\ শাহজাহান নবীন \
ঝিনাইদহ, ৩ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ এর এইদিনে সারাদেশ ছিল উত্তাল। পুলিশের নির্মম গুলিবর্ষণ, গ্রেফতার অভিযান ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলার শিকার হন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা।
ঝিনাইদহে গত বছরের ৩ আগস্ট ছিল এক ভয়াল দিন। আগের দিন ২ আগস্ট জেলার কালীগঞ্জ শহরে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে পুলিশ হামলা চালায়। মহেশপুরেও চলে নির্বিচারে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ।
জুলাই যোদ্ধা ও তৎকালীন প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৩ আগস্ট হাসিনা পতনের এক দফা দাবি আদায়ে জেলার সব উপজেলা শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মীরা সামনের সারিতে না থেকে ভিন্ন কৌশলে অপরিচিত তরুণ নেতৃত্বকে দিয়ে ৩ আগস্টের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে।
বিশেষ করে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের বাসস্ট্যান্ড মোড়ে বড় সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। ওই সমাবেশে পুলিশ উসকানীমূলক হামলা চালায়। তৎকালীন কালীগঞ্জ থানা পুলিশের কর্মকর্তারা ছাত্র-জনতাকে প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ব্যানার ফেস্টুন কেড়ে নেয়। পুলিশের ধাওয়ায় কালীগঞ্জের ছাত্র-জনতা পিছু হটে। পরে স্থানীয় শহরবাসী ছাত্র-জনতার সঙ্গে যোগ দিলে পুলিশ কোণঠাসা হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের যানবাহন চলাচল। শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
একই দিন ঝিনাইদহ জেলা শহরেও ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভ ও মিছিল হয়। পুলিশ ওই মিছিলেও নির্বিচারে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। ওই দিন ঝিনাইদহ শহরে অন্তত ১২ জন গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ আহত ছাত্র-জনতাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও চিকিৎসাধীন ছাত্র-জনতার ওপর হাসপাতালে গিয়ে ধরে ধরে মারপিট করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা।
এ ছাড়া হরিণাকুণ্ডু উপজেলার দোয়েল চত্বরেও ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ‘এক দুই তিন চার, শেখ হাসিনা স্বৈরাচার’, ‘দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ ইত্যাদি স্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে জেলার রাজপথ, হাটবাজার ও অলিগলি।
চব্বিশের ৩ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দমনে আগের দুইদিন ১ ও ২ আগস্ট ঝিনাইদহে বেশ কয়েকটি মামলা করে পুলিশ। নাশকতার ভিত্তিহীন অভিযোগে তৎকালীন সমন্বয়ক রিহান হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, রত্না খাতুন, আবু হুরায়রা, সাইদুর রহমান, এলমা খাতুন, শাখাওয়াত হোসেনসহ অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে মামলার আসামি করা হয়। মামলার পর শুরু হয় নির্মম গ্রেফতার অভিযান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেসময়কার ঝিনাইদহ জেলা সমন্বয়ক রিহান হোসেন জানান, পুলিশের হামলা-মামলার ফলে নেতাকর্মীদের মাঝে আরও জেদ চেপে বসে।
‘ডু অর ডাই’ নীতিতে ছাত্র-জনতা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পণ করেন। যে কারণে ৩ আগস্ট সব বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করে এবং রাজপথ দখলে নেয় ছাত্র-জনতা।
রিহান হোসেন বলেন, ‘৯ দফা দাবি আদায়ে শহরের আরাপপুর থেকে আমরা ৩ আগস্ট বিক্ষোভ শুরু করি।
পরে বিক্ষোভ নিয়ে আমরা শহরের পায়রা চত্বর অভিমুখে রওয়ানা হলে পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। আমাদের অনেক সহকর্মী ওইদিন আহত হন। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরব না।’