ঝিনাইদহে বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের হামলা, গুলিবিদ্ধ অন্তত: ১২ জন

বাসস
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৪:৩০
৩ আগস্ট হাসিনা পতনের এক দফা দাবি আদায়ে ঝিনাইদহের সব উপজেলা শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। ছবি: বাসস

\ শাহজাহান নবীন \

ঝিনাইদহ, ৩ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ এর এইদিনে সারাদেশ ছিল উত্তাল। পুলিশের নির্মম গুলিবর্ষণ, গ্রেফতার অভিযান ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলার শিকার হন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। 

ঝিনাইদহে গত বছরের ৩ আগস্ট ছিল এক ভয়াল দিন। আগের দিন ২ আগস্ট জেলার কালীগঞ্জ শহরে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে পুলিশ হামলা চালায়। মহেশপুরেও চলে নির্বিচারে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ।

জুলাই যোদ্ধা ও তৎকালীন প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৩ আগস্ট হাসিনা পতনের এক দফা দাবি আদায়ে জেলার সব উপজেলা শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।

আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মীরা সামনের সারিতে না থেকে ভিন্ন কৌশলে অপরিচিত তরুণ নেতৃত্বকে দিয়ে ৩ আগস্টের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। 

বিশেষ করে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের বাসস্ট্যান্ড মোড়ে বড় সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। ওই সমাবেশে পুলিশ উসকানীমূলক হামলা চালায়। তৎকালীন কালীগঞ্জ থানা পুলিশের কর্মকর্তারা ছাত্র-জনতাকে প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ব্যানার ফেস্টুন কেড়ে নেয়। পুলিশের ধাওয়ায় কালীগঞ্জের ছাত্র-জনতা পিছু হটে। পরে স্থানীয় শহরবাসী ছাত্র-জনতার সঙ্গে যোগ দিলে পুলিশ কোণঠাসা হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের যানবাহন চলাচল। শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

একই দিন ঝিনাইদহ জেলা শহরেও ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভ ও মিছিল হয়। পুলিশ ওই মিছিলেও নির্বিচারে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। ওই দিন ঝিনাইদহ শহরে অন্তত ১২ জন গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ আহত ছাত্র-জনতাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও চিকিৎসাধীন ছাত্র-জনতার ওপর হাসপাতালে গিয়ে ধরে ধরে মারপিট করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা।

এ ছাড়া হরিণাকুণ্ডু উপজেলার দোয়েল চত্বরেও ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ‘এক দুই তিন চার, শেখ হাসিনা স্বৈরাচার’, ‘দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ ইত্যাদি স্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে জেলার রাজপথ, হাটবাজার ও অলিগলি। 

চব্বিশের ৩ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দমনে আগের দুইদিন ১ ও ২ আগস্ট ঝিনাইদহে বেশ কয়েকটি মামলা করে পুলিশ। নাশকতার ভিত্তিহীন অভিযোগে তৎকালীন সমন্বয়ক রিহান হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, রত্না খাতুন, আবু হুরায়রা, সাইদুর রহমান, এলমা খাতুন, শাখাওয়াত হোসেনসহ অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে মামলার আসামি করা হয়। মামলার পর শুরু হয় নির্মম গ্রেফতার অভিযান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেসময়কার ঝিনাইদহ জেলা সমন্বয়ক রিহান হোসেন জানান, পুলিশের হামলা-মামলার ফলে নেতাকর্মীদের মাঝে আরও জেদ চেপে বসে।

‘ডু অর ডাই’ নীতিতে ছাত্র-জনতা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পণ করেন। যে কারণে ৩ আগস্ট সব বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করে এবং  রাজপথ দখলে নেয় ছাত্র-জনতা।

রিহান হোসেন বলেন, ‘৯ দফা দাবি আদায়ে শহরের আরাপপুর থেকে আমরা ৩ আগস্ট বিক্ষোভ শুরু করি। 

পরে বিক্ষোভ নিয়ে আমরা শহরের পায়রা চত্বর অভিমুখে রওয়ানা হলে পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। আমাদের অনেক সহকর্মী ওইদিন আহত হন। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরব না।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করল জার্মানি
এ দিন রাজশাহীতে মুহুর্মুহু গুলিতে নিহত ২, আহত শতাধিক
অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশের অভিযাত্রায় অস্ট্রেলিয়ার সমর্থন
মিরপুরে জাল ক্লিয়ারেন্স চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার, ছয় মাসের কারাদণ্ড
কুমিল্লায় স্বৈরাচার পতনে ছাত্র-জনতার উল্লাস, বিজয়ের দিনে নিহত ৪
অবিস্মরণীয় জুলাইয়ে সময়ের হিসেব মেলাতে ৫ আগস্ট হয়ে উঠেছিল ৩৬ জুলাই
পিরোজপুরের রাজপথ ছিল ছাত্রজনতা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দখলে 
নড়াইলে জুলাই গণঅভ্যূত্থান দিবস পালিত
এক বছরে মুদ্রাস্ফীতি কমে স্বস্তিতে জনগণ: নিয়ন্ত্রিত বাজার, স্থিতিশীল নীতি
সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১,৫৫২
১০