘আমাদের লক্ষ্যের প্রতি চূড়ান্ত সমর্থন’ উল্লেখ করে দীর্ঘদিন ধরে এটি কামনা করে আসা ট্রাম্পের প্রতি আকস্মিক পদক্ষেপে উৎসর্গ করেছেন।
তিনি এক্স-এ লিখেছেন, ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি বড় ধরনের সমাবেশ এবং সন্দেহভাজন মাদক জাহাজের ওপর মারাত্মক হামলার এক মাস পর ‘আমরা আগের চেয়েও বেশি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর নির্ভর করি।’
৫৮ বছর বয়সী মাচাদো নোবেল ইনস্টিটিউটের পরিচালক ক্রিস্টিয়ান বার্গ হার্পভিকেনকে তার পুরস্কারের খবর জানিয়ে ফোন করেছেন। তিনি ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্রের শান্তিপূর্ণ উত্তরণের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
তিনি সেই কলে বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত যে আমরা জয়ী হব।’ তার সেই কল ভিডিও করা হয়েছিল এবং পরে এক্স-এ পোস্ট করা হয়েছিল।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান জর্গেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস বলেছেন, গত এক বছর ধরে আত্মগোপনে থাকা প্রশিক্ষিত প্রকৌশলী ‘সাম্প্রতিক সময়ে লাতিন আমেরিকার বেসামরিক সাহসের সবচেয়ে অসাধারণ উদাহরণগুলোর মধ্যে একটি’।
ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা এডমুন্ডো গঞ্জালেজ উরুতিয়া, তার জয়কে ‘একজন নারী এবং সমগ্র জনগণের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের দীর্ঘ সংগ্রামের যথাযথ স্বীকৃতি’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বর্তমানে স্পেনে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।
তবে ভেনেজুয়েলার ভেতরে কিছু লোক প্রকাশ্যে এই পুরস্কারের সমালোচনা করেছেন।
কারাকাসের ৬৮ বছর বয়সী পেনশনভোগী পেদ্রো গঞ্জালেজ বিড়বিড় করে বলেছেন, ‘ওই মহিলা ভেনেজুয়েলায় শান্তির জন্য কিছুই করেন নি’।
‘তিনি যা করেছেন তা হল প্রতিবাদের ডাক, দাঙ্গার ডাক এবং এই ধরণের সবকিছু।’
জাতিসংঘে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রদূত রসিকতা করে বলেছেন, মাচাদো পদার্থবিদ্যায় নোবেলের চেয়ে শান্তিতে নোবেল পাওয়ার যোগ্য নন।
কিন্তু আর্জেন্টিনা, যেখানে মাদুরোর অধীনে অর্থনৈতিক মন্দা থেকে পালিয়ে আসা লক্ষ লক্ষ ভেনেজুয়েলার বাসিন্দারা বাস করেন, সেখানে উৎসবের আমেজ ছিল।
৩১ বছর বয়সী ভেনেজুয়েলার আইনজীবী এবং কর্মী মারিয়া অ্যাঞ্জেল নাভাস এই পুরস্কারকে ‘বছরের পর বছর ধরে চলমান সংগ্রামের স্বীকৃতি এবং সমর্থন’ বলে অভিহিত করেছেন।
- রক-স্টার রাজনীতিবিদ-
মাচাদো ২০২৪ সালের ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু মাদুরোর সরকার তার প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়।
তিনি এরপর অনিচ্ছুক, স্বল্প পরিচিত সাবেক কূটনীতিক গঞ্জালেজ উরুতিয়াকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সমর্থন করেন এবং সমাবেশে তার সাথে যান যেখানে তাকে একজন রক-স্টারের মতো স্বাগত জানানো হয়।
মাদুরো নির্বাচনী বিজয় দাবি করেন কিন্তু মাত্র কয়েকটি দেশ তার জয়কে স্বীকৃতি দেয়।
কারাকাসে জন্মগ্রহণকারী মাচাদো ২০০২ সালে সুমাতে (আমাদের সাথে যোগ দিন) সংগঠনের প্রধান হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। মাদুরোর পরামর্শদাতা প্রয়াত সমাজতান্ত্রিক নেতা হুগো শ্যাভেজকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি একটি গণভোটের আহ্বান জানান।
এই আহ্বানের ফলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ ওঠে এবং মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয়। যার ফলে তিনি তার তিন সন্তানকে বিদেশে বসবাসের জন্য পাঠাতে বাধ্য হন।
কমিটি বলেছে, তারা জানে যে, মাচাদো ১০ ডিসেম্বর অসলো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না।
মাদুরোর সরকারের ওপর সামরিক চাপ প্রয়োগের মার্কিন অভিযানের এক মাস পর এই পুরষ্কারটি এসেছে। যার মধ্যে ভেনেজুয়েলার কাছে জলসীমায় মাদক বহনকারী নৌকাগুলোতে হামলাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ওয়াশিংটন মাদুরোর বিরুদ্ধে একটি মাদক কার্টেলের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ করেছে। যা তিনি অস্বীকার করেছেন।
মাচাদো এবং গঞ্জালেজ উরুতিয়া ‘জনপ্রিয় সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের’ জন্য ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ হিসেবে তার সরকারের ওপর মার্কিন চাপকে সমর্থন করেছেন।
- ট্রাম্পের আশা ভঙ্গ -
শুক্রবারের ঘোষণার আগে সম্ভাব্য বিজয়ীদের মধ্যে মাচাদো ছিলেন না। তবুও, পুরস্কার প্রদানের কয়েক ঘন্টা আগে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাজি প্ল্যাটফর্ম পলিমার্কেটে তার পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা ৩.৭৫ থেকে বেড়ে প্রায় ৭৩ শতাংশে পৌঁছেছিল - যা নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউট কর্তৃক সম্ভাব্য ফাঁসের তদন্ত শুরু করে।
ফ্রাইডনেস বলেছেন, একসময় তুলনামূলকভাবে গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধ পেট্রো-রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ভেনেজুয়েলা এখন একটি ‘নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র যা এখন মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন’।
৭০ লক্ষেরও বেশি ভেনেজুয়েলাবাসী মাদুরোর অধীনে দেশের অর্থনৈতিক মন্দা থেকে পালিয়ে এসেছেন। যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ।
জানুয়ারীতে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে ট্রাম্প বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, অসংখ্য সংঘাত সমাধানে তার ভূমিকার জন্য তিনি নোবেল ‘প্রাপ্য’। কিন্তু তার এই দাবিটি পর্যবেক্ষকরা ব্যাপকভাবে অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন।
তার অফিস কমিটির সিদ্ধান্তকে ‘শান্তির চেয়ে রাজনীতি’কে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।
তবে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য তার মধ্যস্থতায় করা চুক্তির ঘোষণার কয়েকদিন আগেই কমিটি তার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।