ঢাকা, ১২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি দ্বিতীয় দিনে শনিবার ইউরোপের বেশ কয়েকটি শহরে ফিলিস্তিনি-পন্থী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সপ্তাহান্তে এই ধরণের বিক্ষোভে মিছিলে বিক্ষোভকারীরা ‘ফ্রি ফিলিস্তিন’ বলে স্লোগান দেয় ও ফিলিস্তিনি পতাকা উঁচিয়ে ধরে। সমাবেশগুলোতে লন্ডনে হাজার হাজার, বার্লিনে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ ও ভিয়েনায় ৫০০ বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছিল।
সুইজারল্যান্ডের বার্নে প্রায় ২ হাজার মানুষ অননুমোদিত বিক্ষোভ করার পর, পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় কিছু কালো মুখোশধারী বিক্ষোভকারী পটকা নিক্ষেপ করে এবং পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে তাদের পাল্টা জবাব দেয়।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
লন্ডনে, প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইনের পরিচালক বেন জামাল, বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তির স্বাদ ভাগাভাগি করছি।’
ক্যাম্পেইনটি দুই বছর আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লন্ডনে মাসিক ফিলিস্তিনি-পন্থী সমাবেশের আয়োজন করে আসছে।
তিনি এএফপিকে বলেন, ‘আমরা তাদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এখানে এসেছি। এর পাশাপাশি, এই যুদ্ধবিরতি টিকবে না— এমন আশঙ্কাও করছি।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজার জন্য প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনাটি মার্কিন এই নেতার নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষের আহ্বান আর এ সম্পর্কে উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও জামাল বলেন, এই যুদ্ধ বিরতিতে ‘অসাধারণ স্বস্তি’ রয়েছে।
মধ্য লন্ডনে টেমস নদীর তীরে যেন লাল ও সবুজ রঙের একটি সমুদ্র, ফিলিস্তিনি পতাকার রঙ তৈরি হয়েছিল।
সেখানে মূলত শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু হয়েছিল।
বিক্ষোভকারীরা কালো-সাদা কেফিয়া স্কার্ফ পরেছিলেন, ‘গাজায় অনাহার বন্ধ কর’ ও ‘গণহত্যা বন্ধ কর’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন এবং ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন, (ফিলিস্তিনকে মুক্ত কর) এবং ‘ফ্রম রিভার টু সি প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ (নদী থেকে সমুদ্রে, ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে) স্লোগান দেন।
মূল বিক্ষোভকারীরা হোয়াইটহলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় ইসরায়েলি পতাকা উড়িয়ে পাল্টা প্রতিবাদকারীদের একটি দল জোরে সঙ্গীত বাজায়।
লন্ডন পুলিশ জানিয়েছে, দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষের সময় ‘কিছু সংখ্যক বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার’ করা হয়েছে।
বার্লিনে অনেক ছোট শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে কেউ কেউ ইসরায়েলের একনিষ্ঠ মিত্র জার্মান সরকারের বিরুদ্ধে ‘ইতিহাসের ভুল দিকে’ থাকার অভিযোগ এনেছে।
এই নগরীতে দুই সপ্তাহ আগে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ মিছিল করেছিল।
সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের ২৩ বছর বয়সী ছাত্রী ক্যাটরিনা স্কেলস বলেন, ‘আমি এখানে আমার বন্ধুদের সঙ্গে এসেছি, যাতে তারা দেখাতে পারে যে গাজার ওপর নজর রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, এই যুদ্ধবিরতিই ‘যথেষ্ট নয়’।
পঞ্চাশের দশকের ট্রেড ইউনিয়নবাদী স্টিভ হেডলিও এ নিয়ে নিশ্চিত নন।
হেডলি এএফপিকে বলেন, ‘আশা করি, এখন আমরা শান্তির দিকে প্রথম পদক্ষেপ পেয়েছি, তবে আমরা আগেও এমন পদক্ষেপ পেয়েছিলাম।’ তিনি ট্রাম্পের ‘গাজায় একটি রিভেরিয়া পরিকল্পনা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট চলতি বছরের শুরুতে বলেছিলেন।
‘গাজা গণহত্যার বিরুদ্ধে হলোকাস্ট থেকে বেঁচে যাওয়াদের বংশধরদের’ ব্যানারে মিছিল করা একটি দলের অংশ ৭৪ বছর বয়সী মিরান্ডা ফিঞ্চ বলেন, যুদ্ধবিরতি ‘খুব কম অর্জন’ ছিল।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা শূন্যে ফিরে যাচ্ছে। লাশের ওপরে, নর্দমার ওপরে, ধ্বংসস্তূপে ফিরে যাচ্ছে।’
৪২ বছর বয়সী ফ্যাবিও ক্যাপোগ্রেকো বলেন, যুদ্ধবিরতি ‘খুব সামান্যই অর্জন এবং যা খুব দেরিতে হয়েছে’। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধে জড়িতদের জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি তার দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে পঞ্চম বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।
পানশালার এই ম্যানেজার আরো বলেন, ‘আশা করি, এই শেষবারের মতো আমাদের এখানে এসে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে হবে। কিন্তু আমার মনে হয়, সবকিছু ঠিক আছে, তা এখনই বলা যাবে না। আরো কিছুদিন গাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’