ঢাকা, ৭ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : শ্রীলংকার মাটিতে প্রথমবারের মত ওয়ানডে সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে লংকানদের মুখোমুখি হচ্ছে সফরকারী বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বিকাল ৩টায়।
শ্রীলংকার কাছে প্রথম ম্যাচে ৭৭ রানের হার দিয়ে সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। ঐ ম্যাচে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধসে ২৬ বলে ৫ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়েছিল টাইগাররা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় মিরাজ-মুস্তাফিজরা। ১৬ রানের দারুণ জয়ে সিরিজে ১-১ সমতা ফেরায় টাইগাররা।
দ্বিতীয় ম্যাচে জয় নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক মিরাজ বলেন, ‘আমরা সেদিন যেভাবে হেরেছি সেটি মেনে নিতে পারিনি। কিন্তু আমরা মনোবল হারাইনি। আমরা জানতাম, সিরিজে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘অবশ্যই চূড়ান্ত লক্ষ্য হল সিরিজ জয় এবং আমরা সেই লক্ষ্য পূরণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর মাত্র একবার তিন ম্যাচের সিরিজ জিতেছে টাইগাররা। সেটি ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে।
শ্রীলংকার মাটিতে কখনও ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ২০১৩ এবং ২০১৭ সালে দু’বার লংকানদের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করতে পারে টাইগাররা। ঐ দুই সিরিজের দু’টি ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৯ সালে শ্রীলংকার মাটিতে দ্বিপাক্ষীক সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। ঐ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল টাইগাররা।
এবার হোয়াইটওয়াশ নিয়ে চিন্তা নেই বাংলাদেশের। তবে ইতিহাস গড়ার সুযোগ রয়েছে টাইগারদের। শ্রীলংকার বিপক্ষে শেষ দুই সিরিজ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে বাংলাদেশ। ২০২১ এবং ২০২৪ সালে ঘরের মাঠে লংকানদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ঐ দুই সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল টাইগাররা।
সব মিলিয়ে ১০টি দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা। এরমধ্যে বাংলাদেশ ২টি এবং শ্রীলংকা ৬টি সিরিজ জিতে। দুই সিরিজ ড্র হয়।
এখন পর্যন্ত শ্রীলংকার বিপক্ষে ৫৯ ম্যাচ খেলে মাত্র ১৩টি জিতেছে বাংলাদেশ। ৪৪টিতে হার ও দু’টি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়।
পাল্লে¬কেলেতে শ্রীলংকার বিপক্ষে দুই ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে ১টি করে জয় ও হার আছে টাইগারদের। ২০১৩ সালের সিরিজের শেষ ম্যাচ বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটে জিতেছিল টাইগাররা। ঐ জয়ে সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করেছিল বাংলাদেশ। আর ২০২৩ সালে এশিয়া কাপের ম্যাচে ১৬৪ রানে অলআউট হয়ে ৫ উইকেটে হেরেছিল টাইগাররা।
পরিসংখ্যান পক্ষে না থাকলেও সিরিজ জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ অধিনায়ক মিরাজ। কারণ প্রথম ম্যাচে বাজেভাবে হারের পর, দ্বিতীয় ওয়ানডের জয় টাইগারদের বাড়তি আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে।
তৃতীয় ম্যাচের একাদশে ফিরতে পারেন আগের ম্যাচে বিশ্রামে থাকা পেসার তাসকিন আহমেদ। এজন্য বাদ পড়তে পারেন পেসার হাসান মাহমুদ।
দ্বিতীয় ম্যাচের শুরুতে নিজের সেরাটা দিতে না পারলেও, ডেথ ওভারে দারুণ বোলিং করেন মুস্তাফিজুর রহমান।
ডেথ ওভারে শ্রীলংকার সেট ব্যাটার জানিথ লিয়ানাগেকে শিকার করে বাংলাদেশকে জয়ের পথ দেখান ফিজ।
ব্যাট-বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন আরেক পেসার তানজিম হাসান সাকিব। আট নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে ২১ বলে ৩৩ রানের দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে ২৫০ রানের (২৪৮ রানে অলআউট) কাছাকাছি নিয়ে যান তিনি। পাশাপাশি বল হাতে ৩৪ রানে ২ উইকেট নেন তানজিম।
তানজিমকে নিয়ে মিরাজ বলেন, ‘শেষ দিকে তানজিমের ব্যাটিং অসাধারণ ছিল। তার রানগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২২০ এবং ২৫০ রানের পুঁজির মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাস দলের সবার মধ্যে ছিল।’
পেশীতে টান লাগায় নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে উদ্বেগ ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। কিন্তু জানা গেছে, শান্ত ফিট আছেন এবং দলের সাথে অনুশীলন করেছেন।
বাংলাদেশ দল : মেহেদি হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, মোহাম্মদ নাইম, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, লিটন দাস, জাকের আলী, শামীম পাটোয়ারি, রিশাদ হোসেন, তানভীর ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, তানজিম হাসান, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদ।
শ্রীলংকা দল : চারিথ আসালাঙ্কা (অধিনায়ক), পাথুম নিশাঙ্কা, আভিস্কা ফার্নান্দো, নিশান মাধুশকা, কুশল মেন্ডিস, সাদিরা সামারাবিক্রমা, কামিন্দু মেন্ডিস, জেনিথ লিয়ানাগে, দুনিথ ওয়েলালাগে, হাসারাঙ্গা ডি সিলভা, মহেশ থিকশানা, জেফরি ভান্ডারসে, মিলান রত্নায়েকে (ফিট থাকা সাপেক্ষে), দিলশান মাধুশঙ্কা, আসিথা ফার্নান্দো ও ইশান মালিঙ্গা।