রাজশাহী, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আউশ ধান কাটা মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকদের এখন দম ফেলার সময় নেই। কাজ বেশি থাকায় আয়-রোজগারও ভালো হচ্ছে। তবে এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলেও তুলনামূলক ধানের ফলন কিছুটা কম হচ্ছে বলে মনে করছেন চাষিরা।
আবার ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা করছেন চাষীরা। দাম কম হলেও লোকশান হবে না এমন কথাই জানিয়েছেন কৃষকরা। ইতিমধ্যেই ৪ ভাগের ১ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী ৪৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে।
আউশ ধানের আবাদকে বলা হয় আপদকালীন ফসল। গত ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ও দাম ভাল পেয়ে কোমর বেঁধে আউশ চাষে মাঠে নেমেছিলেন চাষীরা।
মৌসুমের শুরু থেকেই পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ার কারণে এবার তেমন সমস্যার সম্মুখীন হননি কৃষকরা অতিরিক্ত বৃষ্টিতে কিছুটা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় কৃষকদের।
কৃষকরা জানান, শ্রমিকের মজুরি, জ্বালানি তেল, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে। এতে বিঘা প্রতি খরচ বেড়েছে অন্তত দেড় হাজার টাকা। জমি রোপণ থেকে শুরু করে ধান কৃষকের ঘরে উঠানো পর্যন্ত খরচ হয়েছে বিঘা প্রতি প্রায় ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ফলন হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ মণ। কোনো স্থানে আবার কমবেশিও হচ্ছে।
তানোরের কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, ধানের গাছ থেকে যে সময় শীষ বেরোনো শুরু করে ঠিক তখন প্রচুর বৃষ্টি হয়। এতে অনেক শীষ নষ্ট হয় এবং ধানে চিটার পরিমাণ বেশি হয়। আবার ধান পাকার আগ মুহুর্তে পোকার উপদ্রুব হয়। এ দুই কারণে ধানের ফলন কম হয়েছে। পারিজা জাতে ধান বিঘাতে ১২-১৪ মন এবং ব্রি-৪৯ ধান ১৫-১৮ মণ পর্যন্ত হয়েছে।
আবার বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮৫০-৯৫০ টাকা। ধানের দাম কম হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবে প্রতি মণ ধান ১২শ টাকা হলে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে কিছুটা লাভ থাকবে। কৃষক লিটন উদ্দিন বলেন, গত বছর ধানের ফলন ছিল বিঘাপ্রতি ১৮-২০ মণ। মৌসুমের শুরু থেকে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা মন বিক্রি হয়েছিল। তবে এ বছর বৈরি আবহাওয়ায় ফলন কম হওয়ার পাশাপাশি ধানের দামও কম। ধান চাষাবাদে যে খরচ পড়েছে সে টাকাই উঠছে না।
কৃষক ওবাইদুল ইসলাম বলেন, ৮ বিঘা জমিতে আউশ ধান রোপণ করা হয়েছে। কাটা মাড়াই করা হয়েছে। এরপর আমন ধান রোপণ করা হবে। তবে ফলন আশানুরুপ হচ্ছে না। এছাড়া কৃষি উপকরণ সার, কীটনাশক ও জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের কারণে ফসলে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। এসব উপকরণের দাম কমানো হলে কৃষকদের জন্য সুবিধা হবে এবং কিছুটা লাভবান হওয়া যাবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে ধান কাটতে আসা শ্রমিক সমশের আলী বলেন, ১০ জনের একটি দল গত ১৫ দিন থেকে বরেন্দ্র অঞ্চলের মহাদেবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটা হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে দুরত্ব ভেদে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা চুক্তিতে ধান কাটা হচ্ছে। আবার কোথায় মজুরি হিসেবে বিঘাতে ৩ মণ ধান নেয়া হচ্ছে। তবে ধানের ফলনে কৃষকরা খুশি নয় বলে জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ বছর এ অঞ্চলে ব্রি-৯৮ ও ব্রি-১৯ ধান এবং স্থানীয় জাত পারিজা চাষাবাদ বেশি হয়েছে। ব্রি-৯৮ ও ব্রি-১৯ ধান এসব ধানের ফলন তুলনামুলক ভাল হচ্ছে। তবে যেসব জমিতে পানির পরিমান একটু বেশি সেখানে ফলন কিছুটা কম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে সালমা বলেন, চলতি মৌসুমে বৃষ্টি পর্যাপ্ত হওয়ায় আউশ ধান চাষে কৃষকরা তেমন বেগ পাননি। ফলন খুব খারাপ হচ্ছে তা নয়। ধান কিছু পরিমাণ কাটা হয়েছে। এই মাসের মধ্যেই সব ধান কাটা হয়ে যাবে। দামও ভালো পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।