ঢাকা, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : কর্নেল মাইকেল র্যাান্ড্রিয়ানিরিনা ইতোমধ্যেই মাদাগাস্কারের সামরিক বিদ্রোহের নায়ক হয়ে উঠেছেন। তিনি মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে ইউনিফর্ম পরাবস্থায় এএফপি’কে বলেছেন, সেনাবাহিনী ‘ক্ষমতা দখল করেছে’।
মাদাগাস্কারের আন্তানারিভো থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে রাজোয়েলিনার বিরোধিতা করার ইতিহাসে ৫১ বছর বয়সী এই কমান্ডার শনিবার বিদ্রোহী ক্যাপস্যাট বাহিনীর নেতা হিসেবে আলোচনায় আসেন এবং একটি ভিডিও বিবৃতিতে ঘোষণা করেছেন, তারা সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘গুলি চালানোর আদেশ প্রত্যাখ্যান’ করেছেন।
২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া যুব-নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল। রাজোয়েলিনা সেই সপ্তাহান্তে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান, কয়েকদিন পর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাকে অভিশংসিত করা হয়।
শুক্রবার দেশটির শীর্ষ আদালত কর্তৃক প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের কথা রয়েছে এমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন র্যান্ড্রিয়ানিরিনা ভারত মহাসাগরের দরিদ্র দ্বীপটিকে বেসামরিক নেতৃত্বে রূপান্তরের মাধ্যমে নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে আমরা বেসামরিক নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবো।
- অভ্যুত্থানের দাবিতে গ্রেপ্তার -
দক্ষিণ আন্দ্রয় জেলার সাবেক গভর্নর র্যান্ড্রিয়ানিরিনাকে ২০২৩ সালের নভেম্বরে রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের কিছুক্ষণ আগে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
রাজোয়েলিনার মিত্র এবং সিনেটের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল রিচার্ড রাভালোমানানা কর্তৃক গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে।
তার অভিযুক্ত সহযোগী থিয়েরি রাম্পানারিভোর সাথে গৃহবন্দী করে একটি সামরিক হাসপাতালে রাখা র্যান্ড্রিয়ানিরিনাকে ২০২৪ সালের গোড়ার দিকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করার’ অভিযোগে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
র্যান্ড্রিয়ানিরিনা শনিবার এএফপি’কে বলেছেন, ‘আমরা ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে চলে এসেছিলাম এবং ছায়া অফিসার হিসেবে আমাদের মর্যাদা পুনরায় অর্জন করেছিলাম’।
তিনি বলেছেন, ‘আমার কোনো দায়িত্ব ছিল না’। ‘আমি শুধু ঘরে কাজ করতাম, রান্না করতাম এবং ফুটবল খেলতাম।’
যখন র্যান্ড্রিয়ানিরিনা এবং অন্যান্য ক্যাপস্যাট সৈন্যরা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যুব-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের ওপর সহিংস দমন-পীড়নের নিন্দা জানাতে নিজেদের দল ভেঙে ফেলেন, তখন তিনি সেই আন্দোলনের সামরিক মুখ হয়ে ওঠেন যা শেষ পর্যন্ত রাজোয়েলিনাকে চলে যেতে বাধ্য করে। সপ্তাহান্তে আন্তানানারিভোতে হাজার হাজার লোক মিছিলে যোগ দেন।
বিশ্লেষক এবং গবেষক ভেলোমাহানিনা রাজাকামাহারাভো বলেছেন, ‘তার সাহসী অবস্থান এবং লুথেরান চার্চের একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি হিসেবে তার ভাবমূর্তি তার বৈধতাকে আরো শক্তিশালী করে’।
তিনি বলেছেন, ‘এই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীকে সহিংসতার বিরুদ্ধে শেষ ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হতো’।
- ২০০৯ সালের ক্যাপস্যাট বিদ্রোহ -
ক্যাপস্যাট কন্টিনজেন্ট ২০০৯ সালের অভ্যুত্থানে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে রাজোয়েলিনাকে প্রথম ক্ষমতায় এনেছিল। এই কন্টিজেন্ট মূলত প্রশাসন, কর্মী এবং সরবরাহের জন্য দায়ী একটি সেনা বিভাগ।
২০০৯ সালের মার্চ মাসে মধ্য আন্তানানারিভো থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার (চার মাইল) দূরে সোয়ানিয়েরানা জেলার ঘাঁটিতে মোতায়েন সৈন্যরা তিন মাস ধরে বিরোধী আন্দোলনের ওপর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মার্ক রাভালোমানানার দমন-পীড়নের প্রতিবাদে বিদ্রোহ করে।
রাজাকামাহারাভো বলেছেন, ‘কর্নেল চার্লস আন্দ্রিয়ানাসোভিনা এবং লিলিসন রেনে ডি রোল্যান্ডের নেতৃত্বে বিদ্রোহ ক্ষমতার ভারসাম্যকে বিপর্যস্ত করে এবং রাজোয়েলিনার ক্ষমতা দখলের রাস্তা পাকাপোক্ত করে’।
রোল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে ‘জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করার’ অভিযোগও করা হয়েছিল। শনিবার ক্যাপস্যাট আবারও বিদ্রোহ করার সময় র্যান্ড্রিয়ানিরিনার পাশে দাঁড়িয়েছিল।
রাজাকামাহারাভো এএফপি’কে বলেছেন, ‘যদিও ক্যাপস্যাট এর অতীত ছিল অত্যন্ত বিতর্কিত। কারো কারো কাছে বীরত্বপূর্ণ, আবার কারো কারো কাছে সমালোচিত-এখন এটিকে ২০২৫ সালের আন্দোলনের একটি কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে দেখা হচ্ছে’।
শুক্রবার তার শপথ গ্রহণের আগে র্যান্ড্রিয়ানিরিনা ১৮ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, এই পরিবর্তনের মধ্যে প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তিনি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, কোনো অভ্যুত্থান হয়নি। ‘অভ্যুত্থান হল যখন সৈন্যরা অস্ত্র নিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে প্রবেশ করে, গুলি করে, রক্তপাত হয়’।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা এমন একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি যা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। আমরা এখন কঠোর এবং খুব দ্রুত কাজ করতে যাচ্ছি যাতে জনগণ হতাশ না হয়।
রাজাকামাহারাভো বলেছেন, ‘এটি সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।’
বিশ্লেষক বলেছেন, এটি ‘ন্যায়বিচার এবং জাতীয় পুনর্নবীকরণের পক্ষে ‘শেষ ঘাঁটি’ হিসেবে কাজ করার একটি সুযোগ।’