চট্টগ্রাম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ২০২৯ সালের মধ্যে চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান বলেছেন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর হবে দেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জার। মাতারবাড়ি বন্দরকে রিজিওনাল ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসাবে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের আওতায় প্যাকেজ-১ এর অধীনে দুটি জেটি নির্মাণে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জাপানি প্রতিষ্ঠান পেন্টাওশান কনস্ট্রাকশন ও টোয়া করপোরেশনের সঙ্গে ২২ এপ্রিল চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে জাইকার সহযোগিতায় ২য় সংশোধিত ডিপিপি ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর একনেকে অনুমোদিত হয়। এটি দেশের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সি অডিটোরিয়ামে ১৩৮তম বন্দর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
তরুণ প্রজন্মের সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার সিঙ্গাপুরের মতো হবে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্ম বড় সম্ভাবনা। তাদের কর্মসংস্থান করতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার হবে সিঙ্গাপুর। বিনিয়োগকারী প্রস্তুত। নিরাপত্তা, আস্থা, সুন্দর পরিবেশ চায় তারা। মেরিটাইম ও পোর্ট সিকিউরিটি নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চায়।
তিনি বলেন, ‘দেশের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের কারণে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিশেষ করে বিজনেস সামিটের মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগ আসছে। এরজন্য বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’
চেয়ারম্যান বলেন, সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান ও সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধি দল মাতারবাড়ি-মহেশখালী এলাকা পরিদর্শন করে মেরিটাইম অবকাঠামো, নিরাপত্তা, পরিবেশ সংরক্ষণ, শিপইয়ার্ড নির্মাণসহ নানা খাতে বিনিয়োগ সম্ভাবনা যাচাই করেছে। এছাড়া, ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন’-এ মাতারবাড়ি ঘিরে ‘ফ্রি ট্রেড জোন’ গড়ে তোলার প্রস্তাব আলোচনায় আসে, যেখানে ডিপি ওয়ার্ল্ডের কারিগরি সহায়তায় আবুধাবীর জেবেল আলী বন্দর মডেলে নতুন অঞ্চল গড়ার চিন্তা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের গতি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। পাঁচ বছর পর ৫ মিলিয়ন টিইইউস কনটেইনারে হ্যান্ডলিং করতে হবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে টার্মিনাল ও বে টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি হয়েছে। ২০২৯ সালে মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর অপারেশনে চলে যাবে।
বন্দর ও কাস্টমসের সমন্বয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বন্দর ও কাস্টমসকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। এর সুফল দেখতে পাচ্ছেন। নিলামে গতি এসেছে। বন্দরে ইউএসএইডের অর্থায়নে রেফার কনটেইনার ইয়ার্ড ও কোল্ড স্টোরেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রেখে চলেছে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বন্দরের মাধ্যমে রফতানি, কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের মোট ৩৭১৯১.৩২ মিলিয়ন ডলারের রফতানি আয়ের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ হ্যান্ডলিং হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। একই সময়ে বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৫.০১ শতাংশ এবং জেনারেল কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৫.১৬ শতাংশ। এছাড়া ৯ মাসে ৩০৫৮টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে। একই সময়ে জেনারেল কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯ কোটি ৭১ লাখ ১৩ হাজার ১৬১ মেট্রিক টন। এছাড়া প্রথম ৯ মাসে মোট ৩০৫৮টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে। রাজস্ব আয়ের দিক থেকেও চট্টগ্রাম বন্দর রেখেছে চমকপ্রদ অগ্রগতি, যা আগের বছরের তুলনায় ১০.৫৬ শতাংশ বেশি।
চেয়ারম্যান জানান, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে দেশের মোট ৩৭১৯১.৩২ মিলিয়ন ডলারের রফতানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৬৩ শতাংশ বেশি। মার্চ মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ রফতানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে হ্যান্ডলিং হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, ‘বে-টার্মিনাল হলে টানেলের ব্যবহার বেড়ে যাবে। ৬৬৩ জনকে পদোন্নতি এবং ৩৬৩ জন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি বন্দর যাতে ব্যবহার বান্ধব হয়। ১৬ মিটার ড্রাফট মেইনটেইনের উপযোগী দুইটি ড্রেজার কিনবে বন্দর।’
এসময় চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, কাউসার রশিদ, ক্যাপ্টেন আমিন আব্দুল্লাহ ও বন্দর সচিব ওরম ফারুকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।