
ঢাকা, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : চলমান যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও মঙ্গলবার গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলায় ৩০ জন নিহত হয়েছে। ইসরাইলের সেনাবাহিনী হামাসের বিরুদ্ধে তাদের সেনার ওপর হামলা এবং মার্কিন-মধ্যস্থতাকৃত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে এ হামলা চালায়।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে গাজা সিটি থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
হামাসের অধীনে উদ্ধারকারী বাহিনী হিসেবে কাজ করা সংস্থাটির একজন মুখপাত্র জানান, গাজার বেশ ক’টি অংশে হামলায় কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছে।
তবে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, মঙ্গলবারের ‘সংঘর্ষ’ সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি বহাল রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, নেতানিয়াহু গাজায় ‘শক্তিশালী হামলার’ নির্দেশ দিয়েছেন।
তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ গাজায় ইসরাইলি সেনাদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ করেছেন।
কাটজ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গাজায় আইডিএফ (ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী)-এর সৈন্যদের ওপর হামাসের আজকের হামলা একটি উজ্জ্বল লাল রেখা অতিক্রম করার সামিল, যার জবাব আইডিএফ অত্যন্ত শক্তির সঙ্গে দেবে।’
যদিও কাটজ বলেননি যে সৈন্যদের ওপর ঠিক কোথায় হামলা চালানো হয়েছে। হামাস বলেছে, রাফায় গুলি চালানোর ঘটনার সঙ্গে তাদের যোদ্ধাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
ফক্স নিউজে সম্প্রচারিত ও হোয়াইট হাউসের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা মন্তব্যে, ভ্যান্স বলেন, যুদ্ধবিরতি বহাল রয়েছে।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, তবে ‘এর অর্থ এই নয় যে ছোটখাটো সংঘর্ষ হবে না।’ তিনি গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিকে আরো শক্তিশালী করতে ইসরাইলে ছুটে আসা বেশ ক’জন শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তার একজন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা জানতে পারি যে হামাস বা গাজার অভ্যন্তরে অন্য কেউ একজন আইডিএফ সৈন্যের হামলা করেছে। ইসরাইলিরা এর প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে আমরা মনে করি। তবে, আমি মনে করি, প্রেসিডেন্টের শান্তি বজায় থাকবে।’
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে যে, কমপক্ষে তিনটি হামলা চালানো হয়েছে। অন্যদিকে অঞ্চলটির প্রধান হাসপাতাল আল-শিফা জানিয়েছে যে একটি তাদের পেছন দিকের উঠোনে আঘাত করেছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, একটি বিমান হামলায় তাদের একটি গাড়িতে আঘাত করলে পাঁচজন নিহত হয়েছে।
হামাস মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে যে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে ইসরাইলের দাবি অনুসারে আরো একজন জিম্মির মৃতদেহ হস্তান্তর করবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর হামলাকালে হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করে।
এদিকে, নিহত জিম্মিদের শেষ অবশিষ্ট মৃতদেহ নিয়ে বিতর্ক যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের হুমকি দিয়েছে।
ইসরাইল হামাসের ওপর তাদের ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানানোর অভিযোগ করেছে, তবে ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীটি বলেছে যে গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দেহাবশেষ খুঁজে পেতে সময় লাগবে।
হামাস পরে বলেছে যে তারা মঙ্গলবারের হস্তান্তর বিলম্বিত করবে। এটি আরো বলেছে যে ‘ইসরাইলি তর্কবিতর্ক অনুসন্ধান, খনন এবং মৃতদেহ উদ্ধারে বাধা সৃষ্টি করবে।’
টেলিগ্রামে আরো একটি বিবৃতিতে, হামাসের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে যে তারা মঙ্গলবার দুই জিম্মির মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছে।
তবে ঠিক কখন তাদের হস্তান্তর করা হবে তা বলা হয়নি।
সোমবার হামাস পূর্বে উদ্ধারকৃত একজন বন্দির আংশিক দেহাবশেষ ফিরিয়ে দেওয়ার পর ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়ে। ইসরাইল একে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন বলে অভিযোগ তোলে।
হামাস জানায়, ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে ফেরত দিতে সম্মত হওয়া ২৮ জন জিম্মি মৃতদেহের মধ্যে এই দেহাবশেষ ১৬ তম।
কিন্তু নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, ইসরাইলি ফরেনসিক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে হামাস আসলে একজন জিম্মির আংশিক দেহাবশেষ হস্তান্তর করেছে যার দেহ ইতোমধ্যেই প্রায় দুই বছর আগে ইসরাইলে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।
ইসরাইলি সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদ্রোসিয়ান হামাসকে দেহাবশেষ ফেরত না দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আজ আপনাদের নিশ্চিত করতে পারি যে হামাস গতকাল মাটিতে একটি গর্ত খুঁড়েছে, আংশিক দেহাবশেষ এর ভেতরে রেখে দিয়েছে, মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়েছে এবং রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করেছে।’
হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম সরকারকে ‘এই লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছে এবং হামাসের বিরুদ্ধে নিখোঁজ জিম্মিদের অবস্থান না জানানোর অভিযোগ করেছে।
হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি যুক্তি দেখান যে দলটি অবশিষ্ট মৃতদেহগুলো কোথায় তা জানতো, তবে দুই বছরের যুদ্ধের সময় ইসরাইলের বোমাবর্ষণের ফলে স্থানগুলো এখন অচেনা হয়ে পড়েছে।
তিনি এএফপিকে বলেন। ‘ইসরাইলি বন্দিদের মৃতদেহ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের হস্তান্তর করতে দলটি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হওয়া ২০ জন জীবিত জিম্মিকে হামাস ইতোমধ্যেই ফিরিয়ে দিয়েছে।
ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপির হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ইসরাইলি পক্ষের ১ হাজার ২২১ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, গাজায় ইসরাইলের পরবর্তী আক্রমণে কমপক্ষে ৬৮ হাজার ৫৩১ জন নিহত হয়।
যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো মৃতদেহ পাওয়া যাওয়ায় মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গাজার মাটিতে, ৬০ বছর বয়সী আব্দুল-হায় আল-হাজ আহমেদ এএফপিকে বলেন, হামাসের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের কারণে তিনি ভয় পাচ্ছেন যে যুদ্ধ আবার শুরু হবে।
তিনি বলেন, ‘এখন তারা হামাসকে স্থবিরতার জন্য অভিযুক্ত করছে এবং এটি নতুন করে উত্তেজনা ও যুদ্ধের একটি অজুহাত।’ তিনি আরো বলেন, "আমরা বিশ্রাম নিতে চাই। আমার বিশ্বাস যুদ্ধ আবার ফিরে আসবে।’