।। নুসরাত সুপ্তি ।।
নারায়ণগঞ্জ, ১ আগস্ট ২০২৫ (বাসস): কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশ।
আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের নাশকতা, নজিরবিহীন তাণ্ডব ও আন্দোলনকারীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তারের কারণে জুলাই এর শেষ দিকে জেলা শহরের আন্দোলন প্রায় থমকে যায়। তবে ১ আগস্ট ‘মোমশিখা প্রজ্বালন’ কর্মসূচির মাধ্যমে জেলার শহরে আবারো উজ্জীবিত হয়ে উঠে আন্দোলন।
চব্বিশের ১ আগস্ট সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের আনাচে-কানাচে দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতিতে অগ্নিঝরা প্রতিবাদ জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
দেয়ালে দেয়ালে, সড়কে গ্রাফিতি, দেয়াল লিখন, পেইন্টিং করেন। আন্দোলনকারীদের ত্যাগ ও আত্মহুতির চিত্র ফুটে উঠে তাদের গ্রাফিতিতে। গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি ও ৯ দফা দাবিতে জালকুড়ি ও আদালত পাড়া এলাকায় প্রতিবাদী দেয়াল লিখন করেন শিক্ষার্থীরা। তবে দেয়াল লিখনের সময় তাদের পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের বাঁধার মুখে পড়তে হয়।
নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী রাইসা সেদিন দুপুরের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে অবস্থিত নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল অ্যামিউজমেন্ট পার্ক (নম পার্ক) এর পরিচালক ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম।
আমরা সেই পার্কের দেয়ালে গ্রাফিতি করে প্রতিবাদ লিখতেছিলাম। সেসময় পার্ক কর্তৃপক্ষের লোকজন আমাদের দেখে ফেলে। আমরা পালানোর চেষ্টা করলেও তারা আমাদের ধরে ফেলে। আমাদেরকে অনেক হুমকি দেয়। আমাদের মধ্যে একজন ছিল ফাহিম, ওরে পিস্তলের পিছনের অংশ দিয়ে মাথায় আঘাত করে। সেদিন আমাদের ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
সেদিন সন্ধ্যায় আন্দোলনে আহত ও নিহতদের স্মরণ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চাষাঢ়া শহীদ মিনারে ‘মোমশিখা প্রজ্বালন’ কর্মসূচি দেন। কিন্তু মোম প্রজ্বালনের আগেই পুলিশ আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে কর্মসূচি পণ্ড করে দেয়।
পুলিশের লাঠিপেটায় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হলেও শিক্ষার্থীরা মিনারের নিকটবর্তী বালুর মাঠে গিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। সেখানেও এসে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে, কিন্তু সেদিন শিক্ষার্থীরা দমে যায়নি।
তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান, মুন্নি আক্তার, অনামিকা চৌধুরীসহ কয়েকজন আন্দোলনকারী হাতে হাত রেখে সড়কে দাড়িয়ে থাকেন। পুলিশের লাঠি পেটার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
অগ্নিঝরা কণ্ঠে তারা স্লোগান দেয় ‘বুকের ভেতর ভীষণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’। এক পর্যায়ে তারা পুলিশের সঙ্গে বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় পুলিশ তিন শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নতুন করে চাষাড়ায় আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে।
গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বলেছেন, ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা হওয়ায় আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জবাসীর অবস্থান ছিল ব্যাপক। ১৯ জুলাই আওয়ামী লীগের গড ফাদার শামীম ওসমান তার অস্ত্রধারী অনুসারীদের নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেন, আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন।
এ সময় ডিআইটি এলাকায় গুলি ছোড়ার সময় পাশের একটি এলাকার ছাদে থাকা ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর জেলার শহরের ভিতরে আন্দোলন কিছুটা থমকে গেলেও শিমরাইল, সাইনবোর্ড, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে আন্দোলন ছিল সরব। যা পরবর্তীতে ১ আগস্ট 'মোমশিখা প্রজ্বালন' কর্মসূচির পর বারুদ হয়ে উঠে।
তিনি আরও বলেন, চিটাগাংরোড থেকে যাত্রাবাড়ি হলো ঢাকার এন্ট্রি ও এক্সিট পয়েন্ট। এখানে নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতিরোধ ছিল দেখার মতো। ফলে ঢাকার আন্দোলন আরো উত্তাপ পেয়েছিল। এ কারণে এই অঞ্চল আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।