বিরল খনিজে চীনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ

বাসস
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৫৬
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : প্রাকৃতিক খনিজ খনন থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্ভাবন পর্যন্ত বিরল খনিজ শিল্পে চীনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে দেশটিকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা এনে দিয়েছে।

খনিজের ওপর চীনের এই একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কয়েক দশক ধরে বেইজিংয়ের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফসল। 

বেইজিং থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

আগামী বছরগুলোতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিরল খনিজের ১৭টি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে পশ্চিমা দেশগুলোর বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে।

এই বিরল খনিজগুলো প্রতিরক্ষা খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো যুদ্ধ বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র নির্দেশনা ব্যবস্থা ও রাডার প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা হয়। 

এছাড়াও স্মার্টফোন, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অটোমোবাইলসহ দৈনন্দিন বিভিন্ন পণ্যে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।

এএফপি চলতি মাসেই চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় গনঝাও খনি অঞ্চল পরিদর্শন করেছে। এই অঞ্চলে ইট্রিয়াম ও টার্বিয়ামের মতো ‘ভারী’ বিরল খনিজ উত্তোলন করা হয়। ওই সময় সেখানে ব্যাপক খনন কার্যক্রম দেখা গেছে।

চীনে এ গোপন শিল্পে গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার খুব কমই দেওয়া হয়। 
এএফপি সাংবাদিকরা একটি বিরল খনিজ খনি থেকে ডজনখানেক ট্রাক আসা-যাওয়া করতে দেখেছেন। পাশাপাশি কয়েকটি ব্যস্ত প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রও চোখে পড়ে।

চীনের দু’টি বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিরল খনিজ কোম্পানির একটি হলো ‘চায়না রেয়ার আর্থ গ্রুপ’। গনঝাওতে তাদের জন্য বিশাল নতুন সদর দফতর নির্মাণ করা হচ্ছে।

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রযুক্তিগত পণ্যে এ সব খনিজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

ইএসএসইসি বিজনেস স্কুলের অর্থনীতি প্রভাষক হেরন লিম এএফপিকে জানান, এ বছরের চ্যালেঞ্জগুলো ‘বেশ কয়েকটি দেশকে বিরল খনিজ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ বাড়ানোর দিকে নজর দিতে উৎসাহিত করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদী সুফল দিতে পারে।’

অক্টোবরের শুরুতে চীন এই খাতে ব্যাপক রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে, তা বিশ্বব্যাপী উৎপাদন খাতে বড় ধরনের ধাক্কা দেয়।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার পর থেকে বেইজিংয়ের সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়েছে, তার ওপর এই বিধিনিষেধ ওয়াশিংটনে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

গত মাসের শেষের দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এক উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে, ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং চলমান শুল্ক যুদ্ধ এক বছরের জন্য স্থগিত করতে সম্মত হয়েছেন।

“এই চুক্তি—যা অন্তত সাময়িকভাবে বিরল মৃত্তিকা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সরবরাহ নিশ্চিত করে, তবে এর পাশাপাশি কার্যত এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞাগুলোকেও নিষ্ক্রিয় করেছে এবং একে ব্যাপকভাবে বেইজিংয়ের জন্য এক ধরনের সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

চুক্তি অনুযায়ী বিরল খনিজ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সরবরাহ অন্তত সাময়িকভাবে নিশ্চিয়তা থাকবে। 

এতে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কযুদ্ধে কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও, ব্যাপকভাবে এটিকে বেইজিংয়ের জয় হিসেবে দেখা হয়।

হেরন লিম এএফপিকে বলেন, ‘এই সাময়িক চুক্তি সত্ত্বেও, বিরল খনিজগুলো ভবিষ্যতে চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনার টেবিলে ধরে রাখতে চীন আরও বাণিজ্যিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।’

ওয়াশিংটন ও তার মিত্ররা এখন বিকল্প খনি এবং প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দ্রুত কাজ করছে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে বহু বছর সময় লাগবে।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় বিরল খনিজ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াকরণের যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে ছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন পাস খনি তখন বৈশ্বিক সরবরাহের বড় অংশের উৎস ছিল।

মস্কোর সঙ্গে উত্তেজনা কমার পর এবং বিরল খনিজ শিল্পের পরিবেশগত ক্ষতি সামনে আসায়, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি বিদেশের সস্তা শ্রম ও  অন্যান্য প্রণোদনার সুবিধার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে ধীরে ধীরে বিদেশ থেকে খনিজ আমদানি করা শুরু করে।

বর্তমানে, চীন বিশ্বের মোট বিরল খনিজ খননের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করে।

ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, বিশ্বে এই মৌলগুলোর বৃহত্তম প্রাকৃতিক মজুত রয়েছে চীনে।

এ বছরের বিশ্লেষণ দেখায় যে বিশ্বব্যাপী মোট প্রক্রিয়াকরণের প্রায় ৯০ শতাংশই চীনের দখলে রয়েছে।

এছাড়াও, পেটেন্টে শক্ত অবস্থান আর প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তির রপ্তানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চীন নিশ্চিত করছে, এ জ্ঞান যেন দেশের বাইরে না যায়।

বিএমআই-এর পণ্য বিশ্লেষক অ্যামেলিয়া হেইন্স এই মাসে এক সেমিনারে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরল খনিজ আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, যা গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোর জন্য একটি বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।’

চীনকে বাদ দিয়ে উত্তোলন ও প্রক্রিয়াকরণের বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ওয়াশিংটন তার মিত্রদের সঙ্গে কাজ করছে।

গত মাসে ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে বিরল খনিজ খাতে ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে চুক্তি করেছেন। কারণ অস্ট্রেলিয়াতেও বিশাল ভূখণ্ডজুড়ে ব্যাপক বিরল খনিজ সম্পদ রয়েছে।

এছাড়া, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জাপান, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গেও গত মাসে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ খাত সংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

এ বছর প্রচুর আলোচনা এবং শিরোনাম তৈরি হলেও, ওয়াশিংটন বহু বছর ধরেই বিরল খনিজ সমস্যার কথা জানে।

২০১০ সালে, টোকিওর সঙ্গে একটি সামুদ্রিক সীমান্ত বিরোধের জেরে বেইজিং জাপানে খনিজ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনার মাধ্যমেই বিরল খনিজ খাতে চীনের নিয়ন্ত্রণের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ঘটনাটি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনকে কৌশলগত খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি আগ্রহী করে তোলে।

তবে, ১৫ বছর পরও চীনই বিরল খনিজ খাতে প্রধান শক্তি হিসেবে রয়ে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
কুমিল্লায় তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণ  
চট্টগ্রামে দুদিনব্যাপী প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
পিরোজপুরে দুর্যোগে করণীয় বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মশালা
নিয়ম লঙ্ঘনকারী সার ডিলারদের বাদ দেয়া হবে: কৃষি উপদেষ্টা
এয়ারক্রাফট সংযোজনের সঙ্গে বাড়ছে পাইলট ও ইঞ্জিনিয়ার চাহিদা : চুয়েট ভিসি
ফেনীতে জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রদর্শনী
তারুণ্যের উৎসব দেশের তরুণদের উজ্জীবিত করেছে : সাগর
বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
আগামীকাল শহীদ ডা. মিলন দিবস
হাসিনার প্রত্যর্পণে দিল্লির জবাবের অপেক্ষায় ঢাকা
১০