ঢাকা, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : এবারের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ৩০ হতে যাচ্ছে প্রতীকী এক আয়োজনের মাধ্যমে। প্যারিস চুক্তির এক দশক পূর্তি আর পরিবেশগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ আমাজনে আয়োজিত এই বিশ্বজুড়ে সম্মেলন নজর কেড়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে কী থাকছে আলোচনার টেবিলে?
ব্রাসিলিয়া থেকে এএফপি জানায়, প্রায় সব দেশ এই দীর্ঘ আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। তবে আগের ‘কপ’ সম্মেলনগুলোর মতো এবার কোনো নির্দিষ্ট থিম বা লক্ষ্য নেই।
তবে তাই বলে বড় দূষণকারী দেশগুলো দায় এড়াতে পারবে না। জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এবারও ক্ষোভ প্রকাশ করছে ধনী দেশগুলোর সীমিত উদ্যোগ ও পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা না দেওয়ায়।
আগামী ১০ নভেম্বর ব্রাজিলের বেলেম শহরে দুই সপ্তাহব্যাপী কপ৩০ সম্মেলন শুরু হচ্ছে। আলোচ্যসূচির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে: নিঃসরণ-প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণে বিশ্ব এখনও যথেষ্ট দ্রুত হারে কার্বন নিঃসরণ কমাচ্ছে না। কপ৩০-এর জাঁকজমক আয়োজন এই কঠিন বাস্তবতাকে ঢাকতে পারবে না।
জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারী দেশগুলোকে প্রতি পাঁচ বছর পর পর আরও কঠোর লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়, যাতে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানো যায়। এইভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধাপে ধাপে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাওয়া যায়।
২০৩৫ সালের জন্য নতুন প্রতিশ্রুতি জমা দেওয়ার সময়সীমা ছিল ফেব্রুয়ারি। যাতে কপ৩০ সম্মেলনের আগে জাতিসংঘ এসব প্রতিশ্রুতির মূল্যায়ন করতে পারে।
তবে অধিকাংশ দেশ সময়মতো জমা দেয়নি। অক্টোবরের শুরু পর্যন্ত মাত্র ৬০টি দেশ তাদের সংশোধিত পরিকল্পনা জমা দিয়েছে। এর মধ্যে খুব কম দেশই আশাজনক লক্ষ্য দিয়েছে। বিশেষ করে চীনের লক্ষ্য প্রত্যাশার অনেক নিচে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত, ফলে তারা এখনও নিজেদের লক্ষ্য ঠিক করতে পারেনি। আবার অন্যতম বড় নিঃসরণকারী দেশ ভারত এখনও তার অঙ্গীকার চূড়ান্ত করেনি।
ফলে, বেলেমে বড় ধরনের জবাবদিহির মুখে পড়তে পারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। আয়োজক ব্রাজিল বলছে, নতুন প্রতিশ্রুতিগুলোই হবে ‘আমাদের যৌথ ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি।’
অর্থ- জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এবং কম কার্বন নির্ভর ভবিষ্যতের পথে এগোতে ধনী দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলোকে কতটা সহায়তা দেবে, এই বিষয়টি বেলেমে কপ৩০ সম্মেলনে বড় বিতর্কের কারণ হতে পারে, যেমন আগের সম্মেলনগুলোতেও হয়েছে।
গত বছর টানা দুই সপ্তাহের তীব্র তর্ক-বিতর্কের পর কপ২৯ সম্মেলন শেষ হয়েছিল তিক্ততা নিয়ে। উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ২০৩৫ সালের মধ্যে বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
তারা আরও ঘোষণা দেয়, ২০৩৫ সালের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে সহায়তা করবে। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। উন্নয়নশীল দেশগুলো এবারের কপ৩০ সম্মেলনে এই বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাইবে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো ঝুঁকি মোকাবেলায় উপকূলীয় প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার জন্য যে অর্থ প্রয়োজন, সেই ‘অ্যাডাপটেশন ফাইন্যান্স’ এবার আনুষ্ঠানিক আলোচনার বিষয়। পুরনো প্রতিশ্রুতি শেষ হওয়ায় এবার নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ হতে পারে।
বন- ব্রাজিল কপ৩০ সম্মেলনের আয়োজক শহর হিসেবে বেলেমকে বেছে নিয়েছে, কারণ, এটি আমাজনের খুব কাছাকাছি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় রেইনফরেস্টের গুরুত্ব বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য এটি আদর্শ মঞ্চ।
এবারের সম্মেলনে ব্রাজিল একটি নতুন বৈশ্বিক তহবিল চালু করতে যাচ্ছে। যেসব দেশ তাদের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন সংরক্ষণ করে, তাদের পুরস্কৃত করার প্রস্তাব রয়েছে এই তহবিলে।
‘ট্রপিক্যাল ফরেস্টস ফরএভার ফান্ড’ (টিএফএফএফ) নামের এই উদ্যোগে দাতা দেশগুলো থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার এবং বেসরকারি খাত থেকে আরও ১০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে। এই অর্থ বিনিয়োগ করা হবে আর্থিক বাজারে। ব্রাজিল ইতোমধ্যে এই তহবিলে ১ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।
গ্রিনপিসের ক্লেমেন্ট হিলারি এএফপিকে বলেন, ‘টিএফএফএফ তহবিল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন রক্ষায় ভালো একটি উদ্যোগ হতে পারে।’
তবে তিনি মনে করেন, কপ৩০ সম্মেলনে যদি ২০৩০ সালের মধ্যে বন ধ্বংস বন্ধে আরও স্পষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে এই তহবিলের ফলাফল আরও ইতিবাচক হতে পারে।
গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, কখনো ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়নি এমন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন ধ্বংসের হার ২০২৪ সালে ছিল রেকর্ড পরিমাণ। প্রতি মিনিটে প্রায় ১৮টি ফুটবল মাঠের সমান বনভূমি হারিয়ে গেছে, যার বেশির ভাগই আগুনে পুড়ে গেছে।