ঢাকা, ২২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : যুদ্ধবিরতি ও যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইসরাইল সফরকালে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স মঙ্গলবার গাজা যুদ্ধবিরতি বহাল থাকবে বলে 'গভীর আশাবাদ' ব্যক্ত করেছেন।
ইসরাইলের কিরিয়াত গ্যাট থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
হামাস গাজায় নিজেদের পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিরতি নিয়েছে বলে ইসরাইলের উদ্বেগ সত্ত্বেও, ভ্যান্স বলেছেন, মার্কিন-মধ্যস্থতা চুক্তির অধীনে ওয়াশিংটন গোষ্ঠীটিকে নিরস্ত্র করার জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে দেন যে যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে ব্যর্থ হলে এই অঞ্চলের মিত্র দেশগুলো হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য গাজায় হামলা করবে।
ইসরাইলের দক্ষিণ শহর করিয়াত গাটে এক সংবাদ সম্মেলনে ভ্যান্স বলেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি মিশন গাজা যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করছে।
‘গত সপ্তাহে আমরা যা দেখেছি তা আমাকে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার ব্যাপারে দারুণ আশাবাদী করে তুলেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, আজকের অবস্থান নিয়ে সকলের গর্বিত হওয়া উচিত। এর জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এর জন্য নিরন্তর পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান প্রয়োজন।’
ভ্যান্স বুধবার জেরুজালেমে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন।
এদিকে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, হামাস জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার ধ্বংসস্তূপের নিচে অবশিষ্ট মৃত ইসরাইলি জিম্মিদের খুঁজে বের করার জন্য তাদের সময় ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন।
রোববার, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। দুই ইসরাইলি সেনা নিহত হয়, যার ফলে প্রতিশোধমূলক বিমান হামলার সূত্রপাত হয়।
ভ্যান্সের আগমনের আগে, ট্রাম্প হামাসকে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ও মধ্যপ্রাচ্যের আশেপাশের অঞ্চলগুলোয় আমাদের এখনকার অনেক মহান মিত্র আমাকে জানিয়েছে যে, যদি হামাস খারাপ আচরণ করতে থাকে তাহলে আমার অনুরোধে, তারা ভারী বাহিনী নিয়ে গাজায় প্রবেশ করার এবং 'আমাদের (এসআইসি) হামাসকে সোজা করার' সুযোগকে স্বাগত জানাবে।
ইসরাইলের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি যৌথ মার্কিন-ইসরাইলি বেসামরিক-সামরিক সমন্বয় কেন্দ্র খোলার সময়, ভ্যান্স এটিকে সমর্থন করেছেন, কিন্তু একটি দৃঢ় সময়সীমার জন্য ইসরাইলি চাপকে উপেক্ষা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি এমন কিছু করতে যাচ্ছি না যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এখনো পর্যন্ত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, যার জন্য একটি স্পষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, কারণ এই জিনিসগুলোর অনেক কিছুই কঠিন।’
ভ্যান্স আরো বলেন, গাজায় মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হবে না, তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমন্বয়ে অংশ নেবে।
বিতর্কের একটি মূল বিষয় হচ্ছে হামাসের ভবিষ্যত। যুদ্ধবিরতি চুক্তি গাজায় এই গোষ্ঠীর ভূমিকা বাতিল করে দিয়েছে।
ইসরাইল হামাসকে যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করেছে, যদিও গোষ্ঠীটি বারবার বলেছে যে তারা চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কিন্তু তারা নিরস্ত্রীকরণের ধারণাকে প্রতিহত করেছে এবং যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার রাস্তায় তার নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষ করছে।
রোববার গাজার দক্ষিণ শহর রাফায় ভয়াবহ সহিংসতায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে দলটি।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে ইসরাইল তার সৈন্যদের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় তীব্র বোমা হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংকট গ্রুপের একজন সিনিয়র বিশ্লেষক মাইরাভ জোনসেইন বলেন, ‘গাজাকে আরো ধ্বংস করা থেকে ইসরাইলকে থামাতে পারেন একমাত্র ট্রাম্প।’
তিনি এএফপিকে বলেন, ‘ট্রাম্পকে খুশি করার জন্য নেতানিয়াহু কিছু কথা বলছেন, কিন্তু তিনি কার্যত তা করছেন না এবং যুদ্ধবিরতি খুবই ভঙ্গুর।’ জোনসেইন আরো বলেন, হামাসের ভবিষ্যৎ নিয়ে ইসরাইলিরা এখোনো উদ্বিগ্ন।
সংঘর্ষ সত্ত্বেও, হামাস তাদের কাছে থাকা অল্প সংখ্যক জিম্মির দেহাবশেষ হস্তান্তর করা অব্যাহত রেখেছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী মঙ্গলবার জানায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে রেড ক্রস গাজায় আটক জিম্মিদের দেহাবশেষ সম্বলিত দুটি কফিন তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছে।
এর আগে, হামাস চুক্তির অধীনে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া ২৮ জন জিম্মি মৃতদেহের মধ্যে ১৩ জনকে মুক্তি দিয়েছে, কিন্তু হামাস বলেছে যে অঞ্চলে ধ্বংসের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণে অনুসন্ধান ব্যাহত হচ্ছে।
রেডক্রস জানিয়েছে যে চুক্তির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার তারা ১৫ জন ফিলিস্তিনির মৃতদেহ ইসরাইল থেকে গাজায় স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেছে, যার ফলে মোট মৃতদেহের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৫।