সরকার পতনের দাবিতে রাজশাহীতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন আন্দোলনকারীরা

বাসস
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৩৬
চব্বিশের ৪ আগস্ট রাজশাহীতে অসহযোগ আন্দোলন ও সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ। ছবি: বাসস

/ ওমর ফারুক /

রাজশাহী, ৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : চব্বিশের ৪ আগস্ট রেশম নগরী রাজশাহীতে অসহযোগ আন্দোলন ও সরকার পতনের এক দফা দাবিতে লাঠি হাতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারীরা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের দখলে ছিল রাজপথ। যদিও এ দিন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মাঠে ছিলেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

আন্দোলনকারীদের মোকাবেলা করতে তারা রাজশাহী মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রেলগেটে অবস্থান নেন। এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা শহরজুড়ে টহল দেন। পুরো রাজশাহী জুড়েই সেদিন ছিল থমথমে পরিস্থিতি।

আওয়ামী লীগের মহানগর দলীয় কার্যালয়ের সামনেও তাদের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছিলেন। সরাসরি মাঠে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের অভিযোগ ছিল, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে (নগর ভবন) সন্ত্রাসীদের রাখা হতো। 

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে মাঠে নেমেছিলেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির, জামায়াত ও ছাত্রদল মাঠে ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চব্বিশের ৪ আগস্ট সরকার পতনের এক দাবিতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) প্রধান ফটকের সামনে সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, রুয়েটের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ও নগরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, জামায়াত, বিএনপির নেতাকর্মীরাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। 

বলতে গেলে ৪ আগস্ট সর্বস্তরের মানুষ মাঠে নামেন। নারীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। বেলা ১১টা নাগাদ সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে আশপাশের এলাকা। পাশেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য অবস্থান করলেও তারা কর্মসূচিতে বাধা দেননি তবে তারা নজরদারি করছিলেন।

বিক্ষোভকারীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে ‘আমার ভাই মরলো কেন, শেখ হাসিনা জবাব দে’; ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কখন যাবি’; ‘আওয়ামী লীগের চামড়া, তুলে নেবো আমরা’; ‘হইহই রইরই, ছাত্রলীগ গেলি কই’; ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেবো রক্ত’; ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’; ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’সহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। আন্দোলনে আসা অনেকের হাতে লাঠি আর মাথায় পতাকা বাঁধা ছিল। ওই দিন কাফনের কাপড় পরে স্লোগান দিচ্ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার।

আন্দোলনকারীরা রুয়েট গেট থেকে বিক্ষোভ করতে করতে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদিক্ষণ করে ভদ্রা মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে আটকা থাকে শত শত যানবাহন। ভদ্রা মোড়েই কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে আন্দোলনকারীরা। অপরদিকে রেলগেটে দেশীয় অস্ত্রসহ অবস্থান নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের নিয়ে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মাঠে ছিলেন। কুমারপাড়ায় অবস্থি মহানগর আ’লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনেও চলে অস্ত্রের মহড়া। দুইপক্ষ কাছাকাছি অবস্থান করায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। 

কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বর্তমান উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘আজকের আন্দোলনে যারা সমবেত হয়েছেন তোমরা সবাই আমার সন্তান। তোমরা সবাই এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা। তোমাদের সাহস, ন্যায়বোধ আমাদের মুগ্ধ করে। তোমরা আজকে একটা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছো। এই বাংলাদেশে সুবিচার থাকবে, ন্যায় বিচার থাকবে, মানুষের অধিকার থাকবে। তোমরা সেই সুবিচারের পক্ষের শক্তি। 

দীর্ঘ সময় বিক্ষোভের পর দুপুর ২টা নাগাদ কর্মসূচি শেষ করে পরদিন আন্দোলনে যোগ দিতে আন্দোলনকারীরা আহ্বান জানান। 

৪ আগস্টের আন্দোলন নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক মিশকাত চৌধুরী মিশু বাসস’কে বলেন, সেদিনের আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। ছাত্রশিবির, ছাত্রদল ও জামায়াতের নেতাকর্মীরাও ছিলেন। আমরা অসহযোগ ও সরকার পতনের এক দফায় সবাইকে সংগঠিত করছিলাম। আমাদের পাশেই মোতায়েন থাকা পুলিশ সদস্যদেরও আমাদের সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহবান জানিয়েছিলাম।

আন্দোলনে সেদিন পুলিশ বাধা দেয়নি। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকার পতনের এক দফা ও অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ফেনীতে সেদিন নির্বিচারে গুলি করে হত্যাযজ্ঞ চালায় আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা
নাটকীয় জয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ড্র করল ভারত
দেশে প্রথমবার কক্সবাজার রেলস্টেশনে বসলো স্ক্যানার 
৪ আগস্ট ছাত্র জনতার দখলে ছিল সাতক্ষীরার রাজপথ
আগামীকাল জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা
‘জুলাই আন্দোলনে মোবাইল সাংবাদিকদের ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে’
ফিরে দেখা জুলাই: দ্রোহের মিছিলে সিলেটের গ্রামীণ জনপদ
জুলাই বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নওগাঁয় ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচি
‘জুলাই-গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে ডিএমপির নির্দেশনা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে ‘সুজন’ প্রণীত ‘জাতীয় সনদ’ হস্তান্তর
১০