বাসস
  ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৪৯

বাংলাদেশ সিরিজের প্রস্তুতির জন্য বিপিএলকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছেন ক্যাম্ফার

আয়ারল্যান্ডের অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফার -ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম, ২১ জানুয়ারি ২০২৫ (বাসস) : আগামী গ্রীষ্মে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন দলের বিপক্ষে সিরিজের প্রস্তুতি হিসেবে চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে (বিপিএল) প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছেন আয়ারল্যান্ডের অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফার।

চলতি বিপিএলে রংপুর রাইডার্স দলে নাম লিখিয়েছেন ক্যাম্ফার। কিন্তু এখনও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। তবে এটি নিয়ে চিন্তিত নন ক্যাম্ফার। তিনি জানান ফ্র্যাঞ্চাইজির ডাগ আউটে বিশ্ব মানের যে পরিবেশ পাওয়া যায় সেটি ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করবে।

সম্প্রতি বাসসের সাথে আলাপকালে ক্যাম্ফার বলেন, ‘যখন ভালো দলে সুযোগ হয়, তখন এমনটা হতে পারে (একাদশে সুযোগ না পাওয়া)। যখন খেলোয়াড়রা ভালো খেলছে এবং দলের ভারসাম্য ঠিক আছে, তখন সুযোগ পাওয়া কঠিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আশা করি, আমি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবো। এখানে খেলার ভালো অভিজ্ঞতা আছে আমার। এখানকার পরিবেশ সত্যিই খুব ভালো যা আমি খুব উপভোগ করছি ও কঠোর পরিশ্রম করে নিজের খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। যাতে আমি গ্রীষ্মে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারি। জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশের বিপক্ষে আমাদের টেস্ট ম্যাচ আছে। আমি নিশ্চিত এটি আমাকে ভালোভাবে প্রস্তুত হবে সহায়তা করবে।’

এ বছরের ডিসেম্বরে পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজের জন্য বাংলাদেশ সফর করবে আয়ারল্যান্ড। ঐ সিরিজে দু’টি টেস্ট, তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে দু’দল।

ইতোমধ্যে আয়ারল্যান্ড দলে সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে নিজের জায়গা পোক্ত করেছেন ক্যাম্ফার। ঐ সফরে দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন বলে মনে করেন ক্যাম্ফার।

তবে বাংলাদেশের মত দলকে হারাতে নিজের সেরাটা দেওয়ার উপর জোর দিচ্ছেন ক্যাম্ফার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন খুব ভালো দল এবং তাদের ভালো সাফল্যও আছে। আমি মনে করি সত্যিই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলা হবে। বাংলাদেশ এখন শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলছে। বছরের শেষের দিকে এখানে আসবো এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে ভালো টেস্ট ম্যাচ হবে। তাদের বেশ কিছু ভালো মানের পেসার ও স্পিনার আছে যারা কিনা এই কন্ডিশনে বড় ভূমিকা রাখবে এবং তাদের বিপজ্জনক ব্যাটারও আছে। সিরিজটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। আমি মনে করি আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে, নয়তো সিরিজটি একপেশে হবে।’

বিপিএলের মান নিয়ে প্রশংসা করে ক্যাম্ফার জানান, ‘ঢাকার উইকেট টুর্নামেন্টের আলাদা ধরণ তৈরি করেছে। ঢাকার উইকেট শক্ত এবং ভাল বাউন্স করেছে এবং অনেক রানও হয়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রামেও একই উইকেট হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মতে, এটি একটি চমকপ্রদ ট্নর্ুামেন্ট। এখন আমার সামনে বড় সুযোগ আসছে, আশা করি পুরো টুর্নামেন্টেই আমি খেলতে পারবো। অনেক বিদেশি ক্রিকেটার এখানে এসেছে এবং এটি আরও ভাল হবে। কিছু বোলার এখন ৯০ মাইল গতিতে বোলিং করছে এবং বেশিরভাগ দলেই মানসম্পন্ন স্পিনার রয়েছে।’

ক্যাম্ফার আরও বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে বলবো, রংপুরের মত দুর্দান্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি দলে থাকতে পেরে খুব ভালো লাগছে। তারা নিয়মিত খোঁজখবর রাখে এবং এখন পর্যন্ত সবকিছু সুষ্ঠুভাবে চলছে এবং আমি এখানে যে সুবিধা পেয়েছি তাতে আমি খুব খুশি।’

১৯৯৯ সালে জোহানেসবার্গে জন্ম নেন ক্যাম্ফার। দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলেছেন তিনি। তবে তিনি জানতেন না অন্য কোথাও তার স্বপ্ন পূরণ হবে।

ক্যাম্ফার বলেন, ‘একটি ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলাম। ঐ ম্যাচে আমি যখন ব্যাট করছিলাম, তখন স্টাম্পের পেছনে থাকা নিল ও’ব্রায়নের সাথে কথা বলছিলাম। তখন সে আমাকে এখানে আসতে এবং ক্লাব ক্রিকেট খেলতে বলেছিলো। আমার কাছে যে আইরিশ পাসপোর্ট আছে সেটি চেয়েছিলেন তিনি।’
আয়ারল্যান্ড দলে জায়গা করে নেওয়ার পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামেন ক্যাম্ফার। ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম দুই ওয়ানডেতে হাফ-সেঞ্চুরি এবং উইকেট নেন তিনি। তিন ম্যাচে ১২৭ রান করেন এবং বল হাতে ২৮.৮০ গড়ে পাঁচ উইকেট শিকার করেন ক্যাম্ফার।

২০২১ সালে আবারও আলোচনায় উঠে আসেন ক্যাম্ফার। ঐ বছর আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকসহ চার  বলে ৪ উইকেট নেন তিনি। তার বোলিং নৈপুন্যে ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতেছিলো আইরিশরা।

অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ব্রেট লির পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসি ইভেন্টে হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়েছিলেন ক্যাম্ফার। ২০০৭ সালে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ব্রেট লি।

ক্যাম্ফার বলেন, ‘পরিবারের সদস্যরা আমার মনোবল বাড়িয়েছে এবং আয়ারল্যান্ড কমিউনিটি অত্যন্ত আনন্দের সাথে আমাকে স্বাগত জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আয়ারল্যান্ডে আমার পুরো সময়টা ভালো গিয়েছে এবং আমি অনেক নতুন বন্ধু পেয়েছি ও পুরনো বন্ধুদের খুঁজে পেয়েছি।’