বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ ভেঙে জুলাইকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ দেওয়া : গালিব

বাসস
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৪:২৩ আপডেট: : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৭:৫৮
আসাদুল্লাহ আল গালিব। ছবি : ফেসবুক

মো. তানভীর হাসান

সিলেট (শাবিপ্রবি), ১৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : সিলেটে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম কারিগর ছিলেন আসাদুল্লাহ আল গালিব। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) রসায়ন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরুর পরপরই গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পান এবং আন্দোলনের সামগ্রিক দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। গালিবের নেতৃত্বে সিলেট শহরের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত সভা, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। আর এসব কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-জনতা অংশ নেন। রংপুর বিভাগে জন্ম নেওয়া এই তরুণ বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) হিসেবেও সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তার মতে, আন্দোলনটা কেবল একটা ন্যায্য দাবির ভিত্তি ছিল না, বরং এটি ছিল তরুণদের সচেতন ও সংগঠিত হওয়ার একটি ঐতিহাসিক উদাহরণ। কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গালিব সে সময়ের অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তার মতামত তুলে ধরেছেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসসের ‘জুলাই জাগরণ’এর মুখোমুখি হয়েছেন আসাদুল্লাহ আল গালিব।সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বাসসের প্রতিনিধি মো. তানভীর হাসান।

বাসস : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূল প্রেক্ষাপট কী ছিল? আন্দোলন শুরুর পেছনে কী কী কারণ ছিল?

আসাদুল্লাহ আল গালিব : আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৭ বছরের শাসনামলে দেশে এক ভয়ংকর নিপীড়নের চিত্র তৈরি হয়। গুম, খুন, দমন-পীড়ন, বাকস্বাধীনতার হরণ, মুদ্রাস্ফীতির ভয়াবহতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, বেকারত্বের করালগ্রাস— সবকিছু মিলে সাধারণ মানুষ ভেতরে ভেতরে ক্ষোভে ফুঁসছিল। রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার যেন নাগরিক জীবনের প্রতিটি স্তরে বিষ ছড়িয়ে দিয়েছিল। এরই মাঝে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপত্র বাতিল করে আদালত, যা তরুণ সমাজের চাকরি পাওয়ার বুকভরা আশাকে গুঁড়িয়ে দেয়। সেই রায়ের এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে  শিক্ষার্থীরা আবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হন। সংকট এতটাই গভীর ছিল যে তরুণদের সামনে আর কোনো বিকল্প পথ খোলা ছিল না। জুলাই আন্দোলন নিছক কোটার দাবির আন্দোলন ছিলো না— এটি ছিল এক প্রজন্মের আর্তনাদ, প্রতিরোধ ও পুনর্জাগরণের প্রতিচ্ছবি। এর প্রতিটি পদক্ষেপে ছিল আত্মত্যাগ, প্রত্যয় ও মানুষের অমিত শক্তির নিঃশব্দ বিস্ফোরণ।

বাসস : আন্দোলন শুরুর পরিকল্পনা কীভাবে হয়েছিল? কে বা কারা ছিলেন মূল উদ্যোক্তা?

আসাদুল্লাহ আল গালিব : পরিপত্র বাতিলের ঘোষণার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মাঠে নেমে প্রতিবাদ করা তখন খুব সহজ ছিল না— কারণ ক্ষমতাসীনদের বর্বর দমন-পীড়ন চালু ছিল পুরো মাত্রায়। এমন এক কঠিন সময়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাবি, শাবিপ্রবি, রাবি, চবি প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সাহসী শিক্ষার্থী নির্যাতনসহ রাষ্ট্রের সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জারি রেখেছিলো। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে নতুন তৈরি হওয়া গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি তখন ঢাকায় সবচেয়ে সক্রিয় ছাত্র সংগঠন হিসেবে মাঠে লড়াই-সংগ্রাম করে আসছিলো। গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতাকর্মীরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীসহ সকল সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টায় ছিলেন।

২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিলের রায়ের মধ্যে দিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের এক করে তোলার সুযোগ পাই। কোটা বিরোধী আন্দোলনের জন্য ৬ জুন ঢাবি সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে শিক্ষার্থীদের সমবেত হওয়ার জন্য অনলাইনে আহ্বান জানানো হয়। সেখানে সব মতের ছাত্রদের একত্রিত রাখার জন্য ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে এ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আন্দোলনে প্রায় সব ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ থাকলেও আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতাকর্মীরা। 

বাসস : সমন্বয়কের ভূমিকা কী ছিল আন্দোলনের সময়?

আসাদুল্লাহ আল গালিব : সমন্বয়করা ছিলেন আন্দোলনের পেছনের চালিকাশক্তি। কোনো ব্যক্তিকে সামনে না রেখে সম্মিলিত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়াস ছিল আমাদের। কারণ, ইতিহাস বলে— আন্দোলনের ব্যক্তি কেন্দ্রিক নেতৃত্বকে ট্যাগ দিয়ে দমন করা খুব সহজ। তাই আমরা এমন এক টিম গঠন করি যারা সারা দেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে কর্মসূচি ঠিক করতো, সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো এবং সার্বিকভাবে আন্দোলনের ছন্দ রক্ষা করতো।

বাসস : আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া কীভাবে পরিচালিত হতো?

আসাদুল্লাহ আল গালিব : আমরা সারাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত অনলাইনে যুক্ত হয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতাম। কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এর বাহিরেও আন্দোলনের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের, বিশেষ করে যারা সরাসরি সামনে থাকতো না তাদের সাথেও আলোচনা হতো, তারাও পরামর্শ দিতেন। ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের আগে এই যোগাযোগ সহজ ছিল। কিন্তু ব্ল্যাকআউটের পর থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঢাকার বাহিরের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ কমে আসে। আন্দোলনের মূলশক্তি হিসেবে কাজ করা টিমের যারা জেলের বাহিরে ছিল তারা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে কর্মসূচি জানিয়ে দিতে থাকে। সেই অনুযায়ী দেশব্যাপী স্থানীয় নেতৃত্ব মাঠে কর্মসূচি বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখে। ১৭ জুলাই থেকেই কোটা আন্দোলন হাসিনার পতনের আন্দোলনে রূপ নিতে শুরু করে, সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে এই দাবি উঠতে শুরু করে যার ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আর কিছু বাকি থাকে না। শুধু আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে চূড়ান্ত পতনের সময়ের অপেক্ষায় ছিল সবাই।

বাসস : আন্দোলনের সময় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী ছিল?

আসাদুল্লাহ আল গালিব : সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ ভেঙে আন্দোলনকে জাতীয় রূপ দেওয়া। যেকোনো আন্দোলনকে শিবির বা বাম ট্যাগ দিয়ে দমন করা হতো। আর ১৬ জুলাই থেকে ব্যাপক গ্রেফতার এবং গুলি করে হত্যার মতো খোলামেলা দমন শুরু হলে তখন নেতৃত্ব ধরে রাখাই বড় কঠিন হয়ে পড়ে। সেই সংকট মোকাবেলায় আমরা একাধিক স্তরের নেতৃত্ব গঠন করি যাতে কেউ শহীদ হলেও আন্দোলন যেন থেমে না যায়। আর ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গ্রেফতার-নির্যাতনের খবর ছড়িয়ে দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদের নিজেদের মধ্যেও যোগাযোগ কঠিন হয়ে যায়।

তবুও খুদে বার্তা ও ফোনকলের মাধ্যমে আমরা সাধ্যমতো সত্যটা জানাতে চেয়েছি। এমনকি বর্ডার পার করে ভারতে লোক পাঠিয়ে বর্বরতার তথ্যগুলো ছড়িয়ে দিয়ে আমরা বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরির চেষ্টা করি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বক্তব্য দিচ্ছেন গালিব। ছবি : ফেসবুক

বাসস : আপনার মতে আন্দোলনের সবচেয়ে বড় অর্জন কী ছিল?

আসাদুল্লাহ আল গালিব : আমার চোখে এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো- মানুষের বাক স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা। দীর্ঘদিনের একদলীয় শাসনে ‘বাক স্বাধীনতা’ শুধু কণ্ঠে নয়, চেতনায়ও রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই আন্দোলন সেই দেয়াল ভেঙেছে। মানুষ আজ প্রশ্ন করতে শিখেছে, নিজের মতো করে কথা বলতে পারছে— এটাই সবচেয়ে বড় বিজয়। যদিও এই স্বাধীনতার কিছু অপব্যবহারও হচ্ছে, বিশেষ করে আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে— তবুও মুক্ত কণ্ঠের উন্মেষই একটি গণতান্ত্রিক জাতির প্রধান অর্জন।

বাসস : আন্দোলনে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মজীবী বা অন্যান্য পেশার মানুষদের অংশগ্রহণ কেমন ছিল?

আসাদুল্লাহ আল গালিব : আন্দোলনের বীজ বপন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়েও। ফলে আন্দোলনের সাথে ক্রমান্বয়ে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ যুক্ত হয়েছিলেন, বিশেষ করে নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনকি প্রবাস থেকে বাঙালি-অবাঙালিদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।

আন্দোলনের সবচেয়ে হৃদয়গ্রাহী ছিল ছিন্নমূল কিশোর ও তরুণদের অংশগ্রহণ— যাদেরকে সমাজ ‘টোকাই’ বলে দূরে সরিয়ে দেয়। তারা এসেছিল সামনে থেকে লড়তে। শিক্ষকরা শুরুতে অনেকটা নির্লিপ্ত থাকলেও, শেষ দিকে অনেকেই আমাদের পাশে দাঁড়ান। কেউ খাবার দেন, কেউ আশ্রয়, কেউ লাঠিসোঁটা সব মিলিয়ে আন্দোলন একটি বৃহৎ মানবিকতা-ভিত্তিক বন্ধনে পরিণত হয়েছিল।

বাসস : আপনারা কীভাবে একতা ও সংহতি গড়ে তুলেছিলেন?

আসাদুল্লাহ আল গালিব : আমরা শুরু থেকেই জানতাম— এই আন্দোলন টিকে থাকবে ঐক্যের ওপর। তাই কোনো আদর্শগত ট্যাগ না দিয়ে সর্বজনীন ভাষা ও কৌশল বেছে নিই। আমাদের স্লোগান ও কর্মসূচি এমনভাবে তৈরি করা হতো যাতে ডান-বাম নির্বিশেষে সবাই নিজের মনে করতে পারে। যার ফলে সকল মত-পথ-শ্রেণি পেশার মানুষ আমাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে থাকে। এক্ষেত্রে  কেউ কেউ অসন্তুষ্ট হলেও, আমরা পুরো জাতির সংহতি অর্জনে সফল হই।

বাসস : মিডিয়ার ভূমিকা কেমন ছিল?

আসাদুল্লাহ আল গালিব : জুলাই আন্দোলনে মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের সাংবাদিক ভাইয়েরা অকুতোভয়ে আন্দোলনের বার্তা দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেন। তাদের সততা ও সাহসেই আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়। তবে দুঃখজনকভাবে কিছু গণমাধ্যম এবং তথাকথিত সাংবাদিক তখনও সরকারের দালালি করে ভুল তথ্য পরিবেশন করেছিলেন। আজও সেই ধারা অনেক জায়গায় চলছে, যা আমাদের উদ্বিগ্ন করে।

বাসস : সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলনের প্রচার কেমন ছিল?

আসাদুল্লাহ আল গালিব : আন্দোলনের প্রাণশক্তি ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, টুইটার— এই চার মাধ্যমে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এসব মাধ্যমেই আমরা বার্তা পাঠিয়েছি, মানুষের মন জয় করেছি এবং অবরুদ্ধ বাস্তবতা ভেদ করে স্বাধীনতার আরেকটি অধ্যায় রচনা করেছি।

বাসস : ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে আপনি কেমন দেখতে চান? নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কোনো উদ্যোগ বা পরিকল্পনা নেওয়ার চিন্তা আছে কি?

আসাদুল্লাহ আল গালিব : আমি এমন একটি জবাবদিহিমূলক, বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি— যেখানে সত্য ও ন্যায়ের ওপর দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। যেখানে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে রুখে দিয়ে বাঙালি কৃষ্টির পুনর্জাগরণের মাধ্যমে জাতি আবার ঐক্যবদ্ধ হবে। অর্থনৈতিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে রাষ্ট্রের শক্তিশালী ভিত্তি, শিক্ষা ব্যবস্থায় আসবে যুগোপযোগী রূপান্তর এবং প্রযুক্তির বিকাশের মাধ্যমে আমরা নিজস্ব প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠব। 

আমরা চাই একটি টেকসই উন্নয়নশীল বাংলাদেশ— যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার পাশাপাশি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় থাকবে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ও নিজস্ব ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি।

আমরা স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশ একদিন দক্ষিণ এশিয়ায় ‘বেঙ্গল ড্রিম’ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করবে। আমি বিশ্বাস করি তরুণদের নেতৃত্বেই এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব। এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতেই আমার নতুন রাজনীতিতে আসা, নিজের সর্বস্ব দিয়ে এই পথেই কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ।

বাসস : এই আন্দোলন আপনার জীবনে কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে?

আসাদুল্লাহ আল গালিব : আমি সব সময় শহীদ ও আহতদের প্রতি এক অদৃশ্য কিন্তু গভীর দায় অনুভব করি। যাদের রক্তে ভিজে গেছে আমাদের আন্দোলনের পথ, যাদের জীবন শেষ হয়ে গেছে একটি নতুন বাংলাদেশের আশায়— তাদের স্বপ্ন এখন আমাদের কাঁধে।

সেই দায় থেকে এখনো কাজ করে যাচ্ছি। তবে সত্যি বলতে, আন্দোলন-পরবর্তী জীবনটা সহজ নয়। এটিও অনিশ্চয়তায় ভরা, এক চরম প্রতিকূল যাত্রা। শহীদ পরিবারের প্রত্যাশা, সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এবং আমাদের ওপর আরোপিত দায়িত্ব সবকিছুই যেন পাহাড়সম ভার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে ভুল করে আমাদের সরকার ভাবে— প্রত্যাশা পূরণ না হলে ক্ষুব্ধ হয়, দোষ দেয়। অথচ আমরা নিজের পরিবার, ক্যারিয়ার, স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে দিনরাত কাজ করছি। আন্দোলনের সময় হয়তো জীবন ঝুঁকিতে ছিল, কিন্তু অন্তরে ছিল সাহস আর বিশ্বাস। এখন চারপাশের চাপ, দোষারোপ, অনিশ্চয়তা— এসব মিলিয়ে জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।

বাসস : যে কোনো একটি মুহূর্ত বা ঘটনা শেয়ার করেন যা আপনাকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে?

আসাদুল্লাহ আল গালিব : ১৬ই জুলাই, যখন আবু সাইদের শহীদ হওয়ার খবর পেলাম— তখন কিছুক্ষণের জন্য যেন পুরো পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঠিক তখনই মনে মনে দৃঢ় শপথ করেছিলাম, এই জালিমের পতন ঘটাতেই হবে। এরপর একে একে যখন জুলাই যোদ্ধা ভাইদের শহীদ হওয়ার খবর আসতে থাকলো তখন সেই সংকল্প আরও সুদৃঢ় হয়েছে। পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব রয়েছে। চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্ত করেছে, তারা রাজনীতিতে যুক্ত হলে দেশে নতুন ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবে বলে আমি মনে করি।

পুরোনো রাজনীতির সংস্কার, ডিজিটাল ও বিশ্বায়নের যুগে রাজনীতির আধুনিকায়ন, গ্লোবাল সংস্কার ও নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় তারুণ্যের শক্তি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার ব্যবহার জরুরি। তরুণরা যদি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পায়, তাহলে দেশের উন্নয়নে তারা নতুন চিন্তা, উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রগতির ধারা তৈরি করতে পারবে। পরিবর্তিত বাংলাদেশে তরুণদের ইতিবাচক ও সক্রিয় অংশগ্রহণ গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে এবং দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

বাসস : আপনাকে ধন্যবাদ।

আসাদুল্লাহ আল গালিব : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
খুলনায় যৌথ অভিযানে বিদেশি পিস্তল ও ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ি আটক
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৪২০ জন
রাজশাহীতে আ’লীগের তিন কর্মীসহ আটক ১৮
ডলারের বিপরীতে টাকার মান বৃদ্ধি পেয়েছে
টিচার্স ট্রেনিং কলেজে কন্টিনজেন্সি বাজেটের অর্থ আত্মসাৎসহ নানাবিধ অভিযোগে দুদকের অভিযান
চাঁদাবাজি কঠোর হাতে দমন করা হবে : লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন 
সিলেটে জুলাই শহীদ সাংবাদিক তুরাবের নামে চত্বর উদ্বোধন
ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে ভারতের অধ্যাপকের সাক্ষাৎ
আগামীকাল ঢাবি’র সান্ধ্যকালীন ক্লাস ও পরদিন সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে
সুনামগঞ্জে অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বালুসহ আটক ২, নৌকা জব্দ  
১০