
ঢাকা, ৫ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সুদানের কর্দোফান অঞ্চলের প্রধান শহর আল-ওবাইদে মৃত ব্যক্তির জানাযায় এক হামলায় ৪০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
হামলাটি কবে ঘটেছে বা কারা এর পেছনে রয়েছে তা নির্দিষ্ট করে জানায়নি জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দপ্তর ওসিএইচএ। তবে সংস্থাটি জানিয়েছে, কর্দোফান অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে।
পোর্ট সুদান থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
২০২৩ সাল থেকে সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধে ইতোমধ্যে লক্ষাধিক মানুষ নিহত এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সম্প্রতি এই সংঘাত নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে, যা আরও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) ২০২৩ সাল থেকে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। তারা কর্দোফানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর আগে তারা পশ্চিম দারফুর অঞ্চলের সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি আল-ফাশার দখল করে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় সংস্থা (ওসিএইচএ) জানায়, স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, গতকাল উত্তর কর্দোফান রাজ্যের রাজধানী আল-ওবাইদে একটি জানাযায় হামলায় অন্তত ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
সংস্থাটি সকল পক্ষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে অনুরোধ করেছে।
আল-ফাশার থেকে পালিয়ে আসা মানুষজন আরএসএফ-এর কাছে ধর্ষিত হওয়ার ঘটনাসহ ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। চার সন্তানের জননী আমিরা আল-ফাশার থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পশ্চিমে তাওইলা নামক একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, এই ধর্ষণগুলো ছিল সংঘবদ্ধ ধর্ষণ।
প্রকাশ্যে গণধর্ষণ, সবার সামনে ধর্ষণ এবং কেউ তা থামাতে পারেনি।
চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী সংস্থা ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’(এমএসএফ) জানায়, গত বসন্তে আরএসএফ-এর জমজম শিবিরে হামলার পর তাওইলায় তাদের টিমের কাছে তিনশ’রও বেশি নারী যৌন সহিংসতার শিকার ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন। ওই হামলায় ৩ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
আমিরা বলেন, ‘ঘুমিয়ে থাকলেও তারা এসে ধর্ষণ করত।’ অ্যাভাজ নামক একটি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ওয়েবিনারে তিন ছদ্মনামে এই বক্তব্য তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি, যারা টাকা দিতে পারেনি, তাদের মেয়েদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা বলেছে, তুমি যেহেতু টাকা দিতে পারো না, আমরা মেয়েদের নিয়ে যাব। অল্প বয়সী মেয়ে থাকলে তারা সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যেত।’
আল-ফাশার পতনের ফলে দারফুর অঞ্চলের পাঁচটি রাজ্য রাজধানীর সবগুলোই আধাসামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।ফলে সুদানে কার্যত পূর্বুপশ্চিমে বিভক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
আরএসএফ এখন দারফুর এবং দক্ষিণের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। আর সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে উত্তর, পূর্ব এবং নীল ও লোহিত সাগর ঘেঁষা মধ্যাঞ্চল।
জাতিসংঘ আরএসএফকে অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অভিযুক্ত করেছে ।তবে আমিরাত বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অন্যদিকে পর্যবেক্ষকদের মতে, সুদানি সেনাবাহিনী মিশর, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং ইরানের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছে।
মঙ্গলবার সেনাবাহিনী-সমর্থিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের বৈঠকের পর সেনাবাহিনী আরএসএফ-এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে হাসান কাবরুন বলেন, ‘শান্তি অর্জনে প্রচেষ্টা ও প্রস্তাবের জন্য আমরা ট্রাম্প প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুদানি জনগণের যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে। যুদ্ধের প্রস্তুতি আমাদের বৈধ জাতীয় অধিকার।’
যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই এই সংঘাত শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হোক, যেমনটা আমরা অনেক ক্ষেত্রেই চেয়েছি, কিন্তু বাস্তবতা হলো—বর্তমানে ওই দেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল।’
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মিশর, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে মিলে শান্তিচুক্তি অর্জনে ‘সক্রিয়ভাবে জড়িত’ রয়েছে।
মঙ্গলবার কাতারে এক ফোরামে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে আলোচনার টেবিলে আসতে হবে, এখনই এই সহিংসতার অবসান ঘটাতে হবে।’