আমার শহরে জুলাই অভ্যুত্থান

বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে উত্তাল সাতক্ষীরার রাজপথ 

বাসস
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৫৪
ছবি : বাসস

এ আসাদুজ্জামান

সাতক্ষীরা, ৩ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হত্যা, নিপীড়ন ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ৯ দফা দাবিতে উত্তাল ছিল সাতক্ষীরার রাজপথ। 

৩ আগস্ট ২০২৪। সকাল ১১ টা। শহরের খুলনা রোড মোড় এলাকায় জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের অভিভাবকসহ নানা বয়সী নারী পুরুষ, কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ জনতা ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা একাত্মতা ঘোষণা করে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেয়। 

শহরের খুলনা রোড মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের নারকেলতলা মোড় ও নিউমার্কেট মোড় হয়ে আবারো খুলনা রোড মোড়ে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেয়। এই সমাবেশে ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় নিহত সাতক্ষীরার দেবহাটার আস্কারপুর গ্রামের মেধাবী ছাত্র আসিফ হাসানের নামে সাতক্ষীরা শহরের খুলনা রোড মোড়কে শহীদ আসিফ চত্বর হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। আন্দোলনকারীরা সেখানে আসিফের নামে একটি ব্যানার টানিয়ে দেয়। আসিফ ঢাকার উত্তরার নর্দান ইউনিভাসির্টির ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিলেন।

বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরো দিবো রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘খুনি হাসিনার ঠাঁই, হবে না এই বাংলায়’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দিবো না’, ‘ছাত্ররা আমাদের ভাই, ভাই হত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি জ্বালাময়ী স্লোগানে হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবি জানায় আন্দোলনকারীরা।

এসময় সাতক্ষীরা শহর জুড়ে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। যদিও ওই দিনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি। 

জুলাই আন্দোলনের জেলা সংগঠক ও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের গণিত শেষ বর্ষের ছাত্র বখতিয়ার হোসেন বাসসকে বলেন, ‘গত বছর ১৭ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে সাতক্ষীরা শহরে আমরা বিক্ষোভ মিছিল বের করার পর রাতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শহরের  শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হোস্টেলে অভিযান চালায়। ১৭ ও ১৮ এই দুই দিনে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আল ইমরান ইমু ও ছাত্রদল নেতা অর্ঘ্য বিন জুয়েলসহ ৩৫ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। এরপর কয়েকদিন আন্দোলন বন্ধ রাখা হয়। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ৩ আগস্ট শনিবার সারাদেশে ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।’ 

তিনি বলেন, ২ আগস্ট আমরা কয়েকজন পরামর্শ করে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রত্যেকটা ইউনিটে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের সাথে যোগাযোগ করি।

প্রত্যেক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের সাথেও যোগাযোগ করে পরদিন ৩ আগস্ট খুলনা রোড মোড়ে সকাল ১১টায় বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেই। আমাদের ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০ টার পরপরই জেলার মুক্তিকামী ছাত্র জনতা খুলনা রোড মোড়ে আসতে শুরু করে। চারিদিকে তখন পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছিল। সকাল ১১ টার আগেই বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটে। এরপর শহরের খুলনা রোড মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের নারকেলতলা মোড় ও নিউমার্কেট মোড় হয়ে আবারো একই স্থানে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্দোলকারীদের জন্য  পানি ও খাবার দেয়া হয়। 

বখতিয়ার বলেন, ‘সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারসহ জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৩ আগস্টের মিছিলে এবং সমাবেশে কোনো বাধা দেয়নি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে তারা আমাদের সহযোগিতা করেছিলেন। সমাবেশে কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারী ঢুকে আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্রতিরোধের মুখে তাদের চেষ্টা সফল হয়নি।  

৫ আগস্ট মিছিলে গুলিবিদ্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক নাহিদ হাসান বাসসকে বলেন, স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে শুরু থেকে আমি ঢাকার রাজপথের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলাম। আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিশ্বদ্যিালয়ের হলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা স্ব স্ব এলাকায় গিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার নির্দেশ দেন। তারপরই আমি বাড়িতে ফিরে আসি এবং সাতক্ষীরা শহরের প্রতিটি আন্দোলনে অংশ নেই। 

নাহিদ বলেন, ৩ আগস্টের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আমিও যোগ দিয়েছিলাম। ওই আন্দোলনে সাতক্ষীরার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ ছাত্রদল, ছাত্র শিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ কৃষক শ্রমিক আম জনতা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণ করে। 

জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র মোহিনী তাবাসছুম বাসসকে বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুখানে নারীদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। সাতক্ষীরার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা এই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেয়।

জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আরাফাত হোসাইন বলেন, সাতক্ষীরায় ১৩ জুলাই থেকেই ছোট পরিসরে আন্দোলন শুরু করি। এরপর আস্তে আস্তে সেই আন্দোলন বিস্তার লাভ করে। যা ১৭ তারিখ পর্যন্ত একটানা চলতে থাকে। এরপর কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর ৩ আগস্ট থেকে আবারো জেলায় আন্দোলন শুরু হয়। 

তিনি আরো বলেন, ‘তৎকালীন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে ২ আগস্ট ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে শিশুসহ প্রায় দুই শতাধিক মানুষকে হত্যা করে। এরপর ওই দিনই অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। আমরা ওই দিন দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে মেসেজ দিয়ে ও কল করে শহরের খুলনা রোড মোড়ে ৩ আগস্ট বেলা ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই। ৩ আগস্ট সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা শহরের খুলনা রোড মোড় এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ নানা বয়সী নারী-পুরুষ, কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ জনতা ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। বিকেল ৩ টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে আমরা সবাই যার যার বাড়ি ফিরে যাই।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পলিথিন বিরোধী অভিযানে সাড়ে ৫ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ
সিলেটে ডাবল মার্ডার মামলায় দুই সহোদরের মৃত্যুদণ্ড, একজনের যাবজ্জীবন
সৌদি আরবে ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
বিমসটেকে নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বৃহত্তর অঞ্চলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে সহায়তা করবে : আইসিসিবি
৫ আগস্ট বন্ধ থাকবে ব্যাংক
গোমতীর পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্টের নির্দেশ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব শাকিল আখতার
জুলাই ঘোষণাপত্র মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ঘোষণা করা হবে
জিম্বাবুয়ে সফর থেকে ছিটকে গেলেন স্মিথ
জুলাই শহীদ ও আহত পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা প্রদান বিদ্যুৎ বিভাগের
১০