জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সফলতা এসেছে : আমান

বাসস
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৫, ১৫:৪৩
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান। ফাইল ছবি

মো. রাসেল সরকার

ঢাকা, ২২ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সরকার পতনের গণঅভ্যুত্থানে রূপ দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের (জেসিডি) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান। ছাত্রদলের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে তিনি আন্দোলন চলাকালে বিএনপির হাইকমান্ডের পরামর্শের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আন্দোলনকে গতিশীল রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। 

আমান উল্লাহ আমানের গ্রামের বাড়ি বরগুনার সদর উপজেলায়। তার বাবা মরহুম আবদুর রহিম মুসুল্লি স্থানীয় মসজিদের ইমাম ছিলেন। মায়ের নাম আম্বিয়া বেগম। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ৬ষ্ঠ। গ্রামের বিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষে তিনি ঢাকার তেজগাঁও কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্নাতকোত্তরে অধ্যয়ন করছেন। এর আগে তিনি জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০২৫ সালের ১ মার্চ আমান উল্লাহ আমান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনকি সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কারণে তিনি জেল-জুলুমের শিকার হন। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষে পুলিশ হত্যা মামলায় তিনি ওই বছর ৪ নভেম্বর গ্রেফতার হন। তাকে ১৯ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়। তিন মাসেরও বেশি সময় পর ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হন।

ছাত্রদলের এই নেতা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগে থেকেই তারা যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় এসেছে। 

সম্প্রতি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমান উল্লাহ আমান জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তার অংশগ্রহণ, দলীয় অবস্থান ও অভিজ্ঞতার নানা দিক তুলে ধরেন।

বাসস : কোটা সংস্কার আন্দোলনে আপনি কখন, কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন? আন্দোলনের শুরুতে আপনাদের দলীয় অবস্থান কী ছিল?

আমান উল্লাহ আমান: দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দমন-পীড়ন ও সাংবিধানিক ছল-চাতুরির মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছিল। অবৈধ নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে আমরা তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই মাঠে ছিলাম। বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শেখ হাসিনার পতনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমাদের মধ্যে নিহিত ছিল। সেই আকাঙ্ক্ষার চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটানোর জন্য আমরা একটি প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলাম ছিলাম। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেলবন্ধনের মাধ্যমে সেই প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়। সাধারণত যারা সরকারবিরোধী তারা সবসময় সরকার পতনের ইস্যু খুঁজে। জুলাইয়ের আন্দোলনে আমরা সেই ইস্যুটি পেয়েছি। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে মানসিক বিকারগ্রস্ত মহিলা শেখ হাসিনা পুরো কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট সেই কোটা পুনর্বহালের রায় দেয়। ওই দিনই কিন্তু শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রতিবাদ করে। এর পরের দিন ৬ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের সঙ্গে অনলাইনে মিটিং করেন। তিনি জানতে চান, কোটা ইস্যুতে শিক্ষার্থীরা যে প্রতিবাদ করছে, তাতে আমাদের করণীয় কী? উনার সঙ্গে কথা বলে পরের দিনই আমরা এটাকে বুস্ট আপ করার সিদ্ধান্ত নিই। এরই মধ্যে সামনে ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটিতে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়। ক্যাম্পাস বন্ধের আগে শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ৩০ জুন পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন। তবে জুলাইয়ে আবার কীভাবে আন্দোলন শুরু করা যায়, সেই বিষয়ে আমরা আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ অব্যাহত রাখি। জুলাইয়ের ১ তারিখে যখন আন্দোলন শুরু হয়, তখন আমরা যার যার মতো করেন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। কারণ আমরা যারা ছাত্রদল করি, তাদেরকে তো ছাত্রলীগ চেনে। যদি আমরা তখন আমাদের আত্মপরিচয় বা সাংগঠনিক পরিচয়ে সেই কর্মসূচিতে অংশ নিতাম, তাহলে সেই আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ হতো এবং তা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এই আন্দোলন সরকার বিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার আর সুযোগ হতো না। সেই কারণে আমরা শুরুতে সাংগঠনিক পরিচয়ে আন্দোলনে অংশ নিইনি। এমনকি অপরাপর সংগঠনগুলো; ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর কেউই তাদের সাংগঠনিক পরিচয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটি ফ্যাসিবাদী শক্তির ছাড়া সবার জন্য সার্বজনীন ছিল। 

বাসস : কখন আপনারা দলীয়ভাবে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে জোরালোভাবে আন্দোলনে নামেন?

আমান উল্লাহ আমান: কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটামে সরকার যখন কর্ণপাত করল না, তখন ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল হয়, ২ জুলাই ঘণ্টাখানেকের জন্য শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হয়। একইদিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্রদলের যারা হলে থাকত, যাদেরকে ছাত্রলীগ তেমন চেনে না, তাদেরকে আমরা সেই অবরোধ কিংবা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগহণ করতে নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আশেপাশে থেকে আন্দোলন মনিটরিং করি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা যখন শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, তখন সবার মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম হয়। উনি ভোটারবিহীন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হলেও উনার গাড়িতে তো বাংলাদেশের পতাকা উড়তো। তার এমন অবস্থান থেকে তিনি যখন সকলকে আঘাত করে কথা বলেন, তখন আর চুপ থাকা যায় না। এমনিতেই মানুষ আগে থেকেই উনার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। সেই কারণে প্রতিবাদটা আরও জোরালো হয়। ১৫ জুলাই যখন সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বিচারে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে, সেদিন ছাত্রসংগঠন হিসেবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলই প্রথম এই আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করে। আমরা পল্টনে সংবাদ সম্মেলন করে আহ্বান জানাই, সবাই যাতে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ওইদিন আমরা কেন্দ্রীয় সংসদসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করি। এক দফার বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ওইদিনই বলেন, ‘দফা এক দাবি এক, খুনি হাসিনার পদত্যাগ’। যারা শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের নৃশংস ও পৈশাচিক হামলা করতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে এর বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। পরের দিন ১৬ জুলাই মূলত এ আন্দোলন সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়, যেদিন রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ও চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ওয়াসিম আকরামকে হত্যা করা হয়। সেদিন ওয়াসিম আকরাম ফেসবুকে মহাকাব্যিক স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছিলেন- ‘চলে আসুন ষোলশহর’। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার প্রাণের সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য লড়ছে। এই পরিচয়ে আমি শহীদ হবো।’ দেখুন- কী প্রাণের আকুতি ছিল। আল্লাহ তাকে সেভাবেই নিয়ে গেলেন। ওয়াসিম আকরাম যখন শহীদ হলেন, তখন ছাত্রদলের সারাদেশের নেতাকর্মীরা এ আন্দোলনকে নিজেদের মনে করে রাস্তায় নেমে পড়েন। জুলাইয়ের প্রথম থেকে আমরা প্রায় প্রতিদিনই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতাম এবং এ আন্দোলন কীভাবে বুস্ট আপ করা যায়, সে বিষয়ে বিএনপির হাইকমান্ড মতামত দিতেন। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের অন্যান্য স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যানার ফেস্টুন করে দিয়েছে ছাত্রদল। আমরা লাঠিসোঁটা দিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে পেছনে মানব ঢাল হিসেবে থেকে সাহস জুগিয়েছি।

বাসস : আপনাদের নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলছাড়া ছিলেন, ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। জুলাইয়ের শুরুতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন?

আমান উল্লাহ আমান: দীর্ঘ দেড় দশক ধরে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালন করতে পারেনি। বৈধ শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হলে থাকতে পারেনি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ মনে হলেও দিনশেষে এটা আমাদের পক্ষে গিয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা হলে থাকলে ওভাবে আন্দোলনে অংশ নিতে পারত না। বাসা, মেস বা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থেকে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। ১৬ জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত ছাত্রলীগ তাদের আইডেন্টিফাই করতে পারেনি। পরবর্তীতে আমরা যারা অংশগ্রহণ করেছি, তারা তো পরিচিত ফেস। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। শিক্ষকদের কাছে আশ্রয় নিতে গেলে তাদের কেউ কেউ আমাদের নেতা-কর্মীদের পুলিশে দিয়েছে। জাতির সংকটে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিভাবক মনে করি, কিন্তু তারা যেভাবে পলিটিসাইজড হয়ে গিয়েছিলেন, আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন করে ফ্যাসিবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। সুতরাং এদেরকেও কোনো একটা সময় জিজ্ঞাসাবাদ বা বিচারের আওতায় আনা উচিত। তারা নৈতিক স্খলন ঘটিয়ে ফ্যাসিবাদকে দীর্ঘায়িত করার ঘৃণ্য চেষ্টা করেছিল। 

বাসস : কোটা সংস্কার আন্দোলন এক পর্যায়ে গণঅভ্যুত্থান বা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেবে, এটা কি শুরুতে ধারণা করতে পেরেছিলেন?

আমান উল্লাহ আমান: আমরা সরকার পতনের আন্দোলনেই ছিলাম। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছিলেন, ‘আমাদের দফা একটাই- সরকার পতন’। কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে থেকেই আমাদের এক দফা কর্মসূচি চলছিল। সেটি ছাত্র-জনতার জাগরণে মেলবন্ধন হয়ে জুলাই অভ্যুত্থান সফল হয়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে যারা ছিল, সবাই কিন্তু সরকার পতনের আন্দোলনে ছিল।

বাসস : কোন বিষয়টি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আপনাকে বা আপনাদের নেতাকর্মীদের আন্দোলনে অংশ নিতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল?

আমান উল্লাহ আমান: এই আন্দোলনের জন্য আমাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা আগে থেকেই কাজ করত। আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস তারেক রহমান। যার ক্যারেক্টার অ্যাসেসিনেশন করার জন্য স্বাধীন বাংলাদেশে অনেক ইনভেস্ট হয়েছে। ওই সময় উনার মা, ৮০ বছর বয়সী  সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বন্দি ছিলেন। উনার একমাত্র ভাইকে টর্চার করে মেরে ফেলা হয়েছে। তারেক রহমানকে কীভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল, তিনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। এরপরও তিনি নির্বাসিত। তিনি এই দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সব সময় চিন্তা করেন এবং আমাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। উনার চেয়ে বড় প্রেরণার উৎস আর কে হতে পারে? এই আন্দোলনে তিনি সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিতেন। উনার চেয়ে বড় প্রেরণা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কাছে কেউ হতে পারে না। পাশাপাশি আরও কিছু সম্পূরক উপাদান আমাদের অনুপ্রেরণা উৎস ছিল।

বাসস : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এমন কোনো বিষয় বা ঘটনা জানতে চাই, যা আপনার মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল এবং সেই স্মৃতি এখনো আপনাকে আন্দোলিত করে।

আমান উল্লাহ আমান: ১৮ জুলাই উত্তরার আজমপুরে মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ ‘পানি লাগবে পানি’ বলতে বলতে পুলিশের গুলিতে শহীন হন। এই যে ‘পানি লাগবে পানি’, এক বাবার আর্তনাদ ‘চাকরি দেবে না, আমার বেটাকে মারল কেন’ এসব ধ্বনি তখন আমাদের কানে বাজতো। কানের ভেতর বাজতো শহীদ ওয়াসিম আকরামের আহ্বান- ‘চলে আসুন ষোলশহর’। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক গোলাম রাব্বানীর স্যারের ‘যে পিতা তার সন্তানের লাশ শনাক্ত করতে ভয় পায়, আমি তাকে ঘৃণা করি’ সেই বক্তৃতা আজও কানে বাজে। এই আন্দোলনে মানুষের আত্মজাগরণের বিভিন্ন উপাদান  আল্লাহ তৈরি করে দিয়েছিলেন। হাসিনা সীমালঙ্ঘনকারী ছিল, তাই তার নিশ্চিত পতন হয়েছে। যখন মানুষ রাস্তায় নেমেছেন, সৃষ্টি কর্তা তাদের সাহায্য করেছেন। 

বাসস : আন্দোলনের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ ছিল কিনা? কীভাবে আন্দোলনের সমন্বয় করতেন?

আমান উল্লাহ আমান: জুলাইয়ের শুরু থেকে আমাদের হাইকমান্ড ও আমাদের ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আন্দোলনের সমন্বয়কদের কোনো না কোনোভাবে যোগাযোগ ছিল। তাদের সঙ্গে প্রতিদিন আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হতো। এখন সময়ের পরিবর্তনে হয়ত অনেকে সেই স্মৃতি ভুলে গেছেন। কিন্তু তাদের সংকটে আমরা পাশে ছিলাম। কীভাবে আন্দোলন জোরদার করা যায়, আমরা সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি। এমনকি কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে, সে বিষয়েও আগের দিনই আলোচনা হতো। অনেক সময় নেট শাটডাউন করে দিয়েছে, কীভাবে ভিপিএনের সাহায্যে ইন্টারনেটে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হয়, সেই পরামর্শ আমরা তাদের দিয়েছি। গণঅভ্যুত্থানে আলাদা কোনো স্টেকহোল্ডার থাকে না। যে ন্যারেটিভ এখন দেওয়া হচ্ছে, সব ভুল। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশ্রগহণে এ গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। 

বাসস : ছাত্রলীগ বা রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দারা আন্দোলনের সময় ছাত্রদলের নেতাদের গতিবিধি নজরদারিতে রেখেছিল কিনা? ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে আন্দোলনের সময় আপনি কারো হুমকি বা নজরদারি অনুভব করেছিলেন কিনা?

আমান উল্লাহ আমান: বিভিন্ন আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রায় ছয়শ’র কাছাকাছি নেতাকর্মী গুম হয়েছিল।  আপনি চিন্তা করুন- একটা সংগঠনের এতগুলো লোক গুম হয়েছে। ফ্যাসিবাদী হাসিনার আমলে ১৮৬ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ১৪২জন নেতা-কর্মী শাহাদাত বরণ করেছে। সেই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের পুলিশ বা গোয়েন্দারা কীভাবে খুঁজেছে, সেটা বলার ভাষা নেই। আমার এক সহযোদ্ধার সঙ্গে ভুলবশতঃ ফোনে কথা হয়েছিল, ১৫-২০ মিনিট পরে তাকে গ্রেফতার করা করে ফেলে পুলিশ। তাকে রিমান্ডে নিয়ে আমার বিষয়ে তথ্য দিতে অনেক টর্চার করা হয়। আমরা প্রযুক্তির সহায়তায় যোগাযোগ করতাম, যার কারণে আমাদের ট্র্যাক করতে পারত না। আসলে আল্লাহ আমাদের শীর্ষ নেতাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সেভ করেছেন। এই আন্দোলনে সাড়ে নয় হাজারের মতো বিএনপির নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে।  আমরা ছাত্রদলের শীর্ষ ৫-৬ জন মোস্ট টার্গেটেড ছিলাম। আমাদেরকে বেশি থ্রেট মনে করেছিল ছাত্রলীগ। 

বাসস : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ইন্টারনেট ক্র্যাকডাউনের সময় আপনারা কীভাবে আন্দোলনের তথ্য পেতেন? আন্দোলনে দলীয়ভাবে কে কোথায় অংশ নেবে, সেগুলো কীভাবে সমন্বয় করতেন?

আমান উল্লাহ আমান: গ্রেফতার এড়িয়ে কীভাবে মাঠে থেকে আন্দোলন সফল করা যায়, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ কৌশল অবলম্বন করতাম। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা ছিল- ‘কোনোভাবে গ্রেফতার হওয়া যাবে না। তবে মাঠে থাকতে হবে।’ ১৮ জুলাইয়ের পর নেট শাটডাউন ছিল। এর আগে আমরা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেছি। আমরা জানতাম কোন পর্যায়ে কী হতে পারে। নেট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেই প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছিলাম। 

বাসস : জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেন অপরিহার্য ছিল? এ আন্দোলন সফল না হলে দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যেত বলে মনে করেন?

আমান উল্লাহ আমান: স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে পৃথিবীর ইতিহাসে যত গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, প্রথমে একটা ইস্যু নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়, পরে সমস্ত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার দেশে যে পয়জনাস অবস্থা তৈরি করে রেখেছিল, সেটার অবসান ঘটেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল । ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে সাড়ে ১১ হাজার মানুষের জেল খাটতে হয়েছে। সুতরাং মানুষ মুক্তির উপায় খুঁজছিল। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে তেমন কোনো  সফলতা আসেনি। বিএনপি অনেক কর্মসূচি পালন করেছে। এখন যদি কেউ বলে, আপনারা তো ব্যর্থ! এটা একটা অর্বাচীন মূর্খদের বক্তব্য। প্রেক্ষাপট তৈরি না হলে আসলে গণঅভ্যুত্থান হয় না। ২০১৪, ১৮ বা ২৪ এর নির্বাচনের সময় আমাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। জীবন বাজি রেখে আমরা মাঠে ছিলাম। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার, রিমান্ড ও কারা নির্যাতন করা হয়েছে। এগুলো মনে হলে গা শিউরে ওঠে। ওই সময় থেকে আমরা আন্দোলন করেছি। আজকে যারা বড় বড় কথা বলে, সেই সময় এই বিপ্লবীরা কোথায় ছিল? আজকে অনেকে আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে নিয়ে অনেক কথা বলছেন এবং তারা বলেছেন, আমরা ব্যর্থ। আমরা তোমাদের কারণে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা যখন প্রতিবাদ করেছিলাম, তখন তোমরা আমাদের আন্দোলনে শামিল হওনি। তখন শামিল হলে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ দীর্ঘ হতো না। এই আন্দোলন যদি সফল না হতো, তাহলে এটা সম্মিলিত ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হতো এবং দেশে অন্ধকার নেমে আসত। তবে যখন গণমানুষের সম্মিলিত জাগরণ ঘটে, তখন অবশ্যই আন্দোলনের সফলতা আসে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো একটা রাজনৈতিক দল এককভাবে গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে পারে না, এখানে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন হয়।

বাসস : ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার পতন ঘটেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য ছাত্রদল মোটাদাগে কী কী করেছে এবং ভবিষ্যতে কী কী করার পরিকল্পনা রয়েছে?

আমান উল্লাহ আমান: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যে সরকার এসেছে, তাদের মুখ্য দায়িত্ব হলো-শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসন করা এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন করা। এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ, তাদের পরিবারের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তাদের পাশে থাকার চেষ্টার করছি। ছাত্র সংগঠন হিসেবে সবচেয়ে বেশি আমরা জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে কর্মসূচি দিয়েছি। সবচেয়ে বেশি আমরা তাদের স্মরণ করছি। ভবিষ্যতেও আমরা তাদের অবদান স্মরণীয় করে রাখার চেষ্টা করব। শহীদ পরিবার ও আহতদের পাশে থাকব। 

বাসস : বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতে সংস্কার এবং জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব বা সংগঠনগুলোর ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা? সেই ঐক্য কীভাবে বজায় রাখা যায়?

আমান উল্লাহ আমান: নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে আমার কাছে মনে হয়, কিছু দুষ্টচক্রের পরামর্শে আমাদের নবাগত রাজনৈতিক দলের ভাইয়েরা বিপদগামী হয়ে যাচ্ছে। তারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সেই সুযোগটা পেলে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিএনপির সঙ্গে তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। বিএনপিকে ব্যর্থ করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়ে যাবে।

বাসস ; ছাত্রলীগের নির্যাতন ও অপরাজনীতিরি কারণে জুলাই আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকে রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবি করেছিলেন। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে ছাত্রদল কোন ধরনের রাজনীতি করছে? ছাত্ররাজনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনছে?

আমান উল্লাহ আমান: আওয়ামী লীগের আমলে ছাত্রলীগ যে রাজনীতি করেছে, সেটা আসলে ছাত্ররাজনীতি ছিল না। এটা ছিল দখলদারিত্ব ও নিপীড়নের রাজনীতি। শিক্ষাঙ্গনে কাঠামোগত নিপীড়ন ছিল। শিক্ষার্থীরা মনে করেছিল, ছাত্ররাজনীতি মানেই এরকম কিছু। তাই অনেকে রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবি করেছিলেন। ছাত্রলীগের আচরণের কারণে শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু এদেশে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন রয়েছে। কেননা, প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীকার আন্দোলনে ছাত্ররাজনীতি পথ দেখিয়েছে, নেতৃত্ব দিয়েছে। এই মাটিতে ছাত্ররাজনীতি চলবে না, এটা হতে পারে না। ৫ আগস্টের পর ছাত্ররাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব ইতিবাচক রাজনীতি করতে তাদের কাছে যাচ্ছি। প্রতিটি ক্যাম্পাসে গিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের মতামত নিচ্ছি। আমরা ৩৮টি টিম গঠন করে এক মাসে তিন হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে জানতে চেয়েছি, আমরা কী করলে তোমাদের কাছে মনে হবে ছাত্ররাজনীতি কল্যাণকর। তাদের পরামর্শের আলোকে আমরা ছাত্ররাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। 

বাসস : দলীয় লেজুড়বৃত্তি বিষয়ে আপনার নিজস্ব মতামত কী? এটা কি ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে থাকা উচিত?

আমান উল্লাহ আমান: বাংলাদেশে লেজুড়বৃত্তি করে না এমন কোনো ছাত্র সংগঠন নাই। লেজুড়বৃত্তি শব্দটার অনেক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রয়েছে। আপনি শিক্ষার্থী, আপনি আপনার গার্ডিয়ানকে অনুসরণ করতে হবে। এটা লেজুড়বৃত্তি নয়। আমাদের দুর্দিনে যখন ছাত্রদলের ছেলেরা হামলা, মামলা বা গ্রেফতারের শিকার হতো, তখন বিএনপি অর্থ সহায়তা দিত। এখানে মাদার সংগঠন না থাকলে তাদের চিকিৎসা বা মামলায় লড়তে টাকা কে দেবে? বাংলাদেশের মতো দেশে এটাই বাস্তব। আপনার বিপদে পাশে দাঁড়ানোর মতো ব্যাপক ব্যাকআপ থাকতে হবে। তবেই ছাত্রসংগঠনগুলোর শিক্ষার্থীবান্ধব স্বতন্ত্র কর্মসূচি থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে তাদের কর্মসূচি থাকবে। এতে সিনিয়রদের পরামর্শ নেওয়া বা তাদের সম্মান করা কোনো লেজুড়বৃত্তি নয়। 

বাসস : গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ কেমন দেখতে চান? দেশকে কীভাবে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তোলা যায়?

আমান উল্লাহ আমান: যে শ্রমিক বা রিকশা চালক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল, তারা কেউ চাকরির জন্য রাস্তায় নামেনি। তাদের লক্ষ্য ছিল- এদেশকে ফ্যাসিবাদী শাসন ও দুর্নীতি থেকে মুক্ত করা। মানুষের চাওয়া হলো- তাদের মৌলিক অধিকারগুলো পূরণ করা, যেখানে কোনো ঘুষ বা দুর্নীতি হবে না। সেই প্রত্যাশা এখনো পূরণ হচ্ছে না। তারপরও আমি বিশ্বাস করি, সামনে পরিবর্তন আসবে। যেহেতু একটি নিকৃষ্ট ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, সেহেতু গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার সরকার আসবে। যারাই ক্ষমতায় আসুক-তারা অন্তত এই চেতনা ধারণ করুক যে, কত মানুষের জীবনের বিনিময়ে, কত মানুষের পঙ্গুত্বের বিনিময়ে আমরা এই ক্ষমতা পেয়েছি। সুতরাং মানুষের প্রতি আমাদের ন্যূনতম দায়িত্ববোধ রয়েছে। মানুষ এখন একটা দিক থেকে শান্তিতে আছে, তারা এখন কথা বলতে পারছে। কথা বলার অধিকারটা মানুষের সবচেয়ে বড় অধিকার। তবে অন্যান্য অধিকারের ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়েছে। তারপরও আশা রাখি, স্বপ্ন দেখি- সবাই পঁচে যাবে না। কেউ না কেউ মানুষকে ধারণ করবেন, তবেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। 

বাসস : আপনার অনেক ব্যস্ততার মাঝেও সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আমান উল্লাহ আমান : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পাকিস্তানের লজ্জার রেকর্ড
বাংলাদেশের জয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টার অভিনন্দন
প্রথমবারের মত পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ ও ২৪ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত
বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছে বিপিএসএ
মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় কুয়েতের শোক প্রকাশ
বিমান দুর্ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত : নাহিদ ইসলাম
চার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক 
বিমসটেক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি উন্নয়ন-কেন্দ্রিক : মহাসচিব 
বুধবার চাঁদপুর থেকে আবারো এনসিপির পদযাত্রা
১০