নেতানিয়াহুর সাথে মার্কিন রাষ্ট্রদূতদের সাক্ষাৎ

বাসস
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:১৪

ঢাকা, ২১ অক্টোবর, ২০২৫ (এএফপি): চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে গাজায় সহিংসতার মধ্যে মার্কিন-মধ্যস্থতায় ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফেলার হুমকির পর সোমবার মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষ রাষ্ট্রদূত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। 

জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

নেতানিয়াহুর মতে, ১৫৩ টন বোমা হামলা চালানো হয়েছে এবং হামাস যোদ্ধাদের যুদ্ধবিরতি ‘স্পষ্ট লঙ্ঘনের’ অভিযোগ করলে তারা অভিযোগ অস্বীকার করে।

উভয় পক্ষই জোর দিয়ে বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেছেন, এটি এখনও কার্যকর। তিনি চুক্তিতে মধ্যস্থতাকারী ছিলেন।

ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং উপদেষ্টা জামাতা জ্যারেড কুশনার সোমবার নেতানিয়াহুর সাথে দেখা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখপাত্র শোশ বেদরোসিয়ান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এই অঞ্চলের উন্নয়ন এবং আপডেট’ নিয়ে আলোচনার জন্য ট্রাম্পের দুই বিশেষ দূত নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করেছেন।

বেদরোসিয়ান আরও বলেছেন, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং তার স্ত্রীও কয়েক দিনের জন্য ইসরাইল সফর করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করবেন।

নেতানিয়াহু পরে ইসরাইলি সংসদকে বলেছেন, ভ্যান্স দু’টি বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার আসবেন। আমরা যে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি এবং আমাদের সামনে কূটনৈতিক সুযোগগুলো সরেজমিনে দেখার জন্য।

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠব এবং সুযোগগুলো কাজে লাগাব’।

- জিম্মি অবস্থা -

হামাস কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, শুধু রোববারই ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত হয়েছেন।

গাজার চারটি হাসপাতাল এএফপি’কে মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা হতাহতের খবর খতিয়ে দেখছে।

গাজায় মিডিয়ার সীমাবদ্ধতা এবং অনেক এলাকায় প্রবেশের অসুবিধার ফলে এএফপি সিভিল ডিফেন্স সংস্থা বা ইসরাইলি সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রদত্ত নিহতের সংখ্যা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারছে না।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের সৈন্যদের ওপর মারাত্মক হামলার প্রতিক্রিয়ায় বিমান হামলা চালানোর পর তারা রোববার দেরিতে ‘যুদ্ধবিরতি পুনর্নবীকরণ’ করেছে। তবে ‘যেকোনো লঙ্ঘনের কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে’।

হামাস আক্রমণের বিষয়ে অস্বীকার করেছে। হামাসের এক কর্মকর্তা ইসরাইলকে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার জন্য ‘অজুহাত’ তৈরির অভিযোগ করেছেন।

আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের মতে, যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখার বিষয়ে কাতারি এবং মিশরীয় মধ্যস্থতাকারীদের সাথে আলোচনার জন্য সোমবার হামাসের একটি প্রতিনিধিদল কায়রোতে ছিল।

সূত্রটি এএফপি’কে জানিয়েছে, বৈঠকে মিশর কর্তৃক আয়োজিত আসন্ন আন্তঃফিলিস্তিনি সংলাপের বিষয়েও আলোচনা করা হবে। যার লক্ষ্য ‘ফিলিস্তিনি দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করা’।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে, হামাস তাদের আটক ২০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে এবং যারা মারা গেছেন তাদের অবশিষ্ট মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

হামাস বলেছে, কিছু অবশিষ্টাংশ উদ্ধারের জন্য তাদের সময় এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। তবে তাদের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, তারা সোমবার সন্ধ্যায় আগের দিন উদ্ধার হওয়া আরেকজন জিম্মির দেহাবশেষ হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এটি হবে ১৩তম মৃত জিম্মি।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, জিম্মিদের দেহাবশেষের বিনিময়ে ইসরাইল এখন পর্যন্ত ১৫০ জন ফিলিস্তিনির মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে।

ইসরাইল কৌশলগত রাফাহ ক্রসিং পুনরায় চালু করার সাথে নিহতদের সকলের পুনরুদ্ধারের সম্পর্ক স্থাপন করেছে।

- ‘নতুন করে যুদ্ধ শুরু’ -

১০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছে।

এই চুক্তিতে গাজার ভবিষ্যতের জন্য একটি উচ্চাভিলাষী রোডম্যাপও প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু এটি দ্রুত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।

ফিলিস্তিনি প্রত্যক্ষদর্শীরা এএফপি’কে জানিয়েছেন, রোববার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, যা এখনও ইসরাইলের দখলে।

মধ্য গাজার আল-বুরেইজ ক্যাম্পের ২৯ বছর বয়সী আবদুল্লাহ আবু হাসানিন বলেছেন, ‘যেন যুদ্ধ আবার ফিরে এসেছে’। সেখানেও ইসরাইল হামলা চালিয়েছিল। 

রোববার ভ্যান্স উপসাগরীয় দেশগুলোকে হামাসকে নিরস্ত্র করার জন্য একটি ‘নিরাপত্তা-অবকাঠামো’ প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানিয়েছেন। যা ছিল শান্তি-চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ট্রাম্পের ২০-দফা পরিকল্পনার অধীনে ইসরাইলি বাহিনী তথাকথিত হলুদ রেখার বাইরে সরে গেছে। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে ইসরাইলি সেনারা এই অবস্থানগুলোর ‘কাছে’ আসা গাজার বাসিন্দাদের ওপর বেশ কয়েকবার গুলি চালিয়েছে।

ইয়েলো লাইনে প্রত্যাহারের ফলে ইসরাইলি বাহিনী গাজার প্রায় অর্ধেকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যার মধ্যে অঞ্চলটির সীমানাও রয়েছে। কিন্তু এর প্রধান শহরগুলো নয়।

হামাসের ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে ইসরাইলের ওপর আক্রমণের ফলে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় কমপক্ষে ৬৮,২১৬ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। 

জাতিসংঘের তথ্যমতে গাজায় ইসরাইলি হামলায় ২০ হাজার শিশু নিহত হয়েছে। 

ইসরাইলি বাহিনীর সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে এএফপি’র এক পরিসংখ্যান অনুসারে হামাসের ২০২৩ সালের হামলায় ১,২২১ জন নিহত হয়েছিল। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পুলিশের এএসপি পদে ৮০ কর্মকর্তার পদোন্নতি
শিক্ষা ব্যবস্থার পূর্ণ জাতীয়করণ করতে হবে : অধ্যাপক মুজিব
আগামীকাল জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা
আইএফআরএস ৯ সঠিকভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান আইসিএবির
ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮১৪
জবি’র ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হত্যা : বর্ষাসহ তিন জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য জিয়াউর রহমান ২% সুদে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়েছিলেন : মির্জা ফখরুল
কয়রা-পাইকগাছায় ১২ প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের দুয়ারে সাংবাদিক আনোয়ার আলদীন 
এএসপি হলেন ৬২ পুলিশ পরিদর্শক
বিশ্ব রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনাররা
১০