কেন্দ্রীয় বন্ড সুবিধা সৃষ্টি করে অটোমেশনের আওতায় আনতে কাজ করছি : এনবিআর চেয়ারম্যান

বাসস
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ২০:৪৯
ছবি : বাসস

চট্টগ্রাম, ১০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ব্যবসাবান্ধব করতে এনবিআরকে অটোমেশন করা হচ্ছে মন্তব্য করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, ভ্যাট এবং বন্ড সুবিধা নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় বন্ড সুবিধা সৃষ্টি করে তা অটোমেশনের আওতায় আনতে কাজ করছি।

তিনি বলেন, আয়করের মতো ভ্যাটও যেন ঘরে বসে দেয়া যায় সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। আগামী বাজেটে ভ্যাট হার যৌক্তিকীকরণ এবং ব্যবসায়ীদের ব্যবসার ট্যাক্স রেট কমানো, ট্যাক্সনেট বৃদ্ধি ও রিফান্ড ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কনফারেন্স হলে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর সদস্য ও অত্র অঞ্চলের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আয়োজিত প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

চিটাগং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উইমেন চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বার, রাঙামাটি ও কক্সবাজার চেম্বারসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি। এসময় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে ব্যবসা ও শিল্পবান্ধব করতে আয়কর বিষয়ক ১৯টি, ভ্যাট বিষয়ক ৪০ ও শুল্ক বিষয়ক ৫৫টি লিখিত প্রস্তাবনা তুলে দেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, মার্কিন শুল্ক আরোপের ফলে দেশের পোশাকখাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা যাতে এনবিআর অফিসে ঘুরতে না হয় সেজন্য সবকিছু অটোমেশন করা হচ্ছে। এখন সিঙ্গেল উইন্ডোর মাধ্যমে এক লাখ ৬০ হাজার সার্টিফিকেট অনলাইনে প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এবারের বাজেট হবে ব্যবসাবান্ধব বাজেট। বাজেটকে জনবান্ধব করতে ব্যবসায়ীসহ সকলের মতামত নেয়া হচ্ছে। যার প্রতিফলন পাওয়া যাবে বাজেটে। আগামী বাজেটে ঘাটতি থাকবে কিন্তু যাতে মূল্যস্ফীতি না হয় সেই দিকেও লক্ষ্য রাখা হবে। আর রাজস্ব আদায়ে যৌক্তিকভাবে বাড়ানো হবে করহারও।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, গত অর্থ বছরে ৪৫ লাখ করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করে। যার মধ্যে ৩০ লাখ করদাতা শূন্য রিটার্নধারী। বাকী ১৫ লাখ করদাতা থেকে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। এত কম সংখ্যক লোকের থেকে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়। এনবিআর জরিপ করে যারা রিটার্ন দিচ্ছে না তাদের নোটিশ দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের ব্যাংক হিসেব তলব করা হবে। বাংলাদেশের ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও খুবই কম। তাই করহার বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

স্বাগত বক্তব্যে চিটাগাং চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এর থ্রি জিরো থিওরি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হলে বাংলাদেশও সত্যিকারের একটি কল্যাণমূলক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারে, তবে নতুন সম্ভাবনার দ্বারও উন্মোচিত হবে। এজন্য আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে বিকল্প উপায় বের করতে হবে।

তিনি বলেন, আমদানি পর্যায়ে করহার পুনর্বিন্যাস, কিংবা দেশীয় শিল্প সুরক্ষার জন্য নানাবিধ প্রণোদনার বিকল্প উপায় বের করতে হবে। ট্যাক্স সিস্টেমের সময়োপযোগী সংস্কারের মাধ্যমে ট্যাক্স জিডিপি অনুপাতও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নীত করার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘শেয়ার বাজার ধ্বংস হয়ে গেছে। শেয়ারের উপর ৪০% এবং ডিভিডেন্ডের উপর ২৫% দিলে কী থাকে উদ্যোক্তাদের? মেশিনারিজের ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। রপ্তানি-আমদানি আরও সহজ করার লক্ষ্যে এটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।’

চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সভাপতি আবিদা সুলতানা বলেন, ‘বর্তমানে দেশের নারীরা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ব্যবসাক্ষেত্রে এগিয়ে আসছেন। বাজেটে তাদের দিকে বিশেষ নজর রাখা দরকার। ভ্যাট-ট্যাক্সের ক্ষেত্রেও তাদের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।’

অন্যান্য বক্তারা এইচএস কোড জটিলতা নিরসন, ছোটখাট ও অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটির কারণে ২০০-৪০০% কাস্টমস জরিমানা আরোপ না করা, আগাম করের ক্ষেত্রে দ্রুত রিফান্ড, অডিট সহজিকরণ, সর্বোচ্চ ভ্যাট হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসা, ভ্যাটের প্রথম আপিলের ক্ষেত্রেও দাবিকৃত করের উপর ২০% টাকা জমা দেয়ার নিয়ম প্রত্যাহার করা এবং দেশীয় উৎপাদনমুখী শিল্পকে সুরক্ষা ও প্রণোদনা, চট্টগ্রাম কাস্টমস এর জনবল ও ল্যাব এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি, ডাবল ট্যাক্সেশন কমানো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অডিটের আওতার বাইরে রাখা এবং সেন্ট্রাল বন্ড সিস্টেম চালু করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

আরও বক্তব্য দেন চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি সরওয়ার জামাল নিজাম, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এরশাদ উল্লাহ, সাবেক সহ-সভাপতি বেলাল আহমেদ, চেম্বার পরিচালক ও বিজিএমইএ এর ১ম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক পরিচালক হাসানুজ্জামান চৌধুরী (জোসেফ) ও আমজাদ হোসেন চৌধুরী, পান রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি মো. একরামুল করিম চৌধুরী, কক্সবাজার চেম্বার সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী (খোকা), রাঙ্গামাটি চেম্বার সভাপতি মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ মামুন, চট্টগ্রাম ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি মো. আবু তাহের, চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক মো. শওকত আলীসহ বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের প্রতিনিধিবৃন্দ।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পার্বত্য উপদেষ্টার সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ চার বিদেশি প্রতিনিধির সাক্ষাৎ 
অপেক্ষা বাড়ল বাংলাদেশের; বিশ্বকাপ নিশ্চিত পাকিস্তানের
ইতালি সফরে গেলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স
আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৬ নেতা গ্রেফতার
টানা দ্বিতীয় জয়ে সপ্তম স্থানে মুম্বাই
কুড়িগ্রামে চরাঞ্চলের নারী হস্তশিল্প প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে মতবিনিময়
আল্পস পর্বতমালায় বসন্তকালীন ঝড়ের তাণ্ডবে ১ জনের প্রাণহানি, নিখোঁজ ২
ঢাবিতে বিভিন্ন ভাষার এলিমেন্টারি সার্টিফিকেট কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ১০ জন হাসপাতালে ভর্তি  
ঘোড়াঘাটে জমি কেটে মাটি বিক্রি করায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে আবাদি জমি  
১০