পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হন সাংবাদিক এটিএম তুরাব

বাসস
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ১৭:২২ আপডেট: : ২০ জুলাই ২০২৫, ১৫:৪০
শহীদ আবু তাহের মো. তুরাব। ফাইল ছবি

সিলেট, ১৯ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৯ জুলাই জুলাই শুক্রবার ছিল সিলেটের ইতিহাসে এক ট্রাজিক দিন। এদিন জুমার নামাজের পর সিলেট নগর ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ফটকে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। গুলি-টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সিলেটের রাজপথ। সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্টে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাব।

তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান ও দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। সিলেটের শতবছরের সাংবাদিকতার স্মারক প্রতিষ্ঠান সিলেট প্রেসক্লাবের সদস্যও ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার ফতেহপুর গ্রামে। বাবা মাস্টার আব্দুর রহিম ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং মা মমতাজ বেগম গৃহিণী।

মধ্য জুলাই থেকে সারাদেশের মতো সিলেটেও কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালনকালে দুপুরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ফটকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের যৌথ হামলা, পাল্টা প্রতিরোধে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সিলেটের আখালিয়া থেকে শাবি গেট ও তেমুখি এলাকা।

রাতে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে খাল পারাপারের সময় পানিতে ডুবে মারা যান শাবির শিক্ষার্থী রুদ্র সেন। এই ঘটনার রেশ রয়ে যায়। ১৯ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় রুদ্র সেনের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ নিজ বাংলো থেকে বিকল্প পথে পালিয়ে যান।

দুপুরে জুমার নামাজের পর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে নগরের বন্দরবাজার এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই কর্মসূচি শুরুর সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সংবাদ সংগ্রহে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিকরাও।

মিছিলটি পুলিশ ভ্যান অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হতেই পেছন থেকে গুলিবর্ষণ শুরু করে পুলিশ। তখন রাস্তার মাঝের ডিভাইডারে দাঁড়িয়ে আলোকচিত্র ধারণ করছিলেন আবু তাহের মো. তুরাব। গায়ে ছিল প্রেস লেখা ভেস্ট এবং মাথায় হেলমেট। তাকে লক্ষ্য করে করা পুলিশের ছররা গুলি তার বুকের ডান পাশে ও চোখে-মুখে লাগে। গুরুতর আহত হন তুরাব।

সহকর্মী সাংবাদিকরা রক্তাক্তা তুরাবকে প্রথমে রিকশাযোগে এবং পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান চিকিৎসক না থাকায় উন্নত চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়। এই জন্য তুরাবকে নগরের সুবহানীঘাটে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে মারা যান তিনি।

ময়না তদন্তে তুরাবের শরীরে ৯৮টি ছররা গুলির চিহ্ন পান ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শামসুল ইসলাম।

সেদিন জুমার পর থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে বিক্ষোভ শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে থাকলে আখালিয়া থেকে পাঠানটুলা এলাকা পর্যন্ত ফের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সেই সাধারণ ছাত্রদের সাথে যুক্ত হন নানা শ্রেণীপেশার মানুষ।

বিকাল ৪টা থেকে বাড়তে থাকে সংঘর্ষের তীব্রতা। রাত ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে সংঘর্ষ। আহত হন অসংখ্য ছাত্র-জনতা।

একইসময়ে সিলেট নগরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। নগরের মহাজনপট্টি থেকে বন্দরবাজার, কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার পর্যন্ত সংঘর্ষ বিস্তৃতি লাভ করে। পুলিশের উপর্যুপরি গুলি-টিয়ারশেলে আহত হন অনেকে।

আগে থেকে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ হলেও এইদিন বিকেলে সারাদেশে ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ করে দেয় হাসিনা সরকার। রাত ১১টার দিকে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার সারাদেশে কারফিউ জারি এবং সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয়। এর মধ্য দিয়ে সাংবাদিক তুরাবসহ সারাদেশে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর অনেকটা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ঢাবি তথ্য কেন্দ্রের সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ পদক্ষেপ
জুলাই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
উজবেকিস্তানের আইটি পার্ক সিইও এর সাথে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক শামসুর রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মধ্যপ্রাচ্যে ‘আপ বাংলাদেশ’-এর ৩৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা
রাজধানীতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ডিএমপির ২,৩৩৭ মামলা
ডিএমপির বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে ৫৯ জন গ্রেফতার
সেনাবাহিনী প্রধানের নিজস্ব কোনো ফেসবুক প্রোফাইল নেই : আইএসপিআর
পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের মহড়া করবে রাশিয়া-বেলারুশ
প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরেছেন
১০