ঢাকা, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : দুই বছরের যুদ্ধের পর শান্তির পথ তৈরির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত জিম্মি-বন্দী বিনিময় এবং একটি শীর্ষ সম্মেলনের আগে সোমবার চতুর্থ দিনের মতো গাজায় যুদ্ধবিরতি বহাল রয়েছে।
গাজা উপত্যকা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
রোববার রাতে ইসরাইল ও মিশরে সফরে রওনা হওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার লোহিত সাগরের অবকাশ শহর শারম আল-শেখে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির যৌথ আয়োজনে গাজা শান্তি শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যাশিত নেতাদের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন।
শান্তি প্রক্রিয়ার সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি: গাজা শান্তি চুক্তিটি একটি পারস্পরিক চুক্তি। যেখানে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরাইল থেকে আটককৃত জিম্মিদের সঙ্গে ইসরাইলি কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ের চুক্তি মেনে চলার কথা রয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে জীবিত ও মৃত মিলে ৪৭ জন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইল কর্তৃক আটক ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দী ও ১,৭০০ গাজার নাগরিককে মুক্তি দেওয়া হবে।
২০১৪ সালে গাজা যুদ্ধে নিহত একজন সৈন্যের দেহাবশেষও হামাস হস্তান্তর করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরাইল আশা করছে যে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তাবলী অনুসারে, দুপুরের (গ্রিনিচ মান সময় ৯.০০ টা) সময়সীমার আগে, সোমবার ভোরে ২০ জন জীবিত জিম্মিকে রেড ক্রসের কাছে মুক্তি দেওয়া হবে।
নেতানিয়াহুর মুখপাত্র বলেন, ‘আগামীকাল মুক্তিপ্রাপ্ত আমাদের সকল জিম্মি সীমান্ত পেরিয়ে ইসরাইলে প্রবেশ করেছে তা ইসরাইল নিশ্চিত করলেই ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে।’
তবে সোমবার সমস্ত মৃত জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে ইসরাইল তা আশা করছে না।
সোমবার মিশরের শার্ম আল-শেখে ২০ জনেরও বেশি বিশ্ব নেতার অংশ গ্রহনে গাজা শান্তি শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্প ও সিসি যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন।
মিশরের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, এই সমাবেশের লক্ষ্য ‘গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসান, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের প্রচেষ্টা জোরদার করা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার একটি নতুন যুগের সূচনা করা।’
রোববার, মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘ঐতিহাসিক’ সমাবেশে ‘গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসানের একটি নথি’ স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার ও সম্ভবত তুরস্ক শীর্ষ সম্মেলনের সময় একটি গ্যারান্টি নথিতে স্বাক্ষর করবে। তবে যুদ্ধরত পক্ষগুলোর কেউই যোগ দেবে না।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, কোনো ইসরাইলি কর্মকর্তা এতে অংশ নেবেন না, হামাসের পক্ষ থেকে আগে নিশ্চিত করা হয়েছে যে তারা প্রতিনিধি পাঠাবে না।
যাদের যোগদানের কথা রয়েছে তারা হলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান। কানাডার প্রতিনিধিত্ব করবেন, দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি।
মিশর জানিয়েছে, ২১টি দেশ এতে অংশ নেবে। ইইউ এবং আরব লীগ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও জার্মানিসহ অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিত্বও আশা করা হচ্ছে।
ইরান সোমবার জানিয়েছে যে, দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি কেউই এতে যোগ দেবেন না, যদিও তারা আমন্ত্রণ পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে।
হামাসের আলোচনা কমিটির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রোববার এএফপিকে জানিয়েছে যে তারা যুদ্ধোত্তর গাজা পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবে না।
সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে সূত্রটি বলেছে, ইসলামপন্থী আন্দোলন উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ ত্যাগ করেছে, তবে জোর দিয়ে বলেছে যে এটি ‘ফিলিস্তিনি কাঠামোর একটি মৌলিক অংশ।’
সূত্রটি জানিয়েছে, ‘হামাস দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এবং গাজায় ইসরাইলি হামলা না হলে এই সময়ের মধ্যে তাদের অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ রাখবে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হামাসের আরেক কর্মকর্তা এর আগে এএফপিকে বলেন, গোষ্ঠীটির নিরস্ত্রীকরণের ‘প্রশ্নই ওঠে না।’
গাজার উদ্দেশে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে: এএফপির একজন প্রতিবেদক জানায়, রোববার ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের সঙ্গে কেরেম শালোম ক্রসিংয়ে গাজার উদ্দেশে ছয়টি ডিজেল জ্বালানি ট্রাক ও পাঁচটি রান্নার গ্যাসবাহী ট্রাকসহ ত্রাণবাহী ২০০ টিরও বেশি ট্রাক খালাস করা হয়েছে। খালি যানবাহনগুলোকে মিশরের দিকে ফিরে যেতে দেখেছেন তিনি।
বন্দুকযুদ্ধ নিরব হওয়ার একদিন পর, শনিবার লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বিধ্বস্ত গাজা নগরীতে ফিরে আসেন।
হামাসের কর্তৃত্বাধীন গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ ফিরে এসেছে।