
ঢাকা, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বেইজিংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে বিরল খনিজ উপাদান নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে জার্মানি জানিয়েছে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফর স্থগিত করা হয়েছে।
বার্লিন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র শুক্রবার বলেন, ‘চীনা পক্ষ শেষ পর্যন্ত শুধু চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময় নিশ্চিত করতে পেরেছে। অন্য কোনো অতিরিক্ত বৈঠকের সময় নিশ্চিত করতে পারেনি। এটি আমরা অত্যন্ত দুঃখজনক মনে করছি।’
মুখপাত্র জানান, বার্লিনের পক্ষ থেকে সফরকালে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করার পরিকল্পনা ছিল, যার মধ্যে বাণিজ্যিক সীমাবদ্ধতা—বিশেষ করে রেয়ার আর্থ ও সেমিকন্ডাক্টর ইস্যু এবং ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ওপর চীনের প্রভাব বিস্তারের ইস্যু ছিল প্রধান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের স্বার্থে চীনের উচিত ইউক্রেনে ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা। রাশিয়ার ওপর এতটা প্রভাব চীনের মতো অন্য কোনো দেশের নেই।’
মুখপাত্র জানান, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল শিগগিরই চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলবেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ইস্যুতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
চীন চলতি মাসে রেয়ার আর্থ প্রযুক্তির রপ্তানিতে নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে, যা গাড়ি, ইলেকট্রনিকস ও প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য অপরিহার্য চুম্বক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ইইউ বলেছে, এসব সীমাবদ্ধতার ফলে ইউরোপের কিছু কোম্পানিকে উৎপাদন বন্ধ করতে হয়েছে এবং তা অর্থনৈতিক ক্ষতি বয়ে এনেছে।
এ ছাড়া, নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক চীনা মালিকানাধীন চিপ নির্মাতা কোম্পানি নেক্সপেরিয়ার ওপর ডাচ সরকারের নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নতুন এক বিরোধ সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনার পরই বেইজিং কোম্পানিটির কিছু পণ্যের চীন থেকে রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে, যা ইউরোপে গাড়ি নির্মাতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চিপ সংকটের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
জার্মান অর্থমন্ত্রী ক্যাথরিনা রাইখে বৃহস্পতিবার বলেন, বার্লিন চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে যাতে চিপ রপ্তানি পুনরায় শুরু করা যায়।
ইউক্রেন সফরকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে এখনো সুরাহা হয়নি, তবে আমরা এ বিষয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
চীন ও জার্মানি যথাক্রমে বিশ্বের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। এ দুটি দেশ দীর্ঘদিন ধরে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিংয়ের ‘অন্যায্য বাণিজ্যনীতি’ ও মানবাধিকার ইস্যুসহ বিভিন্ন কারণে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।