কালাম আজাদ
বগুড়া, ৩ আগস্ট ২০২৫ (বাসস): চব্বিশের ৩ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে বিকেল ৩টার পর থেকে শিক্ষার্থীরা বগুড়ার সাতমাথায় জমায়েত হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এ সময় পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের বিপরীতে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছুড়ে প্রতিবাদ জানায়। বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে চলা সংঘর্ষে ছয় শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় আহত হন অর্ধশতাধিক ছাত্রজনতা।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেকে জানান, প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে। শহরের সাতমাথা, সার্কিট হাউস মোড়, রোমেনা আফাজ সড়ক, কালীবাড়ি মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকি সড়ক, জেলখানা মোড়সহ শহরের বিভিন্ন স্থান রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
একাধিক ছাত্র-জনতা দাবি করেন, হাসিনা সরকারের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা ও মুহুর্মুহু গুলি চালিয়েছে সেদিন। গুলি, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে অর্ধশত ছাত্র-জনতা আহত হন। গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীদের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের হত্যা, গণগ্রেপ্তার, নির্যাতনের প্রতিবাদে ও সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বেলা আড়াইটা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে হাজারো ছাত্রজনতা পুনরায় সাতমাথা এলাকায় অবস্থান নেন। তারা বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের মিছিল-স্লোগানে সাতমাথা এলাকা পুরোপুরি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল।
শহরের সবগুলো সড়কে মিছিলসহ ছাত্রজনতা অবস্থান নেন। সাতমাথার সমাবেশ থেকে ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’,‘দাবি এক, দফা এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। বেলা তিনটার দিকে সাতমাথা থেকে মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় জিলা স্কুলের ফটকের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেয়। দীর্ঘ মিছিলটি জিলা স্কুল অতিক্রম করার সময় পুলিশকে দেখে ছাত্র-জনতা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেয়। এসময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। ওই সময় মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল, বোতল ও জুতা নিক্ষেপ করা হয়। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জিলা স্কুলের ভেতরে অবস্থান নেয়। এ ঘটনার পর পুলিশ মারমুখী হয়।
মিছিলের একাংশ সার্কিট হাউস মোড় অতিক্রম করার সময় পুলিশ প্লাজার সামনে সাঁজোয়াযানে থাকা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও গুলি ছোড়ে। এসময় বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে সার্কিট হাউসের অভ্যর্থনাকক্ষের কাচ ভাঙচুর করে।
পরে জলেশ্বরীতলা, সাতমাথা, সার্কিট হাউস মোড়, জেলা জজ আদালতের সামনের সড়ক, কালীবাড়ি মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকি সড়কসহ গোটা শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে অনেক আন্দোলনকারী আহত হন।
পরে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ সাতমাথায় আওয়ামী লীগের নেতাদের ব্যানার ছিঁড়ে তাতে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া বিক্ষোভকারীরা সাতমাথায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে কাগজ ও পুরোনো কাপড় রেখে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এদিকে এই সংঘর্ষে ছাত্র-জনতাদের ছত্রভঙ্গ করতে মরিচের গুঁড়া ভর্তি ‘চিলি শেল’ ছোড়ার অভিযোগ উঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশের ছোড়া শেলে বিক্ষোভকারীদের পাশাপাশি পথচারী ও আশপাশের বাসিন্দাদেরও দীর্ঘক্ষণ চোখে যন্ত্রণা পোহাতে হয়।
জেলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া জেমি খান জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে কাঁদানে গ্যাসের শেলের আদলে তৈরি এক ধরনের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। মরিচের গুঁড়াভর্তি এই শেল নিক্ষেপের কারণে হাজারো ছাত্রজনতার চোখে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করেন।