বাসস
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২:৩৬

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন নেতানিয়াহু

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রোববার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তিনি হবেন প্রথম বিদেশি নেতা, যিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের পর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

জেরুজালেম থেকে এএফপি জানায়, নেতানিয়াহুর এ সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন গাজায় হামাসের সঙ্গে এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরাইলের একটি নাজুক যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। উভয় গোষ্ঠীই ইরানের সমর্থনপুষ্ট।

ফ্লাইটে ওঠার আগে নেতানিয়াহু বলেন, তারা আলোচনায় ‘হামাসের বিরুদ্ধে বিজয়, সকল জিম্মির মুক্তি এবং ইরানি সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ’ নিয়ে আলোচনা করবেন।

ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে বলেছিলেন, ইসরাইল ‘হোয়াইট হাউসে এর আগে কখনও এত ভালো বন্ধু পায়নি’, যা তার বর্তমান মনোভাবেও প্রতিফলিত হচ্ছে।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি প্রথম বিদেশি নেতা হিসেবে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করছি- এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। এটা ইসরাইল-আমেরিকার শক্তিশালী সম্পর্কের প্রমাণ।’

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইলে হামলার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন অব্যাহত রাখেন। তবে গাজায় ইসরাইলি অভিযানে ব্যাপক প্রাণহানির ফলে এবং মানবিক সহায়তার বিলম্ব নিয়ে তার প্রশাসন ক্রমেই দূরত্ব বাড়ায়।

পুনরায় দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প দ্রুত সম্পর্ক পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। তিনি বাইডেন প্রশাসনের স্থগিত ২,০০০ পাউন্ড ওজনের বোমার চালান অনুমোদন করেন এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ থাকা ইসরাইলি বসতিস্থাপনকারীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন।

গাজায় ১৫ মাসের যুদ্ধ শেষে গত মাসে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে ট্রাম্প সেখানে ‘পরিষ্কার অভিযান’ চালানোর পরিকল্পনার কথা বলেন। তিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতিবেশী দেশ মিসর ও জর্দানে স্থানান্তরের আহ্বান জানান।

ট্রাম্পের এ নীতিগুলো নেতানিয়াহুর জন্য মার্কিন সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে, কারণ তিনি দেশীয় ও আঞ্চলিক চাপ মোকাবিলা করছেন।

‘এলাকার স্থিতিশীলতা’ ও মার্কিন এজেন্ডা

তবে নেতানিয়াহু এমন এক প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি হচ্ছেন, যিনি নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

নিউইয়র্কভিত্তিক সোফান সেন্টার বলেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়েছেন যে ‘মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাত শুরু হলে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের প্রধান অগ্রাধিকারগুলো থেকে মনোযোগ হারাবে।’

সংস্থাটি জানায়, এই অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে ‘যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন ঠেকানো এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান’।

প্যারিসের জ্যাঁ জোরেস ফাউন্ডেশনের গবেষক ডেভিড খালফা বলেন, ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যকে স্থিতিশীল করার পর ‘ইসরাইল ও সৌদি আরবকে নিয়ে ইরানবিরোধী জোট গঠনের পরিকল্পনা করছেন’।

নেতানিয়াহুর সীমিত রাজনৈতিক বিকল্প

নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা।

গাজার যুদ্ধের শুরুতে রিয়াদ এই আলোচনা স্থগিত করে এবং ফিলিস্তিনি ইস্যুর সমাধান ছাড়া কোনো চুক্তিতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়।

খালফা বলেন, ‘বর্তমানে ট্রাম্পপন্থী আমেরিকান ডানপন্থীদের সঙ্গে নেতানিয়াহুর মতাদর্শগত মিল রয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের সামনে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক বিকল্প সীমিত, কারণ ট্রাম্প পুনর্র্নিবাচনের চাপের মধ্যে নেই।’

গাজা যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ

এই সপ্তাহে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে গাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

যদি সফল হয়, তাহলে চুক্তির আওতায় গাজায় আটক থাকা জীবিত ও মৃত জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধের সমাপ্তির সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।

নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, তিনি সোমবার ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।

কিন্তু তার জোটের কট্টর ডানপন্থী নেতারা যুদ্ধবিরতির পরপরই গাজায় হামলা পুনরায় শুরুর দাবি জানাচ্ছেন।

ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ হুঁশিয়ার করেছেন, যদি যুদ্ধ আবার শুরু না হয়, তবে তিনি সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন। এতে নেতানিয়াহুর সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে।

বিশ্লেষক সেলিন টুবুল বলেন, ‘যদি ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের জন্য কিছু ছাড় দিতে বলেন, যাতে ইসরাইল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়, তাহলে নেতানিয়াহুকে বেছে নিতে হবে- তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রাখবেন, নাকি তার জোট ধরে রাখবেন।’