ঢাকা, ৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : সংঘবদ্ধভাবে অনলাইন প্রতারণা, হুন্ডি কার্যক্রম ও অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি গতকাল নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করে। একই সঙ্গে মামলায় আরো ৭ থেকে ৮ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে। সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে আসে, একটি সুসংগঠিত প্রতারক চক্র প্রথমে টেলিগ্রাম অ্যাপে ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামে অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে টার্গেট করতো। ভিকটিমদের একটি সাজানো গ্রুপে যুক্ত করে প্রথমে স্বল্প পরিমাণ অর্থ দিয়ে বিশ্বাস অর্জন করা হতো। এরপর বড় প্রজেক্টের লোভ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতো চক্রটি।
এছাড়া, চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দরিদ্র ও নিরক্ষর জনগণকে সরকারি ভাতা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতো। এসব এনআইডি ব্যবহার করে ভুয়া ব্যাংক ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (বিকাশ, নগদ) অ্যাকাউন্ট খোলা হতো, যা পরবর্তীতে ব্যবহার করা হতো প্রতারণা, জুয়া ও হুন্ডির লেনদেনের কাজে।
চক্রটি অনলাইন প্রতারণার মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থের পাশাপাশি ও অসাধু ব্যবসায়ি ও ঘুষ, দুর্নীতির অর্থও হুন্ডি ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করত। এজন্য তারা একাধিক ভুয়া ও আত্মীয়-স্বজনের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লেনদেনের মাধ্যমে অর্থের উৎস গোপন করতো। একাধিক স্তরে এই অর্থ হাত বদলের মাধ্যমে পাঠানো হতো।
পরবর্তীতে চক্রটি ডিজিটাল হুন্ডি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে অর্থ বিদেশে স্থানান্তর করতো। তারা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ডলার বা ক্রিপ্টো মুদ্রা কিনে বিদেশি ঠিকানায় স্থানান্তর করতো।
ভুক্তভোগীদের থেকে পাওয়া তথ্য, তাদের ব্যাংক ও এমএফএস হিসাব বিশ্লেষণ করে প্রতারণার সত্যতা পাওয়ার পর তাদের নামে মামলা করা হয়। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন— চক্রের মূলহোতা আরিফুল ইসলাম রিফাত (২৩), রিফাতের মা লিলি আক্তার (৫৫), বোন রিমি আক্তার (৩৪) ও রুমি আক্তার (৩৬), রিফাতের দুলাভাই আব্দুল কাদির জিলানি (৪০), মো. ইমরান হোসেন (৩০), মো. নুরে আলম (৩৮), মুহা. নেয়ামতুল্লাহ (৩০) ও মো. রিয়াদ (২৫)।
সিআইডি জানায়, চক্রের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা মূলত একটি পরিবারের সদস্য। আরিফুল ইসলাম রিফাত এবং তার মা, দুই বোন ও এক দুলাভাই প্রতারণার মূল পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক লেনদেন পরিচালনায় জড়িত ছিলেন।
বর্তমানে মামলার তদন্ত পরিচালনা করছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। অপরাধে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের চিহ্নিতকরণ ও গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।