সিলেট, ১৭ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই উত্তাল হয়ে ওঠে সিলেটের রাজপথ। এদিন শহীদ আবু সাঈদ, ওয়াসিমসহ পুলিশের গুলিতে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজায় বাধা, সংঘর্ষ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জানাজা ও কফিন মিছিল, হল বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের প্রত্যাখ্যান, শাহপরান হল থেকে ছাত্রলীগের মজুত করা অস্ত্র-মাদক উদ্ধার, শাবিপ্রবিতে ড. জাফর ইকবালকে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণার ঘটনা ঘটে।
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী জানান, ১৬ জুলাই রংপুর ও চট্টগ্রামে পুলিশ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে ১৭ জুলাই সিলেট নগরের রেজিস্টারি মাঠে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে বিএনপি। সিলেট দুপুর আড়াইটার দিকে ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সমমনা দল’-এর ব্যানারে জানাজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তবে পুলিশের বাধায় তা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়নি। পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের তর্ক-বিতর্কের পর জানাজা স্থানান্তর করা হয় নগরীর কোর্ট মসজিদ প্রাঙ্গণে।
বেলা পৌঁনে দুইটার দিকে সিলেট নগরের বন্দরবাজার এলাকায় ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। মহাজনপট্টি ও হকার্স মার্কেট এলাকা থেকে একটি মিছিল বের করে নেতাকর্মীরা। পুলিশের ব্যারিকেডে পৌঁছালে ইটপাটকেল ছোড়ে তারা। পরে পুলিশ টিয়ার সেল, ফাঁকা গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজা সেলিম জানান, দুপুরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নিহতদের স্মরণে অনুষ্ঠিত এই জানাজায় অংশ নেন শতাধিক শিক্ষার্থী। পরে প্রতীকী কফিন মিছিল বের হয়। এতে সংহতি জানায় শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং, হবিগঞ্জ সরকারি কলেজ, এমসি কলেজ, সিলেট সরকারি কলেজ, সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজ, মেজরটিলা স্কলারস হোম, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আরেক সমন্বয়ক শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান জানান, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। বিকেল তিনটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তা মানেনি। তিনি আরও বলেন, সেই সময় আমরা ইউজিসির নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করি এবং হল ছাড়ার জন্য চাপ দিলে প্রশাসনকেই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার হুঁশিয়ারি দেই।
একই দিন সন্ধ্যায় শাবিপ্রবির শাহপরাণ হলে তল্লাশি চালিয়ে ছাত্রলীগের মজুতকৃত আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র ও মদের বোতল উদ্ধার করেন আন্দোলনকারীরা। পরে সাড়ে ছয়টায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উদ্ধারকৃত আলামতের বিবরণ তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। হলের কয়েকটি কক্ষ থেকে শর্টগান, রিভলভার, রামদা, স্টিলের পাইপ, মদের বোতল ও গাঁজা জব্দ করার কথা জানান তারা।
সেদিন থেকে শাবিপ্রবিকে ছাত্রলীগ ও সন্ত্রাসমুক্ত ঘোষণা করা হয়। উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও মাদক পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ত্যাগ করেন বর্তমানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের শাবিপ্রবি শাখার সভাপতি খলিলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সজীবুর রহমান।
১৭ জুলাই দিনটি শাবিপ্রবির ইতিহাসে আরও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সেই দিন আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলায় এবং আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা।