ঢাকা, ২২ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীর উত্তম এ কে খন্দকার প্যারেড গ্রাউন্ডে আজ মঙ্গলবার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
ফিউনারেল প্যারেডে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সেনাবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান ও নৌবাহিনী প্রধানের পক্ষে সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (পরিচালন) মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামের পরিবারের সদস্যগণ, সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং অন্যান্য পদবির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ফিউনারেল প্যারেড শেষে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামকে রাজশাহী জেলায় কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ১টি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধ বিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে সোমবার ঢাকার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীর উত্তম এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়। দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উক্ত বিমানের বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাবার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভবপর হয়ে উঠেনি এবং দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় আহত সকলকে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারসহ অ্যাম্বুলেন্স এর সহায়তায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং নিকটস্থ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানান্তর করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পর ওই বিমানের বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ২৭ বছর ৮ মাস ১৩ দিন। তিনি বাবা-মা ও স্ত্রী এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম, জিডি (পি) ১৯৯৭ সালের ৯ নভেম্বর রাজশাহী জেলার বোয়ালিয়া থানাধীন সপুরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মো. তহুরুল ইসলাম এবং মাতার নাম মোছা. সালেহা খাতুন। তিনি ২০১৪ সালে পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি, ২০১৬ সালে একই কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে বিএসসি (এ্যারোনটিক্স) ডিগ্রি অর্জন করেন।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন। তিনি চাকরিকালীন বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ফ্লাইং স্কোয়াড্রন যেমন- ১৫ স্কোয়াড্রন-এ স্কোয়াড্রন পাইলট এবং ৩৫ স্কোয়াড্রন-এ স্কোয়াড্রন পাইলট ও এ্যাডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার মোট কমিশন চাকরিকাল ৫ বছর ৭ মাস ২১ দিন।
চাকুরিকালীন এই কর্মকর্তা দেশে-বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে সফলতার সাথে তা সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ১১ স্কোয়াড্রন থেকে বেসিক ফ্লাইং ট্রেনিং, ১৫ স্কোয়াড্রন হতে বেসিক জেট এন্ড ফাইটার কনভার্সন কোর্স, অ্যারো মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ফিজিওলজিক্যাল ট্রেনিং অফিসার কোর্স ও ফিজিওলজিক্যাল ইনডকট্রিনেশন কোর্স, স্কুল অব সিকিউরিটি এন্ড ইন্টেলিজেন্স থেকে অফিসার্স বেসিক এয়ার ইন্টেলিজেন্স কোর্স, ৩৫ স্কোয়াড্রন থেকে অপস কনভার্সন কোর্স, বগুড়া রাডার ইউনিট থেকে ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার কোর্স, স্কুল অব ফিজিক্যাল ফিটনেস থেকে ওয়াটারম্যানশিপ কোর্স ও বিমান বাহিনী একাডেমি থেকে পটেনশিয়াল ফ্লাইট কমান্ডার কোর্স কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করেন। এছাড়াও তিনি ভারত থেকে অপারেশনাল ট্রেনিং ইন এ্যারোস্পেস মেডিসিন (ফাইটার) কোর্স সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন।