ঢাকা, ১৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : কাশ্মীরে প্রাণঘাতী হামলার জেরে শুরু হওয়া চার দিনের সংঘর্ষের অবসানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর বুধবার পাকিস্তান এক ভারতীয় সীমান্তরক্ষীকে ফেরত দিয়েছে। দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যেও এটি মৃদু শান্তির ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নয়াদিল্লি থেকে এএফপি জানায়, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'পূর্নম কুমার শ, যিনি ২৩ এপ্রিল ২০২৫ থেকে পাকিস্তান রেঞ্জারদের হেফাজতে ছিলেন, তাকে ভারতের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হস্তান্তর 'শান্তিপূর্ণভাবে এবং নির্ধারিত প্রোটোকল মেনেই' সম্পন্ন হয়েছে।
এপ্রিলে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এরপর শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও যুদ্ধবিমান হামলা। কোনো গোষ্ঠী ওই হামলার দায় স্বীকার না করলেও ভারত এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং হামলার নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায়।
‘আমি সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম’
পূর্নম শ-র অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রজনী শ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে বলেন, 'আমি প্রায় সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু যুদ্ধবিরতির পর একটু সাহস পেয়েছি। ঈশ্বরে পূর্ণ বিশ্বাস আছে, আমার স্বামী নিরাপদে ফিরে আসবেন।
মঙ্গলবার পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানায়, ভারতীয় 'অযৌক্তিক ও নিন্দনীয় হামলায়' ৪০ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৭ নারী ও ১৫ শিশু রয়েছে। এ ছাড়া নিহত হয়েছেন ১১ সেনা সদস্য।
ভারত জানায়, তাদের ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক ও ৫ সেনা নিহত হয়েছেন।
যদিও উভয় দেশই সংঘর্ষের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে, বুধবার পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
১৯৯৯ সালের পর এই সংঘর্ষই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে যে, এটি হয়তো পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তবে তারা নিজে কোনো বিমান হারিয়েছে বলে স্বীকার করেনি। ভারতও কোনো বিমান হারানোর কথা জানায়নি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমবার এক ভাষণে বলেন, 'সন্ত্রাস মোকাবেলায় সহযোগিতার পরিবর্তে পাকিস্তান হামলার পথ বেছে নিয়েছে।' তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'ভারতের ওপর আরেকটি সন্ত্রাসী হামলা হলে কড়া জবাব দেওয়া হবে।'
মঙ্গলবার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া পোস্টে মোদি লিখেছেন, 'সাহস, দৃঢ়তা ও নির্ভীকতার প্রতীক আমাদের সেনাদের সঙ্গে থাকতে পারাটা ছিল বিশেষ অভিজ্ঞতা। দেশবাসী চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবে।'
এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মোদির বক্তব্যকে 'উসকানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর' হিসেবে অভিহিত করে এক বিবৃতিতে জানায়, 'আমরা ভারতের আচরণ ও বক্তব্যের ওপর নজর রাখব এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও একই অনুরোধ জানাই।'
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ভারতের বিজেপি সরকার কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে অঞ্চলটি সরাসরি দিল্লির অধীনে আনে। এরপর থেকেই অঞ্চলটিতে হামলা বেড়ে যায়। কাশ্মির মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা, যেটিকে উভয় দেশই নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে এবং এই অঞ্চল নিয়ে ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পর একাধিক যুদ্ধেও জড়িয়েছে।