\ এ.এস.এম.নাসিম \
নোয়াখালী, ৩ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : ২০২৪ - এর গণঅভ্যুত্থানের এই দিন দুপুর থেকেই রাজপথ দখলে নেয় ছাত্র-জনতা। মাইজদী বাজার থেকে শুরু হওয়া বিশাল মিছিল শহর অভিমুখে আসতে থাকে। মিছিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিএনপি ও জামায়াতের সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা যোগ দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, নোয়াখালী জেলা শহরে এত বড় মিছিল অতীতে আর কেউ কখনো দেখেনি। এত বড় মিছিল হয়েছিল যে মিছিলের এক পাশ থেকে অন্য পাশের মানুষ দেখা যায়নি। যে মিছিলের শুরু ছিল কিন্তু শেষ ছিল না। পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষ সেদিন মিছিলে যোগ দিয়েছিল বলে স্থানীয়দের ধারণা।
সেদিনের সেই মিছিলটি দেখেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। তারা অনেক বাধা দিয়েও মিছিলে মানুষের স্রোত ঠেকাতে পারেনি। যদিও তারা সোনাপুর, পশ্চিম মাইজদী, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, মাইজদী বাজার, হরিনারায়ণপুরসহ বিভিন্ন মোড়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় ও ফাঁকা গুলি করে। কিন্তু ছাত্র জনতার তোপের মুখে তারা বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাত থেকে সেদিন সাংবাদিকেরাও রেহাই পায়নি। নোয়াখালীতে সেদিনের হামলার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে 'এখন টেলিভিশন' ও 'একুশে টেলিভিশন' এর দুইজন সাংবাদিক গুরুতর আহত হন।
আন্দোলনকারীরা মাঠে থাকলেও নোয়াখালীতে ৩ আগস্টের বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর নেতৃবৃন্দ। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরকে তার দুই দিন আগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় তারা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামে এবং সমর্থন যোগায়। তাদের প্রায় ২০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী সেদিন মিছিলে যোগ দেয়। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের সাহস কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
এদিন বিকেলেই ছাত্র-জনতা নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। মূলত নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সেদিনই নৈতিকভাবে পরাজয় বরণ করতে হয়। তাদের দলীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়া হলেও মাঠে এসে তা প্রতিহত করার মত সাহস তারা আর ফিরে পায়নি।
আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক নাহিদা সুলতানা ইতু চব্বিশের ৩ আগস্ট স্মরণে বলেন, ‘তখন আমরা খুবই ভীত ছিলাম। আমরা কি হেরে যাচ্ছি? যদি হেরে যাই তাহলে তো আমাদের সবই শেষ। তাই আর ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। নিজেদের সর্বশক্তি প্রমাণ করেই আমরা সেদিন টিকে ছিলাম। আমাদের মিছিলে সেদিন পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষ জড়ো হয়েছিল। আমাদের সেই মিছিলটি দেখেই স্বৈরাচারের ভিত কেঁপে উঠেছিল। আমরা ও মনে সাহস আর শক্তি পেলাম। ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামি সেদিন আমাদের যে সমর্থন দিয়েছিল সেটি কখনো ভুলবার মত নয়।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরশাসকের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে সেদিনের মিছিল থেকেই আমরা স্বৈরশাসকের মসনদকে ভেঙে চুরমার করার শপথ নেই। সেদিনের মিছিল থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমাদের সহযোদ্ধাদের উপর অতর্কিত হামলা করে লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। বাঙালি জাতির বুকে এমন দিন যেন আর ফিরে না আসে।’