ঢাকা, ২১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশের কাঠ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও দ্বীপে বন উজাড়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদনে মঙ্গলবার এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে ইইউকে অবিলম্বে বন ধ্বংস সংক্রান্ত পণ্য নিষিদ্ধের আহ্বান জানানো হয়।
ইইউ গত মাসে ঘোষণা দেয়, বন ধ্বংস রোধে গৃহীত কঠোর আইন ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডিফরেস্টেশন রেগুলেশন’ (ইইউডিআর)-এর বাস্তবায়ন আরও এক বছর পিছিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
এর আগে, আইনটি ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ কার্যকর করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল সংস্থাটি। তখন পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এ উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইন্দোনেশিয়াসহ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলো এর বিরোধিতা করে।
‘আর্থসাইট’ ও ‘অরিগা নুসান্তারা’ নামের দুটি পরিবেশ সংস্থা যৌথভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তারা বোর্নিও দ্বীপের কাঠের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইন্দোনেশীয় কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো ইউরোপের বিভিন্ন ক্রেতার কাছে কাঠ রপ্তানি করছে। এই কাঠ রপ্তানির ফলে বন উজাড়ের আশংকা তৈরি হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই গবেষণাই প্রমাণ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিফরেস্টেশন রেগুলেশন এখনই কার্যকর করা জরুরি। এটি ইউরোপীয় ক্রেতাদের নিশ্চিত করবে যে তাদের কাঠের উৎস বন ধ্বংসের সঙ্গে যুক্ত। এতে ইউরোপ যে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে বন ধ্বংসের সঙ্গে যুক্ত নয় সেটিও নিশ্চিত হবে।
এটি ইইউ কাঠজাত পণ্য আমদানিক কোম্পানির জন্যও জরুরি সতর্কবার্তা। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানকে তাদের সরবরাহ চেইন সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে, তাদের আমদানিকৃত পণ্য বন ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার বন ধ্বংসে জড়িত ইউরোপীয় ক্রেতারা প্রধানত নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম ও জার্মানির প্রতিষ্ঠান। তারা ২০২৪ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে বাগানের মেঝে ও প্লাইউডসহ প্রায় ২৩ হাজার ঘনমিটার কাঠজাত পণ্য আমদানি করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে ডেকার হাউট, ইন্টারন্যাশনাল প্লাইউড বিএভি, সাইটন বিএভি, কুর্জ কেজি, ফেপকো ইন্টারন্যাশনাল ও ইমপ্যান জিএমবিএইচ। তবে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হয়নি প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিশ্বে বন ধ্বংসের হার সবচেয়ে বেশি এমন দেশগুলোর মধ্যে একটি ইন্দোনেশিয়া। সেখানে খনন, কৃষি ও কাঠ আহরণের নামে বহু প্রতিষ্ঠান প্রায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে এ কাজ করছে অভিযোগ রয়েছে।
বোর্নিও বিশ্বের অন্যতম বড় রেইনফরেস্ট অঞ্চলের আবাসস্থল। সেখানে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী যেমন ওরাংওটাং, লম্বা নাকের বানর, ক্লাউডেড লেপার্ড, পিগ-টেইলড মাকাক (শূকর সদৃশ লেজের মাকাক বানর), ফ্লাইং ফক্স বাদুড় ও বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গণ্ডার প্রজাতির বসবাস।
ইউরোপীয় কমিশন ইতোমধ্যে বন ধ্বংস প্রতিরোধে গৃহীত নতুন আইনের বাস্তবায়ন আরও এক বছর পেছানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তে পরিবেশবাদীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কারণ, এই আইনের আওতায় ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বন ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ার কথা ছিল।
যদিও এখন কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, আইনটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক অবকাঠামো এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। সেজন্য বাস্তবায়নে সময় লাগবে।