ঢাকা, ১৭ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, দেশের স্বার্থে বিশেষ প্রয়োজন না হলে আগামী দিনগুলোতে সরকার কোনো কর অব্যাহতি না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসছি; আমরা বিদ্যমান কর অব্যাহতি বাতিল করেছি। আমরা অঙ্গীকার করেছি নতুন করে কোনো কর অব্যাহতি দেব না। কর অব্যাহতি না দেয়ার জন্য আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করেছি।’
আজ নগরীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে এনবিআর সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট সভায় বক্তৃতাকালে এনবিআর চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
ব্যাংক, বীমা, লিজিং এবং মার্চেন্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাদের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনের জন্য প্রাক-বাজেট সভায় যোগ দেন।
বিভিন্ন মহল থেকে বারবার কর অব্যাহতির প্রস্তাব আসার বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার আগে কর অব্যাহতি চাওয়ার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই।
তিনি বলেন, ‘প্রথম দাবি কর অব্যাহতি, কেন? আমাদের মানসিকতা থেকে এই মনোভাব দূর করতে হবে, অন্যথায় কিছুই হবে না। সর্বত্র একটিই দাবি- কর অব্যাহতি, আমরা আর এই কর অব্যাহতি সংস্কৃতি নিয়ে বাঁচতে চাই না।’
রাজস্ব বোর্ডের প্রধান স্পষ্ট করে বলেন, ‘অতীতে এই কর অব্যাহতি দিয়ে কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমরা যেখানেই এই কর অব্যাহতি দিয়েছি সেখানেই আমরা কোনও ইতিবাচক ফলাফল পাইনি।’
তিনি উল্লেখ করেন সরকার অতীতে কর অব্যাহতি সংস্কৃতি লালন করেছে এবং বর্তমানে এর জন্য দেশকে মাসুল দিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দেশে কর জিডিপি অনুপাত বাড়ছে না কারণ একটি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে যে কর ছাড়ের কারণে বাংলাদেশ রাজস্ব হিসাবে যে পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে তার সমান পরিমাণ অর্থ হারাচ্ছে। আমরা আর এই বদনাম বহন করতে চাই না।’
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মো. আবদুর রহমান খান বলেন, পুঁজিবাজারে মূল সমস্যা হল সুশাসনের অভাব। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশই উন্নত হতে পারে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন উপায়ে আমরা এই স্থানটিকে ধ্বংস করে দিয়েছি, তবুও শিল্পায়নের জন্য অর্থের উৎসের জন্য আমরা ব্যাংকিং খাতের ওপর নির্ভর করছি।’ এই প্রসঙ্গে তিনি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাবের জন্য নিয়ন্ত্রকদের দায়ী করেন।
রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা তাদের শিল্প স্থাপনের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতেন, কিন্তু তহবিল সংগ্রহের জন্য তারা পুঁজিবাজারে যেতে আগ্রহী নন। তারা কেন পুঁজিবাজারে আসছে না, আমি তা জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাত থেকে টাকা নেওয়া ঋণের মতো, অন্যদিকে পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করা ‘একেবারে বিনামূল্যের টাকা’।
রহমান বলেন, ‘যদি আপনি ব্যাংক থেকে টাকা নেন, তাহলে এক বছর পরেই আপনাকে পরিশোধ শুরু করতে হবে, কিন্তু শিল্প স্থাপন করতে আপনার পাঁচ বছর লাগবে, ব্রেক-ইভেন পয়েন্টে পৌঁছাতে আপনার ২০ বছর লাগবে। তাহলে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে আপনি কীভাবে আপনার ব্যবসা করবেন।’
তিনি বলেন, যদিও অনেকেই শিল্পায়নের জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজারে যাচ্ছেন, কিন্তু কিছু সময় পরে জানা গেল যে সেই টাকা দিয়ে কোনো শিল্প স্থাপন করা হচ্ছে না। এর অর্থ হল নিয়ন্ত্রকরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি; আমরা পুঁজিবাজারকে যতই কর সুবিধা দেই না কেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা এই পুঁজিবাজারে ফিরে না আসা পর্যন্ত এটি কোনও ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে না।