ঢাকা, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে চলমান সীমান্ত উত্তেজনা কমাতে শনিবার কাতারে আলোচনা শুরু হয়েছে। তালেবানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইসলামাবাদ থেকে এএফপি জানায়, এর আগে পাকিস্তানি বিমান হামলায় অন্তত ১০ আফগান নাগরিক নিহত হন। হামলার আগে দুই দেশের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর ছিল। তবে কাবুলের অভিযোগ, ইসলামাবাদ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। ওই বিরতির আগে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা সীমান্ত সংঘর্ষে বহু সেনা ও সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান।
ইসলামাবাদের নিরাপত্তা সূত্র জানায়, পাকিস্তানি আধাসামরিক বাহিনীর ওপর হামলার প্রতিশোধ নিতে আফগান সীমান্তে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সংশ্লিষ্ট একটি জঙ্গি গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়।
আফগান প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দ বলেছেন, ‘আলোচনা চলছে।’ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে তার বৈঠকের পর তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ এক্স-এ এ তথ্য জানান।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শেহবাজ শরিফও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। সংকট নিরসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এগিয়ে এসেছেন ইব্রাহিম।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দোহায় আলোচনার মূল লক্ষ্য হল- আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ করা এবং পাক-আফগান সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ও গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল আসিম মালিক।
তালেবান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আফগান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির প্রতিরক্ষা প্রধান মোহাম্মদ ইয়াকুব।
কাতার এখনো মধ্যস্থতা বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে পাকিস্তান তাদের ‘সহযোগিতার’ জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে।
উত্তেজনার মূল কারণ নিরাপত্তা ইস্যু। পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগানিস্তান টিটিপি-র মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে। তবে, কাবুল এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
সীমান্তে সংঘর্ষ শুরু হয় ১১ অক্টোবর। এর কয়েক দিন আগে তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির মুত্তাকি ভারতের সফরে গেলে কাবুলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর তালেবান পাকিস্তান সীমান্তে ভয়াবহ হামলা চালায়। জবাবে পাকিস্তানও কঠোর প্রতিক্রিয়ার ঘোষণা দেয়।
আলোচনার আগে এক জ্যেষ্ঠ তালেবান কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, শুক্রবার গভীর রাতে পাকিস্তানি বিমান বাহিনী পাকতিকা প্রদেশের তিনটি স্থানে হামলা চালায়। তিনি সতর্ক করে বলেন, কাবুল পাল্টা জবাব দেবে।
পাকতিকার এক হাসপাতাল কর্মকর্তা জানান, হামলায় ১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই শিশু ও তিনজন ক্রিকেট খেলোয়াড় রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১২ জন।
তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ এক্স-এ লেখেন, ‘আলোচনাকারী দলের মর্যাদা ও অখণ্ডতা রক্ষায়’ তালেবান বাহিনীকে গোলাগুলি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় স্পিন বোলদাকের মন্ত্রী সাদুল্লাহ তোরজান বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে।’
তবে, তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যুদ্ধাবস্থা এখনো বিদ্যমান, মানুষ এখনো ভীত।’
এদিকে, প্রতিবেশী ইরানও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এক ফোনালাপে তেহরান সতর্ক করে জানায়, এই উত্তেজনা ‘সমগ্র অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করতে পারে।’