
ঢাকা, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মাইলি রোববার মধ্যবর্তী নির্বাচনে তার দলের অসামান্য জয়কে দেশের জন্য একটি দিক পরিবর্তন হিসেবে অভিহিত করে, অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার তার এজেন্ডাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
মাইলির দল লা লিবার্তাদ আভাঞ্জা (এলএলএ) কংগ্রেসের সদস্যদের জন্য প্রদত্ত ৪০ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
এটি উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীদের ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা নির্বাচনটিতে বিরোধীদের ভোটের চেয়ে অনেক বেশি।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
৫৫ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট বুয়েনস আয়রেসে একটি বিজয় উৎসবে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আজ আমরা একটি সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছি। আজ থেকে একটি মহান আর্জেন্টিনার নির্মাণ শুরু হচ্ছে।’
তিনি সংস্কারের পথে অব্যাহত থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যাকে তিনি ‘আর্জেন্টিনার ইতিহাসের সবচেয়ে সংস্কারবাদী কংগ্রেস’ বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
রোববার চেম্বার অফ ডেপুটিজের অর্ধেক আসন ও সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনের জন্য ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
মাইলি বলেন, এলএলএ’র আসন সংখ্যা তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। নিম্নকক্ষ চেম্বার অফ ডেপুটিজে দলটি ১০১টি আসন জিতেছে, যা ৩৭টি থেকে বেশি ও সিনেটে ২০টি থেকে বেশি।
যুদ্ধোত্তর ইতিহাসের বেশিরভাগ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা মধ্য-বাম পেরোনিস্ট আন্দোলন ৩১ দশমিক ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
মিলেই বিরোধী দলের পতনের কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘পিছনে যাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি আর্জেন্টাইনরা এগিয়ে যেতে চান।’
দুই বছর আগে দীর্ঘদিন ধরে ধুকতে থাকা আর্জেন্টিনার অর্থনীতিকে কঠোর সংস্কারের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই নির্বাচন ছিল মাইলির সমর্থনের প্রথম জাতীয় পরীক্ষা।
ভোটের আগে মাইলিকে তার ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা চাইতে বাধ্য করেছিল।
ওয়াশিংটন ৪০ বিলিয়ন ডলারের ব্যতিক্রমী সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে, এই সহায়তার সঙ্গে ট্রাম্প আর্জেন্টাইনদের সতর্কও করে দিয়েছিলেন যে নির্বাচনে যদি মাইলি জয়ী না হন, তবে, তিনি এই সহায়তার ব্যাপারে ‘উদার’ হবেন না।
এলএলএ নির্বাচনী অনুষ্ঠানে মাইলির শত শত সমর্থক উল্লাস, আলিঙ্গন, স্লোগান ও এমনকি চোখে আনন্দ অশ্রুর মাধ্যমে ফলাফল উদযাপন করেন।
৩৮ বছর বয়সী মার্কেটিং পরামর্শদাতা ফ্যাকুন্ডো ক্যাম্পোস এএফপিকে বলেন, ‘আমি খুব খুশি ও উত্তেজিত। আমি এত বড় বিজয় আশা করিনি।
তিনি ‘গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জয়ী শেষ গোলের আনন্দের’ সঙ্গে এই আনন্দের তুলনা করেছেন।
৪৫ বছর বয়সী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মারিয়া জেসুস গ্যালান বলেন, মাইলির সরকারের এখনও ‘বেশকিছু উন্নতির জায়গা’
থাকলেও, ‘এর একটি দুর্দান্ত ভবিষ্যত রয়েছে।’
নির্বাচনের আগে, বেশ কয়েকজন ভোটার এএফপিকে মাইলির নেতৃত্বের প্রতি তাদের হতাশার কথা বলেছিলেন, বিশেষ করে তার দলের সদস্যদের দুর্নীতির কেলেঙ্কারি সম্পর্কে।
কিন্তু তারা পেরোনিস্ট আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতা করে চলেছে, যার নেতা সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা কির্চনার।
ক্রিস্টিনা দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।
৬৭ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি চার দশকের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনে সর্বনিম্ন, যা সমগ্র রাজনৈতিক শ্রেণীর প্রতি জনগণের মোহভঙ্গের প্রতিফলন ঘটায়।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ফলাফল ছিল বুয়েনস আইরেস প্রদেশে। এটি পেরোনিস্টদের একটি শক্ত ঘাঁটি। এখানে গত মাসের স্থানীয় নির্বাচনে পেরোনিস্টদের কাছে পরাজয়ের পর এলএলএ আবারও সাফল্যের পথে ফিরে এসেছে।
বুয়েনস আইরেসে ভোটদানকারী ৬৯ বছর বয়সী পেনশনভোগী আদ্রিয়ানা কোটোনিও এএফপিকে জানান, তিনি মাইলির দলকে সমর্থন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে এটি সর্বোত্তম বিকল্প। আমি এ ব্যাপারে স্পষ্ট যে আমি কাকে বাদ দিতে চাই।’
৫৫ বছর বয়সী সাবেক টিভি ব্যক্তিত্ব মিলেই ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে হাজার হাজার সরকারি চাকরি ছাঁটাই করেছেন, সরকারি কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পেনশনের খরচ কমিয়েছেন এবং একটি বড় ধরনের নিয়ন্ত্রণমুক্তি অভিযান পরিচালনা করেছেন।
তার সংস্কারগুলোকে প্রাথমিকভাবে লাখ লাখ আর্জেন্টাইনকে দারিদ্র্যের মধ্যে নিমজ্জিত করার জন্য দায়ী করা হয়েছিল। তবে এই সংস্কারগুলোই মুদ্রাস্ফীতি দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে এনেছিল, যা অনেকের জন্য স্বস্তির কারণ।
যদিও সংস্কারগুলোর কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ভোগ ও উৎপাদন স্থবির হয়ে পড়ে।
অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ ও মাইলির প্রতি সমর্থনের কারণে বিনিয়োগকারীরা গত মাসে আর্জেন্টিনার পেসো পরিত্যাগ করতে শুরু করেছিলেন। তবে ট্রাম্প তার নিকটতম ল্যাটিন আমেরিকান মিত্রকে শক্তিশালী করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
মার্কিন ট্রেজারি সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাজারে বেশ কয়েকবার হস্তক্ষেপ করেছে এবং এটিকে টিকে থাকতে সাহায্য করার জন্য পেসো কিনেছে।