ঢাকা, ১৮ মে, ২০২৫ (বাসস): ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, তার দেশ ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির অধীনে ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল (স্ন্যাপব্যাক) না করার বিষয়টি বিবেচনা করলে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সঙ্গে আস্থা পুনর্নির্মাণ করতে প্রস্তুত।
রোববার তিনি তেহরানে একটি কূটনৈতিক ফোরামে বলেন, যদি ইউরোপ আন্তরিকতা দেখায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে, তাহলে ইরান ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে প্রস্তুত।
তেহরান থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যদি ইউরোপের এই পথ (স্ন্যাপব্যাক) সংশোধন করার জন্য প্রয়োজনীয় ইচ্ছা থাকে, তাহলে পারস্পরিক আস্থা পুনর্নির্মাণ ও সম্পর্ক সম্প্রসারণে ইরান কোনও বাধা দেখছে না।
শুক্রবার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সমঝোতার অবস্থা নিয়ে আলোচনার জন্য ইরানের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকরা ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ওমানের মধ্যস্থতায় তেহরান ওয়াশিংটনের সঙ্গে চার দফা পরমাণু আলোচনা করেছে, যা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে দুই প্রতিদ্বন্ধীর মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ।
২০১৫ সালে ইরান বিশ্বের ছয়টি পরাশক্তির সঙ্গে তার পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আসতে সম্মত হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন এবং রাশিয়া, অর্থাৎ পি ফাইভ প্লাস ওয়ান নামে পরিচিত পরাশক্তিগুলো ছিল এই চুক্তির অংশীদার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে তার প্রথম মেয়াদে একতরফাভাবে ইরানের তেল রপ্তানি ও ব্যাংকিং খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চুক্তিটি কার্যকরভাবে লঙ্ঘন করেন।
এক বছর পর ইরান চুক্তির প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে শুরু করে। ওই চুক্তির আওতায় ইরান নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তির বদলে জাতিসংঘ তত্ত্বাবধানে পরমাণু কার্যক্রম সীমিত রাখতে রাজি হয়।
ইউরোপীয় দেশগুলো বর্তমানে চুক্তির ‘স্ন্যাপব্যাক’ (চুক্তির শর্ত ভঙ্গের ফলে পূর্বের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল) ব্যবস্থাটি সক্রিয় করার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এই ব্যবস্থা কার্যকরের সুযোগ আগামী অক্টোবরেই শেষ হয়ে যাবে।
এই মাসের শুরুতে আরাগচি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি যদি নিষেধাজ্ঞা পুর্নর্বহাল করতে এগিয়ে আসে, তবে ‘অপরিবর্তনীয়’ পরিণতি হবে।
তিনি আগের পরমাণু সমস্যা ও ‘পারস্পরিক স্বার্থ ও উদ্বেগের’ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে আলোচনার জন্য লন্ডন, প্যারিস ও বার্লিন সফরের প্রস্তাব করেন।
রোববার আরাগচি তার বক্তৃতায় ইউরোপীয়দের বিভেদের পরিবর্তে পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষার ওপর বেশি মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।