অতি উন্নয়ন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণে বালিতে ভয়াবহ বন্যা

বাসস
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:০১

ঢাকা, ২০ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : রুথ ডেইড্রি বোয়েলানের পারিবারিক বাড়ি যেখানে ছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বন্যায় নিখোঁজ আত্মীয়দের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। এই বছর পর্যটন দ্বীপ বালির ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় তারা নিখোঁজ হন।

আবহাওয়া, জলবায়ু ও ভূ-পদার্থবিদ্যা সংস্থা (বিএমকেজি)-র মতে, কমপক্ষে ১৮ জনের প্রাণহানি ও চার জন নিখোঁজ হওয়া এই বন্যাটি ছিল এক দশকের মধ্যে দ্বীপের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রকৃতিক দুর্যোগ।

রেকর্ড পরিমান বৃষ্টিপাতের কারণে এটি আংশিকভাবে ঘটেছিল। তবে বছরের পর বছর ধরে ব্যাপকভাবে অতি উন্নয়ন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থাও এই বন্যার অন্যতম কারণ।

দ্বীপের পূর্বাঞ্চলে সবুজ দক্ষিণাঞ্চলে পর্যটন ব্যবসার প্রসার এখানে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সুবিধা এনে দিয়েছে। তবে ধানক্ষেত ও নারকেলের বাগানের উপর পাকা রাস্তা নির্মিত হয়েছে, যা এক সময় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সরবরাহ করেছিল।

সংরক্ষণ স্টার্ট-আপ দ্য ট্রিম্যাপের নুসান্তারা অ্যাটলাস প্রকল্পের তুলনায় এই পরিবর্তনগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা দ্বীপটির শীতল যুদ্ধের সময়ের মার্কিন গুপ্তচর চিত্রগুলোকে সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট ছবির সঙ্গে যুক্ত করেছে।

দ্য ট্রিম্যাপের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড গ্যাভো ব্যাখ্যা করেন, ‘এই সমস্ত জমি এখন রাস্তা বা ভবনে পরিণত হয়েছে। এখানকার মাটির পানি শোষণ করার ক্ষমতা নেই।’

এই বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৪৬ লক্ষেরও বেশি বিদেশী পর্যটক বালি ভ্রমণ করেছেন, যা দ্বীপের ৪৪ লক্ষ স্থানীয় জনসংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

এনজিও ওয়ালি বালির নির্বাহী পরিচালক মাদে কৃষ্ণা দিনাটা বলেন, পর্যটকদের জন্য যে অবকাঠামো তৈরি করা হয়। তার ফলে ‘ভূমি রূপান্তর, বিশৃঙ্খল নগর ব্যবস্থাপনা ও স্থানীয় পরিকল্পনা আইনের শিথিল প্রয়োগ’ ঘটেছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, কর্তৃপক্ষ সমুদ্র সৈকতে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলেছে এবং নদী ও পাহাড়ের ধারে নির্মাণকাজ বন্ধ করেছে।

কৃষ্ণা বলেন, অপরিকল্পিতভাবে এলোমেলো নির্মাণকাজ ও ভূমি উন্নয়ন বালিকে একটি অত্যন্ত দুর্যোগপ্রবণ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

২০২০ সাল থেকে নদীর তীরে স্থানীয় রুথের বাসিন্দা পরিবার যে বাড়িটি বসবাস করছিল, বন্যার সময় ভেঙে পড়ে এবং তার বেশ কয়েকজন আত্মীয়স্বজন বন্যার স্রোতের তোড়ে ভেসে যায়।

২৮ বছর বয়সী এই যুবক এএফপিকে বলেন, ‘আমি এখনও হতবাক। আমার ভাই, বাবা ও মা বন্যায় ভেসে যায় এবং দেখা গেল বাড়িটি ধসে গেছে ও তার ভেতরের সব জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।’

কাছেই বসবাসকারী আই ওয়ায়ান দিবাওয়া জানান, তীব্র বৃষ্টিপাতের মাঝখানে তার কুকুর তাকে জাগিয়ে তোলে এবং তিনি ‘কয়েক মিনিটের মধ্যেই’ তার বাড়ির চারপাশে পানি উঠতে দেখেন।

৫২ বছর বয়সী এই ব্যক্তি আরো বলেন, ‘এটা এটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ছিল। এটা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম।’

সরকারি তথ্য অনুসারে, বন্যার আগের দিন ৯ সেপ্টেম্বর, বাদুং জেলাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে রেকর্ড পরিমান বৃষ্টিপাত হয়েছিল।

বাদুংয়ে দ্বীপটির সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো অবস্থিত।

বালির গভর্নর আই ওয়ায়ান কোস্টার এএফপিকে বলেন, ‘এত বেশি বৃষ্টিপাত কখনও হয়নি।’

যদিও তিনি স্বীকার করেন, অবকাঠামোগত সমস্যাগুলোও ভয়াবহ বন্যায় ভূমিকা পালন করেছে।

কোস্টার আরো বলেন, চারটি প্রধান নদীর তীরে নির্মাণকাজের পর্যালোচনা শুরু করা হবে এবং জোনিং বিধি লঙ্ঘনকারী নির্মাণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘যদি নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়, তাহলে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হবে।’

বালির ধানক্ষেতগুলোকে এ ধরনের আরও উন্নয়ন কার্যক্রম থেকে রক্ষা করার জন্য নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনাও করা হয়েছে।

উদয়না বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আই গেদে হেন্দ্রাওয়ান বলেন, ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বালি প্রতিদিন ৪ হাজার ২০০ টন বর্জ্য উৎপাদন করে, যার অর্ধেকেরও কম ল্যান্ডফিলে যায়। 

হেন্দ্রাওয়ান বর্জ্য সমস্যা নিয়ে গবেষণা করেছেন।

তিনি এএফপিকে আরো বলেন, অপরিকল্পিতভাবে নিষ্কাশিত এই বর্জ্য, জলপথ ও ড্রেনগুলোকে আটকে রাখে।

বালির সরকার এই বছর দ্বীপে একটি বড় ল্যান্ডফিল বন্ধ করবে। সরকার জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করার জন্য স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

হেন্দ্রাওয়ান বলেন, কিন্তু অনেক মানুষের কাছে ডাম্পিং ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।

তিনি আরো বলেন, ‘একটি ভালো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার অভাবে আমরা সকলেই বর্জ্য সমস্যা নিয়ে লড়াই করছি।’

কোস্টার বলেন, স্থানীয় সরকার বর্জ্য থেকে একটি শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করতে চায়। যদিও তা দ্রুত বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা কম। পরিকল্পিত দ্বিতীয় বিমানবন্দর দ্বীপে আরও বেশি পর্যটক আনলে কেবল বর্জ্যের পরিমাণই বৃদ্ধি পাবে।

সরকার বলেছে, এই সুবিধাটি দ্বীপের উত্তরাঞ্চলে উন্নয়ন ছড়িয়ে দেবে।

কিন্তু কৃষ্ণা এই ব্যাপারে উদ্বিগ্ন এটি কেবল দক্ষিণাঞ্চলে সমস্যাগুলোকে অন্যত্র ছড়িয়ে দেবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আজ যখন আমরা দক্ষিণ বালিতে অতিরিক্ত পর্যটন দেখতে পাচ্ছি। তখন ভবিষ্যতে আমরা উত্তর বালিতেও অতিরিক্ত পর্যটন দেখতে পাব।’

জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থ হল এই বছর রেকর্ড বৃষ্টিপাত আরও ঘন ঘন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কারণ, উষ্ণ পরিবেশে বেশি আর্দ্রতা থাকে।

হেন্দ্রাওয়ান সরকারকে অবকাঠামোগত বিষয়গুলো, বিশেষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘যদি আমরা এটি ঠিক করতে না পারি, তাহলে আমরা আশঙ্কা করছি যে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে, যখন বর্ষাকাল তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে, তখন আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
গ্র্যাহার পটারকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দিল সুইডেন
ঝিনাইদহে এক আসামির যাবজ্জীবন
কলম্বিয়াকে মাদক উৎপাদনের অভিযোগে সাহায্য বন্ধ করবে যুক্তরাষ্ট্র : ট্রাম্প
রাজধানীতে ইতালি প্রবাসী প্রতারক প্রেমিক গ্রেফতার 
সল্ট-ব্রুকের ব্যাটিংয়ে সিরিজে লিড নিল ইংল্যান্ড
জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন
পটিয়া থেকে হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার
রাজনৈতিক অনৈক্যে দেশ গড়ার বড় সুযোগ নষ্ট হচ্ছে : মির্জা ফখরুল
হামাস ইসরাইলি ১৩তম জিম্মির মরদেহ হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছে
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন নিয়ে দোষারোপের রাজনীতি
১০